সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় চাচা বনাম ভাতিজার দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। চাচা ও ভাতিজার চলমান ৮ মাসের এই দ্বন্দে মামলা হামলা ভাংচুর ও লুটপাট ও অনেকের আহত হবার ঘটনা ঘটেছে। চাচা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের যদুনন্দী গ্রামের মৃত আঃ লতিফ মোল্যার পুত্র ফরিদপুর জেলা পরিষদের সদস্য, যদুনন্দী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আঃ রব মোল্যা এবং আঃ রব মোল্যার আপন ভাই আঃ হক মোল্যার ছেলে কাইয়ুম মোল্যা। কাইয়ুম নিজেকে একজন আওয়ামীলীগ কর্মী বললেও দলে তার কোন পদ পদবী নেই। পরিবার কেন্দ্রিক শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব পরবর্তিতে রুপ নেয় দলিয়ভাবে যা সাধারণ মানুষের ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায়।
জানা যায়, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার আড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা মরহুম আঃ লতিফ মোল্যা সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের যদুনন্দী এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করতে শুরু করে। শ্বশুরের অনেক অর্থ সম্পত্তি থাকায় তাদের কোন সমস্যা হয় না। আঃ লতিফ মোল্যার ঘরে ৩ ছেলে জন্ম নেয় বড় ছেলে রুঙ্গু মোলা দাদার এলাকা কাশিয়ানীতে চলে যায় এবং আপর দুই ছেলে আঃ রব মোল্যা ও আঃ হক মোল্যা সালথার যদুনন্দীতেই রয়ে যায়। আঃ হক মোল্যার শ্বশুর বাড়ির লোক যদুনন্দী বাজারে আধা শতাংশ জমি ক্রয় করে, এই জমি মাপামাপি নিয়ে রব মোল্যা ও হক মোল্যার মাঝে প্রথম বাক বিতন্ডা হয়। এরপরই থেকেই দুই ভাইয়ের মাঝে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব পরবর্তীতে চাচা আঃ রব মোল্যা বনাম ভাতিজা আঃ কাইয়ুম মোল্যার মাঝে বিদ্যমান থাকে যা চাচা ভাতিজার দ্বন্দ্ব নামে এলাকায় পরিচিত।
চাচা ভাতিজার দ্বন্দ্ব পরবর্তিতে দুই দলের মধ্যে ছড়িয়ে পরে যা বিগত ৮ মাস যাবত চলে আসছে, এই দ্বন্দ্ব থেকে বিভিন্ন সময়ে, হুমকি, হামলা, গুপ্ত হামলা, সংঘর্ষ, মামলা চলছে অবিরত। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই দ্বন্দ বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১৫টির অধিক সংঘর্ষ বাধে, সংঘর্ষে উভয় দলে প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়, প্রায় ১০ টির মত বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়, কয়েকটি দোকানঘর ভাংচুর হয়, একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল চেয়ার টেবিল ভাংচুর করা হয়। চলমান এই কর্মকান্ডে থানা, উপজেলা, এসপি অফিসে প্রায় ২০টির মত অভিযোগ বা জিডি হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কিছু মামলা রুজু হয়েছে, মাসে প্রায় প্রতি সপ্তাহে হাজিরা দিতে বিজ্ঞ আদালতে যায় এই হতভাগা মানুষগুলো। এই দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ ও মামলা হামলা নিয়ে হতাশা ও অশান্তিতে ভুগছে যদুনন্দী ইউনিয়নের চার গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় বেশ কয়েজেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যদুনন্দী ইউনিয়নের যদুনন্দী, কুমারকান্দা, গোপিনাথপুর, জগন্নাথদি এই চার গ্রাম নিয়ে একটি স্থানীয় রাজনৈতিক ময়াল বা এলাকা গঠিত। আঃ রব মোল্যা আওয়ামীলীগ কর্মী হলেও কাইয়ুম মোল্যা বর্তমানে বিএনপি ও স্থানীয় কিছু আওয়ামীলীগ নিয়ে দল গঠন করে এলাকায় রাজনীতি করছেন। এলাকায় এককভাবে প্রভাব ও পতিপত্তি ছিল আঃ রব মোল্যার নিজের খেয়াল খুশি মত যা খুশি করতেন, ভাতিজা কাইয়ুম মোল্যাচেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবে এই খবরের পর থেকে নিজেদের মধ্যে দুরত্ব বাড়ে, এরপর থেকেই দল ভারি করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে চাচা ভাতিজা, নিজের দলে ভেড়াতে হুমকি ধামকি হামলা মামলার ঘটনাও ঘটে। কেউ এই চাচা ভাতিজার বিপক্ষে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চায় না। দুজন দুদলের হলেও আচরণে দুজন প্রায় একই রকম বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।
আরও জানা যায়, বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত ইউনিয়নের যদুনন্দীর চেয়ারমান আবুল খায়ের মুন্সি কাউয়ুম মোল্যার আত্বীয় হওয়ায় রব মোল্যা কোনঠাসা, আবার রব মোল্যা জেলা পরিষদের সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ায় কাউয়ুম মোল্যা কোনঠাসা। চাচা ভাতিজার এই ঠাসা ঠাসিতে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। স্থানীয় অনেকেই চান না যে চাচা ভাতিজা কেউ রাজনীতি করুক। তারা স্থানীয়ভাবে নতুন কাউকে চায়। অনেকেই আবার স্থানীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থেকে চলতে চায়। তবে কোন উপায় না পেয়ে তাদের কোন না কোন দলে যেতেই হবে। তবে সবাই এলাকায় সুখ শান্তি নিয়ে বসবাস করতে চায়। অনেকেই মনে করেন চাচা ও ভাতিজা যদি রাজনৈতিক গোড়ামী বন্ধ করে তাহলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
এই বিষয়ে কাইয়ুম মোল্যা বলেন, আঃ রব মোল্যা একজন দূর্ধর্ষ সন্ত্রসী এবং সন্ত্রসীদের গডফাদার। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য পদ ব্যাবহার করে এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। এলাকার জুয়ারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তার সখ্যতা। তিনি আরও বলেন, এ অন্যায় ও অনিয়মের গোলামী করে যারা রাজনীতি করে তাদের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ডিজিটালাইজেশনের এই রাজনীতিতে শিক্ষিতদের এগিয়ে আসতে হবে। দলের মধ্যে ভাগ থাকলেও বিবেধ থাকবে না। এভাবেই শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
আঃ রব মোল্যা বলেন, কাইয়ুম মোল্যা ও তার বাবা স্থানীয়ভাবে দীর্ঘদিন যাবত বিএনপি করে আসছে, কাইয়ুম একটা চরম সন্ত্রাসী, সে ভারতীয় নাগরিক, সে দীর্ঘদিন ভারতে থেকেছে। কয়েকদিন আগেও একজনকে হামলা করে কুপিয়েছে আহত করেছে। যদি সে এলাকায় না থাকে অথবা চুপচাপ থাকে, কাউকে কোন প্রকার হুমকি না দেয় তাহলে এলাকার পরিবেশ শান্ত থাকবে বলে আমি মনে করি।
সালথা থানা পুলিশের ২ নং যদুনন্দী বিট অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করে পুরো যদুনন্দী ইউনিয়নের আইন শৃংখলা স্বাভাবিক রেখেছি, ঐ এলাকায় একটু সমস্যা আছে তবে আমি বেশ কয়েকবার উদ্দ্যোগ নিয়েছি চাচা ভাতিজা কে নিয়ে বসে বিষয়টা স্থায়ী সমাধানের জন্য। কিন্তু কোন পক্ষই একসাথে বসতে রাজি নয়।
বিষয়টি নিয়ে সার্কেল স্যার ও ওসি স্যারের সাথে কথা বলে একটা বিট মিটিং করে সমাধান করতে পারবো বলে আশা করছি।
সালথা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসিকুজ্জামান বলেন, চাচা ভাতিজার দ্বন্দ্ব নিয়ে অনেক কথা শুনছি, চাচা ও ভাতিজাকে ডেকে খুব দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা হবে বলে আশা করছি। পুলিশ জনগণের বন্ধু আপনারা যেকোন সমস্যার জন্য পুলিশের সহায়তা নিন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।