সকল মেনু

‘খবরে দেহি শেখের বেটি আমাগো জন্যি ত্রাণ দিতেছে, কই তা কিছু পাই না তো’

হটনিউজ ডেস্ক:

করোনার কারণে দেশের দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর কর্মহীন অসহায় মানুষগুলো। সরকার পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়ার ঘোষণা দিলেও ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না রাজবাড়ীর নদী ভাঙন কবলিত মানুষের মাঝে। রাজবাড়ী সদরে মিজানপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে নদী ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষগুলোর দিন কাটছে অনাহারে।

করোনা মোকাবেলায় সরকারের ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে সংকট বেড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো এখন ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবুও মিলছে না ত্রাণ। গত ২৫ মার্চ সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই ওয়ার্ডে মাত্র ১৭ জন ত্রাণ পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
ওয়ার্ডটির সদস্য (মেম্বার) মো. বাদশাহ বলেন, এই এলাকায় নদী ভাঙনকবলিত হওয়ায় অসহায় মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রায় ৪০০ ত্রাণ দরকার। অথচ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাত্র ১৭ প্যাকেট ত্রাণ দেয় গত ৮ এপ্রিল। চাহিদার তুলনায় এটা নগণ্য।

১ নং ওয়ার্ডের রামচন্দ্রপুর গ্রামের দিনমজুর আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘এহন কেউ কামে ডাহে না, বউ-বাচ্চা নিয়া কষ্টে আছি। প্যাটের জ্বালা বড় জ্বালা, খাওন না পাইলে রাস্তায় নামা লাগবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন দিনমজুর বলেন, ‘খবরে দেহি শেখের বেটি আমাগো জন্যি ত্রাণ দিতেছে, কই তা কিছু পাই না তো, আমাগরে খবর কেউ নেয় না।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না বিষয়টি ঠিক নয়। আমরা ইউনিয়ন থেকে ১০০ ত্রাণের লিস্ট পাওয়া সাপেক্ষে তা বিতরণ করছি। চেয়ারম্যানরা লিস্ট দিলে ইউএনও ত্রাণ দিয়ে দেবে। তবুও বিষয়টি নিয়ে আমি ইউএনও’র সাথে কথা বলবো।

১ নং ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত ত্রাণ না পৌঁছানোর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদুজ্জামান খান বলেন, আমরা সিস্টেম অনুযায়ী ত্রাণ দিচ্ছি। ইউপি চেয়ারম্যানরা ১০০ ত্রাণের লিস্ট দিলে আমরা তা সাথে সাথে দিয়ে দিব। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই এভাবে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। তবে বিশেষভাবে কোনো ওয়ার্ডের জন্য ত্রাণ দেওয়া সম্ভব নয়।

ত্রাণের বিষয়ে মিজানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান বলেন, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন এটি। এখানকার একটা অংশ নদী ভাঙনের শিকার। ত্রাণ চাহিদাও অনেক বেশি। এই মুহূর্তে প্রায় ২৬০০ পরিবারে ত্রাণ দরকার। অথচ জেলা প্রশাসন থেকে ১০০ করে ত্রাণ দিতে চায়। ১০০ ত্রাণ নিয়ে ৯ ওয়ার্ডে ভাগ করে দিতে হয়। এতো বেশি চাহিদা যে এই ১০০ করে ত্রাণ নিয়ে আরো রেষারেষির সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, গত ৮ এপ্রিল ২ টন চাল আর ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। টাকা দিয়ে ডাল আর আলু কেনা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ২০০ জনের মাঝে ত্রাণ (১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি আলু) দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বারকে ১৭ জনের প্যাকেট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়নের ৫০ জন চা বিক্রেতাকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে (১০ কেজি চাউল, দুই কেজি আলু, এক কেজি ডাউল)।

চেয়ারম্যানের দাবি, এভাবে অল্প করে ত্রাণ নিয়ে আরও বেশি রেষারেষির সৃষ্টি হয়। এতো বেশি চাহিদা, মানুষ এসে আমার বাড়িতে বসে থাকে। কিছু বলতে পারি না। এর চেয়ে ভালো হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশসহ একবারে ৫-৬শ’ ত্রাণ নিয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক বিতরণ করা। এতে ভালোভাবে ত্রাণ বিতরণ করা যাবে।

অন্যদিকে কর্মহীন রাজবাড়ীর পৌরসভা এলাকায় শতাধিক চা বিক্রেতা খাদ্য সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ী পৌরসভা এলাকায় চা বিক্রেতাদের পক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বরাবর আবেদন করেন চা বিক্রেতা মুকুল।

এদিকে ত্রাণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জেলায় হটলাইন চালুসহ নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের এমন কোনো কর্মকান্ডের খবর পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে সচেতন মহলে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহে দু’দিন জেলা ভিত্তিক ত্রাণ বরাদ্ধ দেওয়া হচ্ছে। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার জন্য বরাদ্দ চালের পরিমাণ ১০০৭ মেট্রিক টন। এছাড়া নগদ টাকার পরিমাণ ৪৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং শিশু খাদ্য ক্রয় বাবদ বরাদ্দ ৮ লাখ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top