সকল মেনু

ঢাকা ১০ আসনে আ. লীগে অপ্রতিদ্বন্দ্বী তাপস বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী

ঢাকা ১০ আসন

শানজানা জামান আনভি,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডি, কলাবাগান, নিউ মার্কেট ও হাজারীবাগ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১০ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে তাপস টানা দুই মেয়াদে নির্বাচিত। আগামী নির্বাচনেও এ আসনে তিনিই হবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিই তাপসকে এগিয়ে রাখবে বলে মনে করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। অন্যদিকে আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতা তৎপর। তাঁদের প্রত্যেকেই ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি রাখছেন। দলীয় হাইকমান্ডের আশীর্বাদ পেতে এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের পক্ষে টানতে চেষ্টা করছেন তাঁরা।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে এ আসনে পালাক্রমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছে। তবে সর্বশেষ দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি ধরে রাখতে পেরেছে। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে (তৎকালীন ঢাকা-৯) আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে পরাজিত করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তবে ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মকবুল হোসেনের কাছে হেরে যান বিএনপির প্রার্থী লে. জে. (অব.) মীর শওকত আলী বীর-উত্তম। ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেনকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন বিএনপির খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে ধানমণ্ডি, কলাবাগান, নিউ মার্কেট, হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে ঢাকা-১২ আসন গঠিত হয়। সে নির্বাচনে আসনটি আবার বিএনপির হাতছাড়া হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বিএনপির প্রার্থী খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদকে ৪৮ হাজার ৮৭৪ ভোটে পরাজিত করেন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে পুনরায় আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে ঢাকা-১২ আসনের এলাকাগুলো নিয়ে গঠিত হয় ঢাকা-১০ আসন। সে নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্য আছেন তাপস।

ঢাকা-১০ আসনের অন্তর্গত ধানমণ্ডি ধনাঢ্য লোকজনের আবাসিক এলাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু থেকেছেন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডে। ধানমণ্ডি ৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাসভবন সুধা সদনও ধানমণ্ডিতে অবস্থিত। ফলে এ আসনটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শেখ পরিবারের সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসকে এ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে পেয়ে বেশ খুশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানায়, ঢাকা-১০ আসনের এলাকাগুলোর মধ্যে হাজারীবাগ ছিল সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া। ফজলে নূর তাপস সংসদ সদস্য হওয়ার পর এলাকাটি বলতে গেলে ঢেলে সাজিয়েছেন। এই এলাকায় আগুন লাগলে সরু গলি দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারত না। তাপসের সময় রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা হয়েছে। হাজারীবাগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনও। নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী তাপস হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। নীলক্ষেত ও ধানমণ্ডিতে একাধিক জায়গার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সেখানে বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে নিজস্ব অর্থায়নে শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছেন তাপস। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সম্প্রতি আরজু মনির নামে ১০০ শয্যার একটি মা ও শিশুকল্যাণ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এ আসনের বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির সমস্যা ছিল। প্রতিটি জোনে একাধিক পাম্প স্থাপন করায় সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। জিগাতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর করতে উন্নয়ন করা হয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থার। এলাকায় দলিত সম্প্রদায়ের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে ধানমণ্ডি লেকের। মাদক নিয়ন্ত্রণেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন তাপস।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আবারও সাধারণ ভোটাররা তাপসকে নির্বাচিত করবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

ধানমণ্ডি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমেদ কামাল বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী ঠিক করাই আছে, ফজলে নূর তাপস। উনি ছাড়া আমাদের এখানে আর কোনো প্রার্থী আমরা দেখছি না। এখানে আওয়ামী লীগের পক্ষে আর কেউ নির্বাচনের চিন্তাও করে না। নিজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাপস সাহেব এলাকায় একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’

হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াছুর রহমান বাবুল বলেন, ‘ঢাকা-১০ আসনে ফজলে নূর তাপস আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। এখানে অন্য কারো মনোনয়ন চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এমপি সাহেব মানুষের বিপদে-আপদে রাতবিরাতেও পাশে দাঁড়ান। তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করছেন। জনসেবার ক্ষেত্রে তিনি কে কোন দল করে তা দেখেন না। হাজারীবাগ থানার দুই ওয়ার্ডের এক লাখ ৩০-৪০ হাজার ভোটারের প্রত্যেকের সেবা করে যাচ্ছেন এমপি সাহেব।’

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী কে হবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। এক-এগারোর সময় জিয়া পরিবারের আইনজীবী হিসেবে ভূমিকার মাধ্যমে দলে একটি শক্ত অবস্থান গড়েছিলেন ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অসীম আইনজীবী হিসেবে ভূমিকার মাধ্যমে সারা দেশে পরিচিতির পাশাপাশি দলের সর্বস্তরে জনপ্রিয়তা পান। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে নিজ জেলা নোয়াখালীর একটি আসন থেকে লড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল ব্যারিস্টার অসীমের। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমদের অসুস্থতা এবং নিজের দীর্ঘদিনের বসবাসের সূত্রে ধানমণ্ডি আসনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করায় শেষ পর্যন্ত তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হয় এ আসনে। তবে নবম সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এই আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন ব্যারিস্টার অসীম। কিন্তু বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় তাঁর আর নির্বাচন করা হয়ে ওঠেনি।

বর্তমানে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার অসীমের বিরুদ্ধে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশের কিছু অভিযোগও রয়েছে। তাদের মতে, আন্দোলন-সংগ্রামে অসীমকে পাশে পাওয়া যায় না। তার ওপর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রাজনৈতিক সহকর্মীদের হাতে ধানমণ্ডি থানা শ্রমিকদলের সভাপতি বাবুল সরদার নিহত হলে ব্যারিস্টার অসীমকে হুকুমের আসামি করে মামলা করেন বাবুলের স্ত্রী। যদিও ঘটনার সময় লন্ডনে অবস্থান করছিলেন অসীম। এখনো তিনি লন্ডনেই অবস্থান করছেন।

এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়তে চান বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবি। ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় পড়াশোনা শেষ করার পর ব্যবসার পাশাপাশি নগর বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। ওয়ার্ড থেকে থানা বিএনপি হয়ে বর্তমানে মহানগর কমিটিতে দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা থাকলেও তিনি দেশ ত্যাগ না করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাঁকে কাছে পাওয়ার কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

শেখ রবিউল আলম রবি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর আমি ওয়ার্ড থেকে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছি। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ওয়ার্ড ও থানায় দায়িত্ব পালনের ধারাবাহিকতায় ধানমণ্ডি থানা বিএনপির সভাপতি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য ও ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছি। ১৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও রাজনীতি করব বলে সরকারি চাকরিতে যাইনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকার কারণে শতাধিক মামলার আসামি হয়েছি, বারবার কারাভোগ করেছি। সুখে-দুঃখে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে পড়ে আছি। ধানমণ্ডি-কলাবাগানে বিএনপির রাজনীতিতে আমার দীর্ঘ ধারাবাহিকতা, নেতাকর্মীদের সমর্থন ও এলাকাবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্যতাই আমার শক্তি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মনোনয়নের ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।’

ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীমের মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে তাঁর অনুসারী দলের স্থানীয় নেতারা জানান, অসীমের বাসা ধানমণ্ডিতে। দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি নিয়মিতই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top