অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাতৃভাষাগুলো যেন সুরক্ষিত হয় সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। সেই লক্ষ্যে দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশের ভাষা ও সেই সকল দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং এ সংক্রান্ত গবেষণার কাজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অব্যাহত রয়েছে।বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেশের ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।এসময় তিনি বলেন: ৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে শুধু ব্যহত-ই করা হয়নি যুদ্ধাপরাধী এবং যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিলো তারা হয়ে গেল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। বাংলাদেশ আবার পিছিয়ে গেল।
‘এরপর ৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ভাষার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগটা নিয়েছিলাম ওই সময় আমরাই। এর প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর প্যারিসে জাতিসংঘের ইউনেস্কো বার্ষিক সভায় ভোটাভুটির মধ্যদিয়ে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ উদ্যোগে সকল দেশে আমাদের সহযোগিতা করেছে। এখন বিশ্বজুড়ে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।’
তিনি বলেন: শুধু অর্জন না, বাংলা মাতৃভাষাকে রক্ষা করা ও মাতৃভাষা চর্চা করতে আমরা তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলবো। জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান আমার আমন্ত্রণে ঢাকায় এসেছিলেন, এ সময় আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কাজ বন্ধ করে দেয়। সৌভাগ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেয় আমরা ক্ষমতায় আসি। আসার পর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করি।
মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন: সেখানে এখন মাতৃভাষা নিয়ে কাজ চলছে। পৃথিবীর অনেক দেশের মাতৃভাষা হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষার নমুনা সংগ্রহের কাজগুলো এখানে চলছে। দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশের ভাষা ও সেই সকল দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং এ সংক্রান্ত গবেষণার কাজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অব্যাহত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভাষা আমাদের সংস্কৃতি আমাদের কৃষ্টি এগুলোকে এগিয়ে নেওয়া এবং প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করে যাওয়া আমাদেরই কর্তব্য। অনেক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে যেটা অর্জন করেছি তার সুফল যেন আগামী প্রজন্ম ভোগ করতে পারে, তারা যেন একটি সুন্দর জীবন পায়। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাঙালি জাতি, আমাদের যত কিছু অর্জন সবকিছুই সংগ্রাম এবং আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। বারবার আমাদের সংস্কৃতির প্রতি আঘাত এসেছে, ভাষাতে আঘাত এসেছে, বাঙালি আন্দোলন করে তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে।
এ বছর যারা একুশে পদকে ভূষিত:
ভাষা আন্দোলনে মরহুম অধ্যাপক হালিমা খাতুন (মরণোত্তর), এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু ও অধ্যাপক মনোয়ারা ইসলাম একুশে পদক ২০১৯ পেয়েছেন।
ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পেয়েছেন ছয়জন। তারা হলেন- রিজিয়া রহমান, ইমদাদুল হক মিলন, অসীম সাহা, আয়োয়ারা সৈয়দ হক, মইনুল আহসান সাবের ও হরিশংকর জলদাস।
শিল্পকলায় সংগীত বিভাগে একুশে পদক পেয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- সুবীর নন্দী, মরহুম আজম খান (মরণোত্তর) ও খায়রুল আনাম শাকিল।
শিল্পকলায় অভিনয় বিভাগে তিনজন একুশে পদক পেয়েছেন। তারা হলেন- লাকী ইনাম, সুবর্ণা মুস্তাফা ও লিয়াকত আলী লাকী।
এছাড়াও শিল্পকলায় আলোকচিত্র বিভাগে সাইদা খানম ও চারুকলা বিভাগে জামাল উদ্দিন আহমেদ একুশে পদক পেয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য, গবেষণায় ডক্টর বিশ্বজিত্ ঘোষ ও ড. মাহবুবুল হক এবং শিক্ষায় ডক্টর প্রণব কুমার বড়ুয়া একুশে পদক পেয়েছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।