সকল মেনু

তৃতীয় শিরোপার সন্ধানে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কাতার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। এরপর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। আগামী ১৮ ডিসেম্বর ফিফা বিশ্বকাপের ২২তম আসরের ফাইনালে তৃতীয় শিরোপার সন্ধানে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স।

লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা এর আগে পাঁচবার বিশ্বকাপের ফাইনালে অংশ নিয়েছিল। যেখানে তারা দুইবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ১৯৩০ সালে ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ফাইনালে উঠলেও উরুগুয়ের কাছে হেরে রানার্সআপ হয় আলবিসেলেস্তেরা। এরপর ১৯৭৮ সালে ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। সেই আসরে নিজেদের প্রথম শিরোপা ঘরে তোলে স্বাগতিকরা। এর এক আসর পরেই ১৯৮৬ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার একক নৈপুণ্যে আবারো ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। সেবার সর্বশেষ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। ১৯৯০ সালে আবারো ফাইনালে খেললেও রানার্সআপ হয় তারা। কাতার বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির নেতৃত্বে ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। তবে সেই আসরেও জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে রানার্সআপ হয় তারা। ৩৬ বছর পেরিয়ে গেলেও শিরোপার স্বাদ পাওয়া হয়নি আকাশি-নীল শিবিরের। এবার আবারো লিওনেল মেসির নেতৃত্বেই ফাইনালে উঠেছে আলবিসেলেস্তেরা। তাদের লক্ষ্য এবার শিরোপা ঘরে তোলার।

অন্যদিকে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স ১৯৯৮ সালে সর্বপ্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে অংশ নেয়। সেই আসরে তারা কোচ দিদিয়ের দেশমের অধিনায়কত্বে প্রথমবার বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে। এরপর ২০০৬ সালের ফাইনালে ইতালির কাছে টাইব্রেকারে পরাজিত হয়। এরপর গত ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে পরাজিত করে শিরোপা জেতে ফরাসিরা। ইতালি ও ব্রাজিলের পর টানা দুইবার বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি কিলিয়ান এমবাপ্পেদের সামনে। গত বিশ্বকাপেই নকআউট রাউন্ডের শেষ ষোলোর ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার দেখা হয়েছে মোট তিনবার। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার দুই জয়ের বিপরীতে ফরাসিরা জিতেছে একবার। সেটাও গত রাশিয়া বিশ্বকাপের রাউন্ড অব সিক্সটিনের ম্যাচে।

বিশ্বকাপে দুদলের প্রথম দেখা হয় ১৯৩০ সালে বিশ্ব ফুটবলের প্রথম আসরে। আর দ্বিতীয় দেখা ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে। দুই আসরেই আলবিসেলেস্তেদের বিপক্ষে ধরাশায়ী হয়েছিল ফরাসিরা। সব মিলিয়ে দুদলের ১২ দেখায় আর্জেন্টিনা জিতেছে ৬ ম্যাচ। আর ফ্রান্স জিতেছে ৩ ম্যাচ। বাকি ৩ ম্যাচ ড্রয়ের খাতায় যোগ হয়েছে। ৩৬ বছরের শিরোপার আক্ষেপ ঘোচাতে কাতারে এসে প্রথমেই ধাক্কা খায় আলবিসেলেস্তেরা। প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের বিপক্ষে ১-২ ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর আর্জেন্টিনা এতদূর আসতে পারবে তা খুব বেশি লোক কল্পনাও করতে পারেনি। এ হারে আলবিসেলেস্তেদের জন্য প্রতিটি ম্যাচ হয়ে ওঠে নকআউট। যেখানে টানা পাঁচ জয়ে এখন ফাইনালের মঞ্চে লিওনেল স্কালোনির দল। অন্যদিকে চোটে জর্জরিত ফ্রান্সের শিরোপা ধরে রাখা নিয়েও সন্দেহ ছিল কারো কারো। তবে দুর্দান্ত খেলে টানা শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে তারা। গ্রুপ পর্বে তারা হেরেছিল ক্রোয়েশিয়ার কাছে। বিশ্বকাপে ৬টি দল টানা ফাইনাল খেললেও পরপর দুইবার জিততে পেরেছে কেবল ব্রাজিল ও ইতালি। ইতালি টানা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৩৪ সালের দ্বিতীয় ও ১৯৩৮ সালের তৃতীয় আসরে। আর ব্রাজিল ১৯৫৮ সালের পর শিরোপা জেতে ১৯৬২ সালে। তাই এবার ফ্রান্সর সামনেও সুযোগ রয়েছে ২০১৮ সালের পর ২০২২ এ শিরোপা জেতার।

সেমিফাইনালে ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত হয় ফ্রান্সের। পাঁচ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় তারা। এবারের বিশ্বকাপে এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত বিপক্ষের কোনো ফুটবলার মরক্কোর জালে বল জড়াতে পারেননি। পাঁচ মিনিটের মাথায় আঁতোয়া গ্রিজম্যানের উদ্দেশে দুর্দান্ত বল বাড়ান রাফায়েল ভারান। গ্রিজম্যান একটু সামনে এগিয়ে বল পাস বাড়ান সামনে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। এমবাপ্পে দুবার গোলের উদ্দেশে শট মারলেও তা আটকে যায়। শেষবার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে তা চলে যায় বাঁ দিকে থাকা থিয়ো হার্নান্দেজের দিকে। মরক্কোর ডিফেন্ডাররা ততক্ষণে একদিকে সরে এসেছেন। উল্টো দিকে থাকা থিয়ো কিছুটা লাফিয়ে বাঁ পায়ের সাইড ভলিতে বল জালে জড়ান। ১৯৫৮ সালের পর বিশ্বকাপের কোনো সেমিফাইনালে দ্রুততম গোল এটি। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আাগে গোল করেন কোলো মুয়ানি। ফলে ২-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে দেশমের শিষ্যরা। আর আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচে প্রথমদিকেই মেসির পেনাল্টি থেকে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এর পাঁচ মিনিট পরেই আলভারেজ করেন দারুণ এক গোল। আর দ্বিতীয়ার্ধে আবারো গোল করে ব্যবধান ৩-০ করেন সেই আলভারেজ। ফলে ৩-০ গোলের জয় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top