সকল মেনু

আশা নিরাশার দোলাচলে দেশের অর্থনীতি

forex-economy-bg20131005180141 শানজানা জামান, হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ। দীর্ঘদিন ধরেই এক অংকের ঘরে কলমানি মার্কেটের সুদের হার। মূল্য পরিস্থিতি, রাজস্ব আয়, রপ্তানি আয়, মুদ্রা সরবরাহ, অর্থ ও ঋণ পরিস্থিতি রয়েছে গতানুগতিক ধারায়। ব্যাংকে বাড়ছে অলস টাকার পরিমাণ। পতন থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর শঙ্কা। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের ব্যাষ্টিক (ম্যাক্রো) অর্থনীতির সূচকগুলো কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে। তবে ব্যাংকে বড় অংকের টাকা অলস পড়ে থাকা এবং বিনিয়োগ না বাড়ায় সামষ্টিক অর্থনীতি খুব একটা ভালো অবস্থ‍ানে নেই। এজন্য তারা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বিনিয়োগের অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে দায়ী করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকি বাংলানিউজকে বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বিনিয়োগ হচ্ছে না। গ্যাস, বিদ্যুৎসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে না। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগের আগ্রহ হারাচ্ছেন।
আর বিনিয়োগ না বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ বাড়ছে। একই কারণে কলমানি মার্কেটের সুদ হারও এক অংকের ঘরে রয়েছে। ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা অলস পড়ে রয়েছে। ব্যাষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোকে কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে মনে হলেও তা মূলত রয়েছে গতানুগতিক ধারায়। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সরকারের নির্ধারিত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না উল্লেখ করে বলেন, সরকার চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাত শতাংশ নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এডিবি বলছে প্রবৃদ্ধি পাঁচ দশমিক ৮৮ শতাংশের বেশি হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহীম খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, বিনিয়োগ না বাড়ায় সামষ্টিক অর্থনীতি কিছুটা খারাপ অবস্থানে রয়েছে। তবে ব্যাষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো রয়েছে বেশ ভালো অবস্থানে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যত বাড়ছে, অর্থনীতির গতি ততো বাড়বে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুবই আকর্ষণীয় পর্যায়ে রয়েছে। রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ: বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ২০১১-২০১২ অর্থবছরের ডিসেম্বর থেকেই প্রতি মাসে দেশে এক’শ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা ৩২৭ কোটি মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছে। এরমধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে এসেছে ১০২ কোটি মার্কিন ডলার। আর সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০১২-১৩) প্রবাসীরা বৈধভাবে দেশে পাঠিয়েছে এক হাজার ৪৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। যা ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ২৮৪ কোটি মার্কিন ডলার।

এদিকে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬১৫ কোটি মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ১১৪ কোটি মার্কিন ডলার।

আমদানি: পাওয়া তথ্যানুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে আমদানি ব্যয়ের কস্ট অ্যান্ড ফ্রেইট (সিঅ্যান্ডএফ) মূল্য আগের অর্থবছরের তুলনায় চার দশমিক ৩৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে তিন হাজার ৩৯৬ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা ২০১১-১২ অর্থবছরের পাঁচ দশমিক ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে তিন হাজার ৫৫১ কোটি মার্কিন ডলারে ছিল।

অপরদিকে ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে আমদানি ব্যয়ের ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) মূল্য দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়ে তিন হাজার ৩৫৭ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা ২০১১-১২ অর্থবছরে দুই দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে তিন হাজার ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার ছিল।

কলমানি: দীর্ঘদিন ধরেই স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে কলমানি মার্কেটের সুদের হার। সাধারণত উৎসবের সময় বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে কলমানি মার্কেটের সুদের হয়। তবে কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার পরও এবার বেশ স্থিতিশীল রয়েছে কলমানির সুদের হার। সর্বশেষ ৩ অক্টোবর আন্তঃব্যাংক কলমানি মার্কেটে গড় সুদের হার ছিল এক অংকের ঘরে। এদিন সর্বোচ্চ সাত দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন পাঁচ দশমিক ৮০ শতাংশ সুদে কলমানি মার্কেটে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে লেনদেন হয়। আর ব্যাংক থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে এদিন আট দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে আট দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়।

রপ্তানি: চলতি অর্থবছরে জুলাই-আগস্ট সময়ে রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে ৫০৩ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০১২-১৩) রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। অর্থবছরটিতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ৭০১ কোটি মার্কিন ডলার। পাওয়া তথ্যানুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫২ কোটি মার্কিন ডলারে।

রাজস্ব: সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাস শেষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করেছে ১৪ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। ২০১২- ১৩ অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আদায় করে এক লাখ আট হাজার ৬১৪ কোটি টাকা।

জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ: পাওয়া তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। যা ২০১২-১৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৪৬২ কোটি টাকা।

মুদ্রা সরবরাহ, অর্থ ও ঋণ পরিস্থিতি: পাওয়া তথ্যানুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ মুদ্রা, ব্যাপক অর্থ সরবরাহ, মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ পূর্ববর্তী অর্থ বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১৫ দশমিক ০১ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে সরকারি খাতে ঋণ সরবরাহ বেড়েছে ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণের সরবরাহ বেড়েছে ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ।

মূল্য পরিস্থিতি: সবশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী ২০১৩ সালের আগস্ট মাস শেষে ১২ মাসের গড় ভিত্তিক ও পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

পুঁজিবাজার: দেশের অর্থনীতির প্রায় সব সূচক ইতিবাচক থাকলেও তার কোনো প্রভাব পড়ছে না পুঁজিবাজারের উপর। ২০১০ সালের ধসের পর থেকেই মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ মাঝে মধ্যে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেলেও প্রায় তিন বছরেও স্থিতিশীল হয়নি বাজার। সবশেষ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ১১ কার্যদিবসেই মূল্য সূচকের পতন হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top