সকল মেনু

১০ বছর সংসার করে সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবী

হটনিউজ ডেস্ক:

বরিশাল নগরীতে বাসাভাড়া করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একসঙ্গে ১০ বছর সংসারের পরও স্বীকৃতি না পাওয়ায় মো. দেলোয়ার হোসেন নামে এক সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক তরুণী। মঙ্গলবার (১৪ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর বিবির পুকুরপাড় সংলগ্ন বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির (বিআরইউ) বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জননী সাহান আরা স্মৃতি মিলনায়তনে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের ঘেরাখালী গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি ভোলা সদর উপজেলায় সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

সংবাদ সম্মেলনে তরুণী জানান, ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময় ঝালকাঠি সমাজসেবা অফিসে ছয়মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হন তিনি। সেসময় তৎকালীন ঝালকাঠি সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তবে তরুণীর পরিবারের সদস্যরা তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেন। স্বামীর সংসারে থাকা অবস্থায় দেলোয়ার হোসেন প্রায়ই তার মোবাইলে কল করতেন। যোগাযোগ করতে বারণ করলেও দেলোয়ার তা শুনতেন না। বিষয়টি জানাজানি হলে তরুণীর সংসারে অশান্তি শুরু হয় এবং স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে। পরে তরুণীকে বিয়ে করে সংসার করার প্রস্তাব দেন দেলোয়ার। প্রস্তাবে রাজি হয়ে দেলোয়ারের কাছে চলে আসেন তরুণী। এসময় দেলোয়ার ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে কর্মরত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তরুণী আরও জানান, বরিশাল নগরীতে বাসাভাড়া নিয়ে স্ত্রী পরিচয়ে তরুণীর সঙ্গে থাকেন দেলোয়ার। প্রথমে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকা ভাড়া বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। পরে সিঅ্যান্ডবি রোড মীরা বাড়ির পুল সংলগ্ন এলাকার একটি বাসায় এবং এরপর একই এলাকায় আরেকটি বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বাস করেন। এখনো তরুণী ওই বাসায় ভাড়া থাকছেন। দেলোয়ার ভোলা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিশালে এসে তার সঙ্গে থাকতেন এবং রোববার সকালে চলে যেতেন। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনও সেখানে আসতেন। মাঝেমধ্যে দেলোয়ার তার গ্রামের বাড়িও যেতেন। তাদের ১০ বছর সংসার করার বিষয়টি জানেন ভাড়াবাসার আশপাশের অনেক বাসিন্দা। সংসার জীবনে তিনি দুবার অন্তঃসত্ত্বা হলেও দেলোয়ার তা নষ্ট করে ফেলেছেন।

তরুণী অভিযোগ করে বলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একসঙ্গে থাকলেও আমাদের বিয়ে হয়নি। বিয়ের প্রসঙ্গ টানলে দেলোয়ার এড়িয়ে যেতেন। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দেলোয়ারের কাছে সমাজ ও ধর্মীয় অনুযায়ী বৈধভাবে স্ত্রীর অধিকার চাইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ভাড়াবাসায়ও আর আসছে না। একাধিকবার ভোলায় গিয়ে দেলোয়ারকে ফিরিয়ে আনতে চাইলেও ব্যর্থ হই। বর্তমানে আমি অর্থের অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। উপায় না পেয়ে ১১ মে দেলোয়ারকে আসামি করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা করি।

তিনি আরও বলেন, তবে এর আগে বিষয়টি সমাধানের জন্য ২৩ মার্চ বরিশাল জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে একটি আবেদন করেছিলাম। পাশাপাশি ৩ এপ্রিল বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদনও করেছি। এছাড়া ভোলা জেলা সমাজসেবা কার্যালয় ও ঢাকা মহাপরিচালকের বরাবর আবেদন করি। কিন্তু কোনো সুফল পাইনি। ১০ বছর সংসার করেও আমাকে স্ত্রীর দাবিতে বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাকে ব্যক্তিগতভাবে জানি। তার সঙ্গে পরিচয় রয়েছে।

তবে একসঙ্গে থাকা এবং শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, তার ভাড়াবাসায় আমি মাঝে মধ্যে যেতাম। পরিচিত হলে একসঙ্গে ছবি থাকতেই পারে। কিন্তু সে যা বলছে তা সব সত্য নয়। আমাকে ফাঁদে ফেলতে মিথ্যা অভিযোগ করছে।

ভোলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এক তরুণীর অভিযোগ পেয়েছি এবং লোকমুখে ঘটনা শুনেছি। এমনকি অভিযোগকারী আমার সঙ্গে দেখা করে দেলোয়ার সম্পর্কে নানা কথা বলেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক স্বপন কুমার মুখার্জী বলেন, ওই তরুণীর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু মীমাংসার জন্য আবেদনকারীকে ডাকা হলে, তিনি আসেননি। এখন এ ঘটনায় তরুণী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এটি এখন আদালতের বিষয়। আমার হাতে কিছু করার নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top