সকল মেনু

বসতবাড়ি হারাচ্ছে বহু পরিবার , তীব্র খাদ্য সঙ্কট , দুই মাস ধরে জোয়ারে ভাসছে সব

  নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ০১ অক্টোবর :  স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মন্টু সরদারের পাঁচ জনের সংসারে এখন উপোস কাপাস নিত্যদিনের। যে রামনাবাদ নদী তাদের বেচে থাকার ঘরবাড়ি, জমি-জিরেত থেকে বেড়িবাঁধ গিলে খেয়েছে ওই রাক্ষুসে রামনাবাদে মাছের দেখা মিললে তাদের খাবার জোটে, নইলে নয়। রাক্ষুসে রামনাবাদ নদীতে তাকালে এদের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, বুকে কষ্ট লাগে। কিন্তু এখন মুখের খাবার জোটাতে আশা নিয়েই তাকিয়ে থাকতে হয় রামনাবাদ নদীর দিকে। বিধ্বস্ত বাঁধ এলাকা থেকে অস্বাভাবিক জোয়ারের তান্ডব মন্টু সরদারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। মুরগির ডিমে তা দেয়ার মাটির হাজালটি এখন মন্টুদের রান্না করার চুলা। তাও চৌকির উপরে রেখে রান্না করতে হয়। জোয়ার হলেই উঠোন থেকে ঘরের পিড়া ডুবে যায়। আর অমাবস্যা-পুর্ণিমার সময় জলোচ্ছ্বাসে ঘরের মধেই হাটু সমান পানির প্রবেশ। মন্টুর ঘরে এক ছটাক খোরাকি চাল নেই। নদীতে মাছ পেলে খাবার জোটে নইলে নয়। ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পর্যন্ত নেই এদের। জুলাই মাসের ২২ তারিখে এই গ্রামের মানুষের কপাল পুড়েছে। জলোচ্ছ্বাসের তান্ডবে সব যেন লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।

নয়ন হাওলাদার ও পারভিন দম্পতির সংসারের সদস্য সংখ্যা চারজন। এই দম্পতির সংসারে খোরাকি চালের ভয়াবহ সঙ্কট চলছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের রামনাবাদ পাড়ের যেখানটায় দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্র বন্দর স্থাপনের প্রক্রিয়ার প্রাথমিক কার্যক্রম চলছে সেই রামনাবাদ পাড়ের চাড়িপাড়া গ্রামের অন্তত চার শ’ পরিবারের অন্তত এক হাজার মানুষের এমন বিধ্বস্ত দশা চলছে। বসতভিটা পর্যন্ত হারাতে হয়েছে অনেককে। একই দৃশ্য মঞ্জু সরদারের। তিনি জানালেন, যদি মাছ মেলে তো খাবার মেলে। মাহিনুর ও জুলফু হাওলাদার জানালেন, চারজনের সংসারে এখন দুরাবস্থার যেন শেষ নেই। রোজার সময় শুধু এক মুঠো কাচা চাল ও পানি খেয়ে তাদের রোজা রাখতে হয়েছে। কলার ভেলায় চলাচল করতে হয় তাদের। চৌকির উপরে খাওয়া, নামাজ ও থাকা চলছে। শাহভানু ও ভদ্দর হাওলাদার জানালেন, থাকার ঝুপড়ি বসতঘরটি ভেঙ্গে বেড়িবাঁধের স্লোপে আশ্রয় নিয়েছেন। এভাবে ২৫টি পরিবার বিধ্বস্ত বাঁধটির ভাল দিকটায়, উত্তর দিকে আশ্রয় নিয়েছে। যুবক হাবিবুর রহমান জানান, মা মোসাম্মৎ জহুরা বেগমকে নিয়ে এখন তাদের দুর্বির্ষহ অবস্থা চলছে। এক চিলতে কৃষি জমিও নেই এই পরিবারের। রেবেকা বেগম ও রফিক মিয়া দম্পতি জানালেন, বাড়িঘর হারিয়ে ফেলার অবস্থা হয়েছে তাদের। পারভিন জানালেন, তিনবেলা খাবার জোটাতে পারছে না গ্রামটির ৭০ ভাগ মানুষ। সরেজমিনে দেখা গেছে, চারিপাড়া গ্রামটির পুর্ব দিকে ভয়াল রামনাবাদ প্রায় চার শ’ মিটার বেড়িবাঁধ লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। সেখান দিয়ে প্রতিদিন অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাসছে বাড়িঘর থেকে জনপদ। মানুষের সবকিছু যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার তথ্যমতে শুধুমাত্র চারিপাড়া গ্রামের ৫২টি পরিবার তাদের বাড়িঘর ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছে। এখন তাদের শুধুমাত্র ভিটি পড়ে আছে। এদের মধ্যে ২৫টি পরিবার বাঁধের স্লোপে আশ্রয় নিয়েছে। এভাবে লালুয়ার রামনাবাদ পাড়ের চৌধুরিপাড়া, নয়াকাটা, পশুরবুনিয়া, নাওয়াপাড়া, মুন্সিপাড়া, ছোট পাঁচ নং, বড়পাঁচ নং, ধঞ্জুপাড়া, ১১ নং হাওলাসহ মোট ১১টি গ্রামের অন্তত চার হাজার পরিবারে এখন দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। আর এই দুর্ভোগ পরিণত হয়েছে দুর্যোগে। বিপদাপন্ন এসব কৃষক, জেলে ও শ্রমজীবি পরিবারের প্রয়োজন খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তার। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দাবি তাদের ভাঙ্গা বাঁধটি মেরামত করা হোক।

 

 

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top