সকল মেনু

নির্যাতনকারি শিক্ষক ,উল্টো নির্যাতিতাকেই টিসি দিয়ে দিল

adside22 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর:  ঢাকার আলোচিত শিক্ষক পরিমল এর মত ছাত্রীর সাথে যৌন সম্পক গড়ার অভিযোগ উঠেছে চাঁদপুর হাইমচরের চরভাংঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি’র সিনিয়র শিক্ষক ইমাম হোসেন এর বিরুদ্ধে। প্রাইভেট ও কোচিং পড়ানোর সুযোগে প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রীদের সাথে যৌন সম্পর্ক তৈরির অভিযোগ করায় উল্টো ওই শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও এলাকার প্রভাবশালীরা শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ ন করার শর্তে অভিভবাকের মুচলেকা রেখে বিদ্যালয় থেকে মেধাবী ওই ছাত্রীকে টিসি বা ছাড়পত্র দিয়ে বহিস্কার করেছে। এ ব্যাপারে হাইমচর উপজেলা উচ্চ মাধ্যামিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মোহতাসিম বিল্লাল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটানাটি আমি আরও আগেই নির্যাতিত ছাত্রীর বোন এর কাছ থেকে শুনেছি। তারা নিরাপত্তা ও লোক লজ্জার ভয়ে লিখিত অভিযোগ ছাড়াই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। কিন্তু লিখিত অভিযোগ ছাড়া এ ধরনের ঘটনার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

ইমাম হোসেন চাঁদপুর হাইমচরের চরভাংঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের সহকারী শিক্ষক। তিনি স্কুলের ছাত্রাবাসে থাকেন এবং সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ান। প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগে বেশকিছু ছাত্রীর সাথে যৌন সম্পর্ক তৈরি করে । গোপন ভিডিও ক্যামেরায় এসব অশ্লীল দৃশ্যের ভিডিও চিত্র ধারণ করে তার ব্যক্তিগত কম্পিউটারে রেখে দেয় । জানা যায় ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহানাজ টেলু একটি তথ্য প্রিন্ট করার জন্য ইমাম হোসেনের কম্পিউটার ব্যবহার করতে গিয়ে লম্পট শিক্ষক ইমাম হোসেনের গোপন ভিডিও ক্যামেরায় ধারণকৃত অশ্লীল ভিডিও চিত্রগুলো দেখে ফেলে । পরে বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অবহিত করে। লম্পট শিক্ষক এসব শুনতে পেরে সবার হাতে- পায়ে ধরে বিষয়টির সমাধান করে । পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে কিছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উত্তেজিত হয়ে ওঠে । লম্পট শিক্ষকের বিচার ও শাস্তির দাবিতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদন নিয়ে যায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সেই আবেদন গ্রহন করেননি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরভাংঙ্গা স্কুলের দুই শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের জানায়, আমরা ইমাম স্যারের বিচার ও শাস্তির দাবিতে দরখাস্ত জমা দেয়ার পর থেকে স্কুলের তিন চার জন শিক্ষক বিনা কারণে আমাদেরকে বেত্রাঘাত করে । আমরা কখনও ইমাম স্যারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারিনি । তারা জানায়, শিক্ষকরা সব সময় তাদের চাপের মুখে রাখেন । যে কারণে তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেনি । সম্প্রতি ভিডিও ক্লিপস আকারে এলাকার যুবকদের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে লম্পট শিক্ষকের গোপন ভিডিও ক্যামেরায় ধারণকৃত ছাত্রীর সাথে অশ্লীল ভিডিও চিত্র । লম্পট শিক্ষক ইমাম হোসেনের যৌন নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (নাম প্রকাশ করা হলো না ) জানায় , আমার মেধাবী মেয়েকে শিক্ষক ইমাম জোর করে এ কাজ করাতে বাধ্য করেছে । এ ঘটনার পর শালিস বৈঠক এর মাধ্যমে কমিটি ও প্রভাবশালীরা আমার মেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে টিসি দিয়ে দেয়। আমি মেয়েকে এখন পাশ্ববর্তী এম জে এস হাই স্কুলে ভর্তি করেছি । তিনি বলেন, লম্পট শিক্ষক ইমাম অগনিত মেয়ের সবর্নাশ করেছে । ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা কেন করেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন , এই ইমাম হোসেন খুব প্রভাবশালী লোক । আমাদের মানসম্মানের কথা ভেবেই মামলা করিনি । তিনি বলেন আমার জীবনের সিকিউরিটি আপনারা দিতে পারলে আমি মামলা করব । কারণ আমি প্রতিমাসে ৪-৫দিন হাইমচর উপজেলা হেডকোয়াটারে যাতায়াত করি । আমি যদি ইমাম হোসেনের বিরদ্ধে মামলা করি তাহলে তার লোকজন আমাকে মেরে ফেলবে । আমরা এমনিতেই সংখ্যালঘু । তিনি আরও বলেন, টাকার জোরে লম্পট শিক্ষক সবাইকে হাত করে নিয়েছে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের পাশের অপর এক ব্যক্তি জানান, তার ২টি ভাগ্নি এ স্কুলে পড়ে । আমি তাদেরকে এ স্কুল থেকে নিয়ে যাব । লম্পট শিক্ষক তাদের যে ক্ষতি করবে না এমন গ্যারাণ্টি কেউ দিতে পারবে না । এ ব্যাপারে চরভাংঙ্গা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রনব কুমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং লম্পট শিক্ষক ইমাম হোসেনের গুণগান করে  জানান, চলতি বছরের ৩০ মার্চ করা ছাত্রীর বাবার লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই ছাত্রীকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হয়েছে। সালিশ বৈঠকে উপস্থিত এক যুবক ও ইমাম হোসেন বিএসসি’র এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্যার এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনায় ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয থেকে টিসি দিয়ে দেয়া হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করে জানান, তার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। ছবি বা ভিডিওর বিষয়ে তিনি খোঁজ-খবর নেবেন বলে জানান।

চরভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ইসমাইল হোসেনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এই রকম কোন ঘটনা এই স্কুলে ঘটেনি। পরবর্তীতে এক পর্যায়ে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন এবং বলেন ” আপনারা যা জানেন আমিও তাই জানি। আমি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। তবে এতটুকু বলতে পারি ঘটনাটি সত্য। এ ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞাসা না করে অন্যান্য শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করুন । এই ঘটনার উদ্ঘাটনকারী ওই স্কুলেরই অপর শিক্ষক শাহানাজ টেলুকে জিজ্ঞাসা করা হলে ঘটনাটি সত্য বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আমি ভিডিও ফুটেজগুলো দেখে সাথে সাথে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ঘটনাটি অবহিত করি এবং প্রধান শিক্ষক ঘটনাটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি আর কোন ব্যবস্থা নেয়নি । এ ব্যাপারে হাইমচর থানার ভারপ্রাাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মনিরজ্জামানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি । অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

এলাকাবাসীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জানায়, শিক্ষক ইমাম হোসেন এ পর্যন্ত ১০-১২ টি মেয়ের সর্বনাশ করেছে । তারপরও খুঁটির জোরের কারণে আজও তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শিক্ষক ইমাম হোসেন এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। তার বউ ছেলে-মেয়ে থাকা সত্ত্বেও সে কি করে এরকম নোংরামি করে ? ছাত্র-ছাত্রী,এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের অভিযোগ চাঁদপুরে আরেক পরিমলের জন্ম হয়েছে। আমরা চাই এ পরিমলের কঠিন শাস্তি হোক ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top