সকল মেনু

কোরবানির পশুর হাট তাদের ইজারা না পেলেও !

হটনিউজ ডেস্ক: কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র একসপ্তাহ। অথচ রাজধানীর ৫টি কোরবানির পশুর হাটের ইজারা দেওয়ার জন্য দফায় দফায় টেন্ডার আহ্বান করেও এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দর পায়নি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে সিটি করপোরেশন দু’টি। এছাড়া স্থানীয় কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় ইজারার মাধ্যমে হাট বসাতে সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এসব জায়গা ইজারার বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এরপরও হাট বসানোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন ইজারা-প্রত্যাশীরা। এরইমধ্যে পোস্টার, পেস্টুন, মাইকিং, বাঁশ-খুঁটি ও গেট নির্মাণ করেছেন তারা। ইজারা-প্রত্যাশীরা বলছেন, শেষপর্যন্ত ইজারা না পেলে তারা পশুর হাট গুটিয়ে নেবেন। দুই সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দফায় দফায় টেন্ডার দিয়েও দুই সিটির ৫টি হাটের জন্য সরকার নির্ধারিত (হাটের গত তিন বছরের ইজারা মূল্যের গড়) মূল্যও পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি হাটের বিপরীতে কোনও দরপত্রই জমা পড়েনি।

এ বছর দুই সিটি করপোরেশন ২২টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ১৩টি এবং উত্তর সিটিতে ৯টি। দক্ষিণের হাটগুলো হচ্ছে—মেরাদিয়া বাজার, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, কমলাপুরের ব্রাদার্স ইউনিয়নসংলগ্ন বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা, ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, লালবাগ রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠ এবং সাদেক হোসেন খোকা মাঠসংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গা।

এই হাটগুলোর মধ্যে প্রথম দফায় ২৬ জুলাই ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠসংলগ্ন ধোলায়খাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গার হাটের বিপরীতে কোনও দরপত্রই জমা পড়েনি। এছাড়া গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নসংলগ্ন বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন হাট এবং আরমানিটোলা হাটের বিপরীতে সরকারি মূল্যের (হাটের গত তিন বছরের ইজারা মূল্যের গড়) চেয়ে কম মূল্য দেওয়া হয়। পরে এ পাঁচটি হাটের দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আবার আহ্বান করা হয়।

দ্বিতীয় দফায়ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠের জন্য একটি দরপত্রও জমা পড়েনি। বাকি চারটির মধ্যে শুধু ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্য ৬১ লাখ ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে মাত্র ২১ হাজার ২৫০ টাকা বেশি মূ্ল্য দিয়ে হাজী মো. শামসুজ্জোহা নামে একজন ইজারা পেয়েছেন। বাকি তিনটি হাটের বিপরীতে বাধ্য হয়েই তৃতীয় দফার জন্যও দরপত্র আহ্বান করে সিটি করপোরেশন। এতেও সরকারি মূল্য থেকে কম মূল্যের দরপত্র জমা দিয়েছেন ইজারায় অংশগ্রহণকারীরা। এ ছাড়া প্রতিটি হাটেই মাত্র দুই জন করে দরপত্র জমা দিয়েছেন।

এদিকে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি হাটের কোনও ইজারা দেওয়া না হলেও সেগুলোর বিষয়ে প্রচারণা চলানো হচ্ছে। ব্যানার, পোস্টার, বাঁশ ও খুঁটি দিয়ে গেট তৈরি করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে। জানা গেছে, এসব হাটের অনুমোদন দূরের কথা, দরপত্রও আহ্বান করা হয়নি। তবে হাটগুলো ইজারা পেতে সিটি করপোরেশনের কাছে কয়েকজন আবেদন করেছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী বাদল সরদার গোলাপবাগ মাঠে হাট বসানোর কাজ করছেন।

এই হাটের প্রচারপত্রে ইজারাদার হিসেবে আবুল কালাম আজাদ নামে একজনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। হাটের প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, ‘এ হাটে ঈদের দিন পর্যন্ত গরু-ছাগল বিক্রি হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দেবে, পানি, বিদ্যুৎ, থাকা-খাওয়া, গোসল, গরু ওঠা-নামা ও গাড়ি পার্কিংসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর হাজী বাদল সরদার বলেন, ‘আমরা এখানে হাট বসাতে অনুমতি চেয়ে সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদন করেছি। আমি আশাবাদী অনুমোদন পাব। এ জন্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছি। শেষ সময়ে অনুমোদন দিলে তো প্রচার ও হাট গোছানোর কাজ করা যাবে না। যদি অনুমোদন না পাই, তাহলে হাট গুটিয়ে নেব।’

ইজারাদার হিসেবে পোস্টার ছাপানো আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘হাট ইজারা না পাইলেও শেষমুহূর্তে পেতে পারি। এজন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’

এদিকে কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় ডিএসসিসির ব্রাদার্স ইউনিয়ন বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা এখনও ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে ডিএসসিসি। কিন্তু ওই হাটের ইজারা-প্রত্যাশীদের লোকজন হাট বসানোর কাজ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে গেট তৈরি করা হয়েছে। বাঁশ-খুঁটি লাগানোর কাজও চলছে।

একই অবস্থা কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের এলাকা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা মাঠসংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গার মাঠেরও। এ হাটগুলোরও কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে ডিএসসিসি। কিন্তু ইজারা-প্রত্যাশীরা হাট তিনটি বসানোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও হাটবাজার ইজারা কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘চারটি হাটের কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় নীতিমালা অনুযায়ী তিনটি হাটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আর আরমানিটোলা খেলার মাঠের হাটটি বাতিল করা হয়েছে।’ ইজারা চূড়ান্ত না হলেও প্রচারণা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমরা পাইনি। ব্যবসায়ীরা তাদের পলিসি অনুযায়ী কাজ করেন।’

এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় এ বছর ৯টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে সাতটি হাটের ইজারাদার চূড়ান্ত হয়েছে। দু’টি এখনও বাকি। বনরূপা ও আশিয়ান সিটির পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত হয়নি। বনরূপার হাটে ৫১ লাখ, আশিয়ান সিটির হাটে ৫৩ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে। কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় এ দু’টি হাটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে হাট দু’টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top