সকল মেনু

মহাসড়কে থাকছে না বিঘ্ন সৃষ্টিকারী স্থাপনা, হাট-বাজার, অনুপযুক্ত যানবাহন

হটনিউজ ডেস্ক :

সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অনুমোদন ছাড়া মহাসড়কে যেকোনো ধরনের অবকাঠামো স্থাপনকে ‘অনুপ্রবেশ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ ও সড়কের জমি উদ্ধার করা হবে। একই সঙ্গে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী হাট-বাজার মহাসড়কের পাশে বসতে পারবে না। মহাসড়কে চলাচলে অনুপযুক্ত যানবাহন বন্ধ করা হবে। মহাসড়কে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, তোরণ নির্মাণে পেতে হবে শাস্তি।

এই বিধানগুলো রেখে নতুন মহাসড়ক আইন পাসের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংসদের চলতি অধিবেশনে এসংক্রান্ত ‘মহাসড়ক আইন-২০২১’ বিলটি উত্থাপন করা হবে। বিলের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, “একটি আধুনিক, উন্নত, কার্যকর মহাসড়ক পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিরাপদ ও গতিশীল যানবাহন চলাচল, মহাসড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুগোপযোগী মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি গড়ে তুলতে নতুন আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।”

সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিলটি গত ১৯ আগস্ট সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখায় জমা হয়েছে। সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হবে। এরপর বিলটি পাস হবে। বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর তা কার্যকর করবে সরকার।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ওই বিভাগের অধীনে প্রায় ২২ হাজার ৩৬১ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৯৪৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, চার হাজার ৮৮২ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৩৬ কিলোমিটার জেলা মহাসড়ক। এসব সড়ক ও মহাসড়কের পাশে অন্তত ১৬ হাজার ৫০৫টি অবৈধ স্থাপনা আছে। অবৈধ দখলে রয়েছে সওজের এক লাখ ৪৮ হাজার ১৮১ দশমিক ৬৮ একর জমি। ধীরে ধীরে এগুলো উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। কাজটি দ্রুত করতে নতুন আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে।

প্রস্তাবিত আইনের ৯ ধারায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমোদন ছাড়া মহাসড়কে যেকোনো ধরনের অবকাঠামো স্থাপনকে ‘অনুপ্রবেশ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অপরাধের জন্য বিলের ১৪ ধারায় সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনে ক্ষতিকারক উপাদান ছড়ায়, এমন মোটরগাড়ি মহাসড়কে চলানোর অপরাধে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। মহাসড়কে ফসল, খড় বা ওই ধরনের উপকরণ শুকাতে রাখা হলে বা অনির্ধারিত জায়গা দিয়ে চলাচলের অপরাধে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। মহাসড়কে ঝুলন্ত বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড ও তোরণ নির্মাণ বন্ধের বিধান অমান্য করলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

ওই বিলে বলা হয়েছে, সরকারি বা বেসরকারি ইউটিলিটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও অনুমতি ছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে পারবে না। করলে তাদেরও শাস্তি পেতে হবে। ‘মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯’ অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট এসব শাস্তি দেবেন। প্রতিবন্ধী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের চলাচলে মহাসড়কে নির্দিষ্ট স্থান রাখার কথাও বলা হয়েছে বিলে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি একাব্বর হোসেন বলেন, ‘নতুন মহাসড়ক আইনে মহাসড়ক সম্পর্কিত নতুন বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আইনের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকার যেকোনো সড়ককে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে মহাসড়ক, নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ে ঘোষণা করতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে একই সঙ্গে দ্রুত ও ধীরগতির যানবাহন চলাচল করছে। নিষেধাজ্ঞার পরও হাইওয়েতে মোটরবিহীন যান চলাচল বন্ধ করা যায়নি। মহাসড়কের পাশে অপরিকল্পিত স্থাপনা ও হাট-বাজারের কারণে স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে নতুন আইনটি বিল আকারে পাসের পর দেশের মহাসড়কগুলোয় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’

প্রস্তাবিত আইনটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। তিনি বলেন, ‘দেশে মহাসড়কের সংখ্যা ও ব্যবহার বেড়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে ও নিয়ন্ত্রিত হাইওয়ে তৈরি হচ্ছে। ফলে আইনটি পাস হওয়া জরুরি। তবে দেশে অনেক আইন থাকলেও প্রয়োগ হয় না। নতুন এই আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top