সকল মেনু

‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি’

হটনিউজ ডেস্ক:

২৭ দিন আগে নিখোঁজ মায়ের লাশের সন্ধানে খুলনার চার বোন মরিয়ম মান্নান, কানিজ ফাতেমা, মাহফুজা আক্তার, আদুরী আক্তার ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় এসেছেন।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় লাশের বিবরণ, কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য বর্ণনা শুনে চার বোন ফুলপুর থানায় এসে হাজির হন। লাশের বিভিন্ন আলামত ও কাপড় দেখে মরিয়ম দাবি করেন, এটাই আমার মা, আমার মায়ের লাশ পেয়েছি। পরে মরিয়ম মান্নান ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন।

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, লাশটি মরিয়ম মান্নানের মায়ের কি না, সেটি ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যাবে না। লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে, যে কারণে নমুনা সংরক্ষণ করা আছে। মরিয়ম মান্নানের নমুনা সংগ্রহ করে দুজনের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি লাগবে।

গত ২৭ আগস্ট রাতে খুলনা শহরের মহেষ্যপাশা গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন তাদের মা রহিমা বেগম। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশী বিল্লাল হোসেন ও হেলালের সঙ্গে তাদের মামলা চলছিল। গত ১০ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ শনাক্তে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করছেন মেয়েরা। মরিয়মের দাবি এটা তার মায়েরই লাশ।

ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শুধু তাদের বর্ণনা দিয়ে লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।

ওসি আরও জানান, নিহতের মেয়ে মরিয়ম মান্নান গত রাতে তার কাছে লাশের বিবরণ, কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য বর্ণনা শুনে এটাই তার মায়ের লাশ বলে দাবি করে। গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বওলা ইউনিয়নের কুকাইল দারোগা বাড়ির কবরস্থানের পাশে ঝোপের ভেতর থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর বস্তাবন্দি লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীর পরোনে ছিল গোলাপি রঙের সালোয়ার। গায়ে ছিল সুতি ছাপা গোলাপি, কালো, বেগুনি ও কমলা মিশ্রণ রঙের কামিজ। গলায় গোলাপি রঙের ওড়না প্যাঁচানো ছিল। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে ময়মনসিংহ থেকে লাশটি নিয়ে ফুলপুর আঞ্জুমান কবরস্থানে দাফন করা হয়। তখন ওই নারীর বয়স আনুমানিক ২৮ বছর মনে করা হয়েছিল, কিন্তু মরিয়ম মান্নানের কথা অনুযায়ী তার মায়ের বয়স ৫২ বছর।

এ বিষয়ে মরিয়ম মান্নান বলেন, গত ২৭ আগস্ট রাতে বাসার নিচে টিউবয়েল থেকে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এ ব্যাপারে গত ২৭ আগস্ট খুলনার দৌলতপুর থানায় জিডি এবং ২৮ আগস্ট মামলা করা হয়। ২৯ আগস্ট র‌্যাব-৬’কে জানানো হয়। চার দিন পর ৩১ আগস্ট খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সন্তানরা। ১ সেপ্টেম্বর খুলনার ডিসি নর্থ মোল্লা জাহাঙ্গীকে অবহিত করা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঁইয়ার নিকট মায়ের খোঁজ পেতে সহোযোগিতা চেয়ে লিখিত আবদেন করে পরিবার। ৯ সেপ্টেম্বর খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে, ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানব বন্ধন করে পরিবারের সদস্যরা। একই সঙ্গে মরিময় মান্নান তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মায়ের সন্ধান চায়।

নিখোঁজের পর মরিয়ম মান্নান ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখোনে লিখেছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমার মায়ের জায়গা-জমি বিষয়ক মামলা হয়। মা বাদী হয়ে খুলনার দৌলতপুর থানায় মামলাটি করেন। মামলার কয়েক দিন পরে আমাদের বাড়িতে হামলা হয়। আমার ছোট বোন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে পড়ে, ও তখন বাড়িতে ছিল। হামলাকারীরা ভাঙচুর করলে আমার বোন ভিডিও ধারণ করতে গেলে ওকে এবং মাকে মারধর করে। মা পুনরায় এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আরেকটি মামলা করেন। এরপর থেকে আসামিরা বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছিল। আসামিরা এখন মামলার জামিনে, আর আমার মা নিখোঁজ। আমি আমার মাকে চাই, দয়া করে আমাকে সহোযোগিতা করুন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top