সকল মেনু

চরম দুর্দিনে অসহায় বাবা, খাবার কিনতে ১০ বছরের শিশুকন্যাকে বিক্রি!

হটনিউজ ডেস্ক:

গত আগস্টে আফগানিস্তান ছেড়ে যায় মার্কিন বাহিনী। এরপর প্রাসাদ ছেড়ে পালান দেশটির পশ্চিমা মদদপুষ্ট প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। আর এরপরই দেশটির ক্ষমতা পুনরায় দখল করে তালেবান। তবে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান। কেননা, দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভ বাজেয়াপ্ত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দেশটি।

এদিকে, আফগানিস্তানে খাদ্যসংকট চরম আকার ধারণ তা আগেই জানিয়েছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এমন নজরি ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে দেশটিতে। পরিবারের খাবারের যোগান দিতে এক ব্যক্তি তার ১০ বছরের শিশুকন্যাকে বিক্রি করে দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের কুঁড়েঘরের বিস্তীর্ণ বসতিতে বাস্তুচ্যুত মানুষদের বসবাস। সেখানকার একজন নারী তার ১০ বছরের মেয়ে কান্দি গুল’কে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কেননা, ওই শিশুকন্যাকে বিক্রি করে দিয়েছেন তার স্বামী।
জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদের মুখে আহার তুলে দেওয়ার জন্য নিরুপায় ওই বাবা তার মেয়েকে এক হাজার ২৩৬ ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার টাকা) বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে এই বিক্রি বিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি হিসেবে নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আজিজ গুলের স্বামী হামিদ আবদুল্লাহর মতো আফগানিস্তানের অনেকেই অভাবের কারণে এ ধরনের হৃদয় বিদারক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন। মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্যদের বিশৃঙ্খল প্রত্যাহারের মধ্যে গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালেবান যখন ক্ষমতা দখল করে, তখনই সাহায্য-নির্ভর দেশটির অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে।

এদিকে ২০ বছর আগে তালেবানের শাসনামলে বর্বরতার অভিজ্ঞতা থেকে এবার তালেবান সরকারের সাথে কাজ করতে অনিচ্ছুক আন্তর্জাতিক মহল। সে কারণে আফগানিস্তানে বিদেশি সাহায্যও স্থগিত রয়েছে।

যদিও খুবই অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করা পুরো অঞ্চল জুড়ে একটি নিয়মিত অভ্যাস। সেখানে বরের পরিবার প্রায়শই দূরের আত্মীয়রা হয়ে থাকে। বিয়ের ব্যাপারে চুক্তি করার জন্য অর্থ প্রদান করে তারা। কন্যাশিশুটি সাধারণত তার বাবা-মায়ের সাথে থাকে তার বয়স কমপক্ষে ১৫ বা ১৬ বছর না হওয়া পর্যন্ত।

এমনকি মেয়ের বয়স ১৫ কিংবা ১৬ বছর হওয়া পর্যন্ত অনেক পরিবার অপেক্ষা করতে পারে না। কারণ, এতদিন পর্যন্ত মেয়েকে বাড়িতে রেখে খাওয়ানোর মতো সামর্থ্য তাদের নেই।

এ ধরনের পরিবার বরের পরিবারকে বলে, আপনারা আমাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে পারেন। এমনকি এ ধরনের পরিবার নিরুপায় হয়ে তাদের ছোট ছেলেদেরও বিক্রি করার চেষ্টা করছে।

পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজে মেয়েকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন গুল। তিনি বলেছেন, ১৫ বছরের আগে আমার মেয়েকে কেউ নিয়ে গেলে আত্মহত্যা করবো।

গুল আরও বলেন, দুই মাস আগে আমার মেয়েকে আমার স্বামী বিক্রি করেছে। ওই ঘটনার পর পরিবারের সদস্যরা খেতে পারছে। তবে মেয়েকে কোনওভাবেই এত অল্প বয়সে হারাতে চান না তিনি।

গুল বলেন, স্বামীর কাছে জিজ্ঞেস করেছি- খাবার কেনার টাকা সে কোথায় পেল। পরে জানতে পারি, সে আমার মেয়েকে বিক্রি করেছে বিয়ে দেওয়ার জন্য।

তিনি আরও বলেন, কথাটি শুনে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। আমার বারবার মনে হচ্ছিল, ওই সময় মরে গেলেই ভালো হতো। কিন্তু আল্লাহ হয়তো এখনই আমার মৃত্যু দিতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, স্বামীর কাছে জানতে চেয়েছি, কেন সে এমন করল। সে শুধু বলেছে- একজনকে হারিয়ে বাকিদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। আমি বলেছি, তুমি যা করেছ, তার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো ছিল। আমি এই খাবার খেয়ে বাঁচতে চাই না। সূত্র: দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top