সকল মেনু

নওগাঁয় ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি তিন থাপ্পড়, জরিমানার টাকাও মাতব্বরের পকেটে

হটনিউজ ডেস্ক:

থানায় অভিযোগ করলে গ্রামে থাকতে দেবে না এমন শঙ্কায় মেয়ের শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে গ্রামের মাতব্বরের কাছে যান মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের এক কৃষক। এরপর সালিশ বৈঠক ডেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি হিসেবে তিন থাপ্পড় ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাঁর স্বজনেরা গ্রামের প্রভাবশালী হওয়ায় এমন বিচার মেনে নিতে হয়েছে তাঁদের। গত রোববার রাতে গ্রাম্য ওই সালিশ বৈঠক হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম খোদাবক্স মন্ডল (৪৫)। সালিস বৈঠকে বিচারের কাজ করেন তাঁর চাচাতো ভাই সেকেন্দার আলীসহ গ্রামের মাতব্বর আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল।

এ বিষয়ে কথা হয় ছাত্রীর বড় ভাই ও ভাবির সঙ্গে। তাঁরা বলেন, সালিশ বৈঠকে শ্লীলতাহানির সত্যতা পাওয়ার পরও দোষী ব্যক্তিকে উপযুক্ত সাজা দেওয়া হয়নি। বিচারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে জোর করে সাদা স্টাম্পে ছাত্রী ও বাবার স্বাক্ষর করে নেওয়া হয়েছে। বিচার সুষ্ঠ না হলেও মাতব্বরদের সিদ্ধান্তই মানতে হবে। এর বাইরে গেলে গ্রামেই থাকা যাবে না হয়তো।

ভুক্তভোগী মেয়ে একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার স্বজনেরা জানান, গত ১০ জুন বিকেলে কিশোরী বাড়িতে নিজের কক্ষে একাই ছিল। প্রতিবেশী খোদাবক্স তখন ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। কিশোরীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে খোদাবক্স পালিয়ে যান। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা গ্রামের মাতব্বরের কাছে বিচার দাবি করেন।

মাতব্বরেরা বিষয়টি নিয়ে গত রোববার রাতে সালিশ-বৈঠকে বসেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়েটির বাবাকে অভিযুক্ত খোদাবক্সকে তিনটি থাপ্পড় মারতে বলা হয়। এ ছাড়া খোদাবক্সকে জরিমানা করা হয় ২০ হাজার টাকা।

স্কুলছাত্রীর বড় ভাই অভিযোগ করেন, খোদাবক্সের বিরুদ্ধে এর আগেও এক নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু গ্রামের মধ্যে তিনি ও তাঁর স্বজনেরা প্রভাবশালী। তাঁর চাচাতো ভাই সেকেন্দার গ্রামের প্রধান মাতব্বর। সেকেন্দারের প্রভাব খাটিয়ে গ্রামের মাতব্বরদের দিয়ে এমন লঘু শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। জরিমানার টাকাও সেকেন্দার নিজে রেখে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সেকেন্দার আলী বলেন, বৈঠকে মাতব্বরেরা সবাই সিদ্ধান্ত নেন জরিমানার ২০ হাজার টাকা তাঁর (সেকেন্দার) কাছে রাখা হবে এবং মেয়েটির যখন বিয়ে হবে, তখন এই টাকা খরচ করা হবে। কারণ, মেয়েটির বাবা খুব গরিব। এই টাকা তাঁদের হাতে দিলে তা খরচ হয়ে যাবে।

শ্লীলতাহানির সালিশ বৈঠকে বিচারের বিষয়ে মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, তিনি এ ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না। থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বুধবার দিবাগত রাতে এ রকম একটি ঘটনা শুনেছি। তবে বিস্তারিত জানি না। সরেজমিন পরিদর্শন করে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top