সকল মেনু

‘নজিরবিহীন তামাশার রক্তাক্ত নির্বাচন প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী’

হটনিউজ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আরো একটি নজিরবিহীন তামাশার রক্তাক্ত নির্বাচন প্রত্যক্ষ করল দেশবাসী। দিনভর সহিংসতা, খুনোখুনি, গোলাগুলি, ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, ইভিএমের গোপন কক্ষে সরকারি ক্যাডারদের তাণ্ডব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ধানের শীষের প্রার্থীদের সব এজেন্টকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে ভোট ডাকাতির উৎসব করেছে আওয়ামী লীগ।’

রাজধানীর নয়াপল্টনে আজ শুক্রবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ইভিএমে ফলাফল দিতে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়। ডাকাতির পর ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে হিসাব মেলাতেই এই দীর্ঘ সময় লেগেছে। বহু হিসাব-নিকাশ করে তারা দেখিয়েছে, নির্বাচনে ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। তার মানে হচ্ছে, বন্দরনগরীর ৭৮ শতাংশের বেশি ভোটার নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এই প্রত্যাখ্যান ভোটসন্ত্রাসী ক্ষমতাসীনদের বলদর্পী শাসন-শোষণ ও নতজানু-মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি-নেতারা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলে যে ভোট ডাকাতির পাতানো নির্বাচন সম্পন্ন করেছে, সেটা সরকারি শত বাধার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মিডিয়ার কারণেই দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়েছে। এই নির্বাচন ঘিরে নিহত দুজন এবং ঘাতক সবাই আওয়ামী লীগের। তবে, সেসব খুনি অথবা প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণকারী কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপি কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ইসমাইল হোসেন বালি। কারণ তিনি ভোট ডাকাতির প্রতিবাদ করেছিলেন। নির্বাচনের পরও উত্তেজিত বাতিকগ্রস্তের মতো উদ্ভট উল্লাসে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর পৈশাচিক নিপীড়ন-নির্যাতন করে চলেছে।’

রিজভী আরো বলেন, “পদ বাঁচাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজের বাসায় অবরুদ্ধ অবস্থায় অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বলেছেন, ‘মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভালো নির্বাচন হয়েছে। বিএনপি কেন্দ্র দখলসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে।’ আসলে আওয়ামী নেতারা আত্মমুগ্ধ, চাটুকারদের প্রতি খুব বেশি সংবেদনশীল আর লোভ আছে অতিমাত্রায়। সে কারণে তারা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে আছে, শুধু ক্ষমতার রুটির ভাগের জন্য।”

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবের আপন ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা গতকাল কোম্পানীগঞ্জে নাগরিক সভায় বলেছেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব পদ বাঁচাতে অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।’ আপনি মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে কত দিন টিকে থাকবেন? কিসের সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে? চট্টগ্রামে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, রক্তপাত হয়েছে। এটাকে মেনে নেওয়া যায় না। সেখানে জোর করে ইভিএম ব্যবহার করে একজন প্রার্থীর পক্ষে ভোট নিয়ে বিজয়ী ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন পথহারা।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, “স্বয়ং নির্বাচন কমিশনার জনাব মাহবুব তালুকদার সাহেব বলেছেন, ‘চসিক নির্বাচন হলো অনিয়মের একটি মডেল।’ আগামীতে দেশব্যাপী যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে এই মডেল অনুসরণ করা হলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বসভায় আমরা আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখতে পারব না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শতকরা সাড়ে ২২ ভাগ ভোটের মতো এত অল্প সংখ্যক ভোট গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিয়ামক হতে পারে না। এই পরিস্থিতি নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার পরিচায়ক, যা গণতন্ত্রের জন্য এক অশনি সংকেত। সুষ্ঠু পরিবেশে অবাধ, নিরপেক্ষ, আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে ভোটার উপস্থিত অবশ্যই বেশি হতো।’

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘মূলত গ্রিড, পাওয়ার ও ট্রেচারির সমাহার হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। পদ রক্ষার জন্য এবং জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে এরা বিবেককে বন্দি রেখে অন্ধের মতো প্রলাপ বকছেন। কাদের সাহেবদের নিশিরাতের সরকার নির্বাচনকে ভোট ডাকাতির কালচারে পরিণত করেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো আওয়ামী ইতিহাসের ধারাবাহিক ভোট ডাকাতির আরেকটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। নির্বাচন কমিশনের আলাদা সত্তাই নেই, ওটা আওয়ামী লীগেরই একটি অঙ্গ সংগঠন।’

রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘কিছু দিন আগে ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য কমিশনের প্রতি যে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন এবং বিচার দাবি করে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকপত্র দিয়েছেন, তার যৌক্তিকতার প্রমাণ তাঁরা নিজেরাই বারবার দিচ্ছেন। নির্বাচন ব্যবস্থাকে যারা ধ্বংস করেছে, তারা জবর দখলকারী বর্তমান সরকার। কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণের কব্জায় সবকিছু রাখতে সব প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছে সরকার। নির্বাচন কমিশনের তালার চাবিটিও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার হাতে। তিনি যখন ইচ্ছে যা মনে করেন, সেটিই তালা খুলে নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতো খাঁচার পাখিদের যা বলেন সেটিই তাঁরা বাস্তবায়ন করেন।’

রিজভী বলেন, ‘অবৈধ সরকারের পাপেট প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা একজন রুচিহীন ব্যক্তি। সরকার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই তাঁকে ব্যবহার করে নিচ্ছে। মানুষের স্বাধীনতা, তথা গণতন্ত্র ধ্বংসের বর্তমান সরকারের শক্তিশালী ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন আওয়ামী লীগের নির্ধারিত ব্যক্তিকে মেয়র ঘোষণা দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। নির্বাচন এখন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top