সকল মেনু

৫৭০৬ বিঘা জমির তথ্য বানোয়াট : দাবি ফরিদপুরের রুবেলের মেয়ের

হটনিউজ ডেস্ক:

দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার।

শনিবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসিয়েশনে (ক্র্যাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তার বাবা ও চাচাকে ফাঁসানোর অভিযোগ করেন ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মেয়ে যাওয়াতা আফনান রাদিয়া। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আদিয়াত হাসান রাফিম ও সাজ্জাদ হোসেন বরকতের মেয়ে ইশরাত জাহান আদ্রিতি।

যাওয়াতা আফনান রাদিয়া বলেন, ‘পাঁচ হাজার ৭০৬ বিঘা জমির গল্প তামিল ছবির ফাইটিং দৃশ্যকেও হার মানিয়েছে।’ এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায় বিচার চেয়ে বাবা রুবেল ও চাচা বরকতের মুক্তি দাবি করেন। গণমাধ্যমে প্রচার পাওয়া উদ্দেশ্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের প্রকৃত সত্য তুলে ধরা ও পারিবারিক হয়রানি বন্ধ এবং নিরাপত্তার দাবিতে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মেয়ে যাওয়াতা আফনান রাদিয়া বলেন, ‘আমার বাবা ইমতিয়াজ হাসান রুবেল একজন ব্যবসায়ী এবং ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের টানা ৫ বছর যাবত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। এছাড়া মিডিয়া তালিকাভুক্ত দৈনিক ভোরের প্রত্যাশার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমার চাচা সাজ্জাদ হোসেন বরকত একজন ব্যবসায়ী এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া ফরিদপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতিও তিনি।’

তিনি বলেন, ‘ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশনের কারণে আমরা সামাজিকভাবে অপরাধী হয়ে গেছি। ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। একটি চক্র এই মামলাকে আলোচিত এবং বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার বাবা ২০০০ সাল থেকে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমার বাবার প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সরকারি কাজে বিপরীতে ব্যাংক লোন দ্বারা পরিচালিত হয়। বাবার নামে ও কোম্পানির নামে যে জমি রয়েছে তার পরিমাণ ১৫৯ এবং এই জমিগুলো তিনটি ব্যাংকে মর্গেজ দেয়া। ১৫৯ বিঘার মধ্যে চর অঞ্চলে ৩০ বিঘার মতো জমি রয়েছে। যার প্রতি বিঘা মূল্য ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।’

তার বাবার তিনটি ব্যাংকে আউটস্টান্ডিং হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা লোন রয়েছে জানিয়ে রাদিয়া বলেন, ‘তার ব্যাংক হিসেবে ৫-৭ কোটি থাকা কি অস্বাভাবিক? আমার চাচার সাজ্জাদ হোসেন বরকতের নামে ২০০ বিঘা জমি আছে। যা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সরকারি কাজের বিপরীতে ব্যাংকে মর্গেজকৃত এবং লোনের আউটস্টান্ডিং প্রায় ২০ কোটি টাকা। এছাড়া চরাঞ্চলে তার একটি এগ্রো ফার্ম আছে, যা ৪০০ বিঘার জমির উপর।’

‘পত্রিকায় আমার বাবা ও চাচাকে হাইব্রিড নেতা ও বিএনপির এক নেতার সহযোগী ছিল বলে প্রচার করা হচ্ছে। আজ পর্যন্ত কেউ কি বলতে পেরেছে যে বিএনপির কোনো মিছিল-মিটিংয়ে বা পদে আমার বাবা ও চাচা ছিলেন। আমার বাবা ও চাচা কোনো সময়ই বিএনপির মিটিং মিছিলে ছিলেন না। কোনো পদেও ছিল না’ বলেন রাদিয়া।

তিনি আরও বলেন, ‘একই মামলায় সিআইডি দুই হাজার কোটি টাকার মামলা করেছে। আর দুদুক করেছে ৭২ কোটি টাকার মামলা। দুদক দুই বছরে অনুসন্ধান করে প্রায় ৮০০ বিঘার মত জমি পেল। সেখানে সিআইডি ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি পেল কীভাবে? ৫ হাজার ৭০৬ বিঘার জমির পরিমাণ যে ভুল, তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। সিআইডিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে, যা পরিকল্পিত।’

রাদিয়া বলেন, ‘গত বছরের ৭ জুন গ্রেফতারের পর পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন- বদরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যা ৯ জুন পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছে। অথচ অস্ত্রসহ সকল মামলার এজাহারে বলা হয়েছে বাইপাস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

‘আমার বাবা ও চাচার নামে ৪টি লাইসেন্সকৃত অস্ত্র আছে। তারপরেও তাদের নামে মিথ্যা অস্ত্র মামলা দেয়া হয়েছে। গ্রেফতারের পর তাদের নামে ১২টি মিথ্যা মামলা দিয়ে ২৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতন করে জোরপূর্বক ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সার্কেল এসপি ও ডিবি বসে ১৬৪ জবানবন্দি রেকর্ড করায়। গ্রেফতার করার পর থেকে রিমান্ড চলাকালীন সময় আমার বাবা ও চাচাকে থানা বা ডিবি অফিসে না নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে অমানষিক নির্যাতন করে। থানার ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখলে তার প্রমাণ মিলবে।’

১১৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি কাজের বিপরীতে একটি করে লোন অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। মূলত প্রকৃত লেনদেন হয়েছে ৮-১০টি অ্যাকাউন্টে। আর টেন্ডার দাখিল করতে হলে পে অর্ডার সংযুক্ত করতে হয়। শুধু টেন্ডার দিলে কাজ পাওয়া যায় না। দেখা গেছে- ৪৪২টি টেন্ডারে অংশ নিয়েছে, কিন্তু ৭০টি কাজ পেয়েছে বাকিগুলো পায়নি।’

এর আগে গত বছরের ৭ জুন রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযান চালিয়ে বরকত ও রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বরকত ও রুবেল।

এছাড়া মাদক ব্যবসা ও ভুমি দখল করে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। ২৩টি বাস, ট্রাকসহ বিলাসবহুল গাড়িরও মালিক হয়েছেন। এছাড়া বিপুল পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top