হটনিউজ ডেস্ক: সারাদেশে এমপিও’র বাইরে থাকা ৭ হাজারের বেশি সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক ও কর্মচারী। তাদের এমপিও সুবিধার আওতায় আনলে বছরে ২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নীতিমালা চূড়ান্ত করার পর প্রয়োজনীয় অর্থের সঠিক পরিমাণ জানা যাবে। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনরত নন-এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষকদের মূল দাবিও ছিল এটাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকাল থেকে অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) করার প্রক্রিয়া।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের নন-এমপিও ৭ হাজার ১৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে বছরে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা লাগবে। এর মধ্যে ১ হাজার ২২৭টি নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ২১৯ কোটি ৭১ হাজার ৩০০ টাকা, ১ হাজার ৮৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৩৬৮ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা, এমপিওভুক্ত ৩ হাজার ২৭৫টি নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মাধ্যমিকে উন্নীত করে এমপিওভুক্ত করতে ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ টাকা, ৫১৮টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জন্য ৩৫৭ কোটি ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৪০০ টাকা ও এমপিওভুক্ত ১ হাজার ৩৩টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজকে ডিগ্রি স্তরে উন্নীত করে এমপিওভুক্ত করতে লাগবে ৭১৭ কোটি ৩৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৫০ টাকা।
ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্ত করতে বছরে ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জন্য ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা আর নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য লাগবে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫০ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘কিভাবে ও কোন খাত থেকে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে তা এই মুহূর্তে হুট করে বলা যাবে না। মন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন। এছাড়া বিষয়টিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। কাজটি তাদেরকে নিয়ে যৌথভাবেই করতে হবে।’
কবে থেকে কার্যক্রমটি শুরু হবে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আমাদের হাতে তো আর কিছু নেই। আমরা এর একটি নীতিমালা তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। এটি চূড়ান্ত না হয়ে আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এমপিও করার নীতিমালা পেয়ে গেলে বেশি সময় লাগবে না।’
মাউশির পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক শামছুল হুদা বলেন, ‘হুট করে তো কিছু করা যায় না। তার ওপর দেশে এত প্রতিষ্ঠান। এগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজন আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ বছর নাকি আগামী বাজেটে থোক বরাদ্দ দেবে তা উল্লেখ করা হবে নীতিমালায়। এগুলো তো মুখের কথায় হয় না। তবে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসাইন। তার ভাষ্য, ‘তবে এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। কারণ এখানে নীতিমালা ও টাকা-পয়সার বিষয় রয়েছে।’
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কোন প্রক্রিয়ায় এই এমপিওর টাকা বরাদ্দ দেবে সেজন্য চূড়ান্ত নীতিমালা হয়নি। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুত করা নীতিমালাটি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। সেখান থেকে খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের ফল, প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ কয়েকটি বিষয় মূল্যায়ন করে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচন করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান জানিয়েছেন, মাউশি থেকে নতুন এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এসেছে। এ নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে কাজ করবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্দ পেলে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে সেই যাচাই-বাছাই চলবে।
২০০৯ সালের ১৬ জুন সবশেষ নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পর আর কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করেনি সরকার। বর্তমানে সারাদেশের প্রায় সাড়ে সাত হাজার নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
২০১৩ সাল থেকে এমপিওভুক্তির জন্য নন-এমপিও সরকারি শিক্ষকরা দাবি জানিয়ে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ কারণে গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অমরণ অনশনে নামেন শিক্ষকরা।
গত ২ জানুয়ারি দেওয়া শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের ওপর আস্থা রাখতে না পারায় তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপরই মন্ত্রণালয় থেকে এমপিও প্রত্যাশীদের বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয় মাউশি’কে। শুক্রবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে টানা ৯ দিন ধরে চলা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন নন-এমপিও শিক্ষকরা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।