সকল মেনু

মতিন প্রকাশ্যে চলাফেরার পরও পুলিশের খাতায় পলাতক

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার নারী নির্যাতনকারী তুফান সরকারের বড় ভাই শহর যুবলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সম্পাদক মতিন সরকার একাধিক হত্যা মামলার আসামি। প্রকাশ্যে চলাফেরার পরও পুলিশ বলছে, আবু নাসের উজ্জ্বল হত্যা মামলায় জামিন নিয়ে সে পলাতক। তবে মন্ত্রী, ডিসি, এসপি ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাকে প্রকাশ্যেই দেখা গেছে, বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আবদুল মতিন সরকারঅভিযোগ রয়েছে, সরকারি আইনজীবীদের মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে মতিন পলাতক হিসেবে রয়েছে। তবে বগুড়ার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল মতিন জানান, মতিন সরকার প্রকাশ্যে ডিসি, এসপিসহ অনেকের সঙ্গে বৈঠক করছেন। কিন্তু এতে তাদের কোনও গাফিলতির কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘হয়তো পুলিশকে ম্যানেজ করে আদালতে পলাতক রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবদুল মতিন ১৮-২০ বছর আগে যুবলীগের একজন সাধারণ কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে সে অস্ত্রধারী ক্যাডার হয়ে যায়। ২০০০ সালের দিকে শহরের নুরানী মোড় এলাকায় সদর ফাঁড়ির টিএসআই তাকে গুলিভর্তি একটি নাইন এমএম পিস্তলসহ গ্রেফতার করে। ২০০৪ সালের দিকে ওই মামলায় তার ২৭ বছর কারাদণ্ডও হয়। কিছুদিন জেলে থাকার পর উচ্চ আদালতে মামলাটি স্থগিত হলে সে জেল থেকে বের হয়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মতিন রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে নাম পরিবর্তন করে ‘আবদুল মতিন সরকার’ করে।

পুলিশ ও আদালতের তথ্য অনুসারে মতিনের নামে ৩-৪টি হত্যা মামলা রয়েছে। ১৯৯৮ সালের দিকে শহরের নুরানী মোড় এলাকায় রসুল, ২০০১ সালে চকসূত্রাপুরে আবু নাসের উজ্জ্বল, ২০১১ সালে মাটিডালি বাণিজ্য মেলায় শফিক চৌধুরী এবং ২০১৫ সালে চকসূত্রাপুরে এমরান হত্যার অভিযোগ উঠে। ২০১২ সালে র্যা ব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে বিপুল পরিমাণ মাদক ও নগদ টাকাসহ গ্রেফতার করে।

জানা যায়, উজ্জ্বল হত্যা মামলায় (৩০২/০৯) প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং এমরান হত্যা মামলা (৩৫/১৫) দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ মতিনকে গ্রেফতার করলেও কয়েকদিন পর জামিনে ছাড়া পায় সে। এর মধ্যে উজ্জ্বল হত্যা মামলায় হাজিরা না দেওয়ায় পলাতক আসামি হিসেবে গত ২০১২ সালের ২৫ জুন তার পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিনকে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করা হয়। গত ৫ বছর তিনি সরকারি খরচে মতিনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন। আগামী ৯ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।

এদিকে, আদালতের খাতায় পলাতক থাকলেও মতিন প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। গত বছরের ১১ জুন মতিন ঢাকায় নৌমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানায়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সোনাতলায় ফুটবল টুর্নামেন্টে সে গরু বিতরণ ও কয়েকদিন আগেও পুলিশ সুপারের সঙ্গে চেক বিতরণ করে। এছাড়া গত ৫ জুলাই শহরের চকযাদু রোডে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে তার ভাই তুফান সরকারের সেনেটারি স্টোর উদ্বোধন করে সে।
বগুড়ার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এপিপি রেজাউল হক জানান, মতিন পলাতক নয়, এটা প্রশাসন জানে। আদালত তাকে পলাতক দেখালে তাদের কী করার আছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, হত্যা মামলায় আবদুল মতিন সরকারের পলাতক থাকা এবং ২০১২ সালে তার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করার বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top