মোহাম্মাদ মানিক হোসেন চিরিরবন্দর(দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে নতুন জাতের সুগন্ধী ধান ব্রি-ধান-৫০ চাষ করে ভালো ফলন অর্জন করায় অধিকাংশ কৃষকদের মাঝে এ ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে। ফলে আগামীতে এ ধানের চাষ ব্যাপক হারে হবে বলে আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সাল হতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউ-েশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক সহায়তায় বেসরকারী সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র (জিবিকে) সুগন্ধি ধান ভ্যালু চেইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সে লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় প্রকল্প অর্ন্তভুক্ত কৃষকদের ২ দিন ব্যাপী সুগন্ধি ধান চাষের উন্নত পদ্ধতি ও রোগ-পোকা দমনের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এর ফলে কৃষকেরা ধান উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান বিশেষ করে সুষম সারের ব্যবহার, সিঙ্গিল হিল মেথড, পার্চিং এবং রোগ ও পোকা মাকড় দমন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানতে পারে। যা ঐ অঞ্চলের কৃষকেরা পূর্বে জানত না তারা শুধুমাত্র সনাতন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে ধান চাষ-আবাদ করত ফলে কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতো । এ বছর বোরো মৌসুমে উন্নত প্রযুক্তি ও কলা কৌশল ব্যবহার করে প্রায় ২৭ একর জমিতে ব্রিধান- ৫০ জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে।
আব্দুলপুর ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম জানান, এবার ৩৩ শতক জমিতে ব্রি-ধান-৫০ চাষ করেছেন। চারা লাইন করে রোপণ করার ফলে চারার পরিমান কম লাগার পাশাপাশি ফলন বৃদ্ধি ও রোগ পোকা-মাকড় কম হয় ও অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা করতে সহজ হয়। তিনি চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি ধান ৫০ চাষ করে ২৬ মণ ধান উৎপন্ন করেছেন যার বাজার মূল্য ১৮ হাজার ২শত টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হয়েছে ১০ হাজার ৪ শত টাকা । কিন্ত সনাতন পদ্ধতিতে ওই জমিতে চাষ করতে তার ব্যয় হতো প্রায় ৮ হাজার টাকা। ধান উৎপাদন হতো ২০ থেকে ২২ মণ যার বাজার মূল্য ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা এতে তার উদ্বীত্ত লাভ হতো ৬ হাজার ৩শত টাকা।
আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের সুগন্ধী ধান উৎপাদক দলের কৃষক মোঃ সাইদুর রহমান বলেন গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের নিকট হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন এতে তাদের উৎপাদন খরচ যেমন কমেছে পাশাপাশি তাদের আয়ও বেড়েছে।
গ্রাম বিকশ কেন্দ্রের সুগন্ধি ধান ভ্যালু চেইন প্রকল্পের প্রকল্প প্রধান কৃষিবিদ মোঃ লিয়াকত আলী জানান, ব্রিধান ৫০ সিঙ্গেল হিল পদ্ধতিতে লাইন করে চারা রোপন করার ফলে মাজরা ও অন্যান্য ক্ষতিকর পোকা সহজে দমন করা যায়। ফলে তুলনামূলকভাবে জমিতে কম কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া ইউরিয়া অপচয় রোধের জন্য এলসিসি ও সেচ পানির অপচয় রোধের জন্য এডাব্লিউডি ব্যবহার করা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সার্বিক পরামর্শ ও গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের পেইস প্রকল্পের আওতায় সুগন্ধী ধান ভ্যালু চেইন প্রকল্পের সহযোগিতায় কৃষকরা বর্তমানে ধানের ভাল ফলন ও দাম বেশী পাওয়ায় আনন্দিত। এ প্রকল্প চালু থাকলে পরবর্তীতে সুগন্ধী ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিনদিন বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।