কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেছেন, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করলে নাকি উকিল পাওয়া যায় না। কেউ তার পক্ষ হয়ে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেয় না। এটা পেশাদারিত্ব না। সবারই ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এগুলো বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা জন্ম দেয়, বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এসব নিয়ে ভাবতে হবে। বিচার ব্যবস্থার মান-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। আর এখানে জ্যেষ্ঠ বিচারকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা রাখলে অবশ্যই একটা আদর্শ বিচার ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ রশিদ। দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে অনন্য নজির সৃষ্টি করায় আজ তাঁকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচবারের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। কিশোরগঞ্জ আদালতে তিনি দীর্ঘদিন আইনপেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এ কারণে রাষ্ট্রপতিকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন আইনজীবীরা।রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় আইনজীবীদের কিছু প্রবণতার সমালোচনা করে বলেন, আমি শুনেছি কিশোরগঞ্জে বিচারপ্রার্থীদের একটা ওকালতনামা কিনতেই ৫০০ টাকা ব্যয় করতে হয়। তা খুবই বেশি। এ নিয়ে গরিব বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আইন-আদালত বিষয়ে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি কিশোরগঞ্জ আইনজীবী সমিতিকে অত্যন্ত ধনী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ সংগঠনের তহবিলে এখন ১৩ কোটি টাকা। কাজেই কেবল তহবিল বাড়ানোর দিকে মন না দিয়ে পেশাদারিত্বের দিকে খেয়াল করতে হবে। ওকালতনামার খরচ কমানো প্রয়োজন। ওকালতনামার দাম এত বেশি হওয়া উচিত নয়।তিনি আরো বলেন, আইনজীবী সমিতিগুলো খুবই শক্তিশালী। তারা আজ ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আইনজীবীদের ঐক্যের কারণে বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঐক্য ভাল কিন্তু এই ঐক্য যেন অত্যাচার না হয়।এ সময় তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের সহকর্মী আজ দেশের রাষ্ট্রপতি। একবার নয়, পরপর দুবার রাষ্ট্রপতি হয়েছে। এ কারণেও আমাকে নিয়ে খুশি হতে পারেন আপনারা। এটা কিশোরগঞ্জবাসীর জন্য এক পরম পাওয়া।সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সহিদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মাহবুব উল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও আইনমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আইনজীবীরা। একই সঙ্গে তাঁদের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদসহ বিচারক, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে মঞ্চে বসা আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে উদ্দেশ্যে করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, আইনমন্ত্রীর বাবা বিশিষ্ট আইনজীবী সিরাজুল হককে আমি বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করতাম। তিনি কিশোরগঞ্জের নীলগঞ্জে বিয়ে করেছেন। তবে উনার স্ত্রীকে কখনো ভাবি ডাকতে সাহস পাইনি। উনাকে আপাই ডাকতাম আমি। সেই সূত্রে আইনমন্ত্রী আমার ভাগ্নে। আরেকভাবে তিনি আমার ভাতিজাও হন। তাই মামার বাড়ির প্রতি আইনমন্ত্রীর আলাদা অনুরাগ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আশা করি তিনিও কিশোরগঞ্জের জন্য অনেককিছু করবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক কিশোরগঞ্জ আইনজীবীদের জন্য একটি ভবন নির্মাণে এক কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দিনবদলের পালা চলছে, লক্ষ কোটি টাকার বাজেট হচ্ছে। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু হচ্ছে যা এক সময় কল্পনাও করা যেত না। এই অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। আর এতে আইনজীবীদের অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। দেশকে আরো এগিয়ে নিতে হবে।
এর আগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আইনজীবীরা তাদের বক্তৃতায় কিশোরগঞ্জে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারক ও লোকবল না থাকায় সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে জানান। তারা এ ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক ও লোকবল নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি কিশোরগঞ্জে একটি বিদ্যুৎ আদালত স্থাপনেরও দাবি জানান।
পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরো বেশকিছু কর্মসূচিতে যোগ দেন। দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কিশোরগঞ্জ সদরে এটি রাষ্ট্রপতির প্রথম সফর। আগামীকাল বুধবার বিকেলে তিন দিনের সফর শেষে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে তাঁর যাত্রা করার কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।