নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, চাঁদপুর: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ পেতে একজন আবাসিক গ্রাহক খরচ করছেন ১৩ হাজার টাকা। এসব টাকা পল্লী বিদ্যুতের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজেসে গুটি কয়েক দালার কর্তৃক আদায় করা হয়। ধূর্ত এ চক্রটি টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার প্রমাণাদি রাখেনি। তারা গ্রাহকদের কোনো রশিদ দেয়নি। গ্রাহকরা তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। কারণ গ্রামের প্রতিটি পরিবারই বিদ্যুৎ পেতে উদগ্রীব হয়ে থাকে। দালালদের শর্ত মতো টাকা পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেনা বলে হুমকি দেয়। তাই এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে রাজি হয় না।
যদিও কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশও করছেন। শনিবার ১নং বালিথুবা পূর্ব ইউনয়নের মদনের গাঁও গ্রামে ৩০ লাখ ৬৬ হাজার টাকায় ২.০৪২ কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুতায়ন করা হয়। এখানে প্রদাণকৃত সংয়োগের মধ্যে ১২৮টি আবাসিক, ৪টি বাণিজ্যিক, ২টি মসজিদ- মন্দির ও একটি ক্ষুদ্রশিল্প। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া। সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে জানা যায়, রাশেদ, খলিল, ও বিল্লাল প্রতি মিটার বাবদ ১৩ থেকে ২০হাজার টাকা উৎকোচ নেয়। এভাবে ১৩৫টি মিটার থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। তবে কোনো গ্রাহককেই রশিদ দেয়া হয় নি। মূলত তারা দালাল হিসেবে এলাকায় কাজ করেছে। ১নং বালিথুবা পূর্ব ইউনয়নের মদনের গাঁও গ্রামের খাঁ বাড়ির জাকির হোসেনের স্ত্রী রোজিনা বেগম, আক্কাছ আলীর স্ত্রী রানু বেগম, লোকমান খাঁর ছেলে আল আমিনসহ আরো অনেকেই জানান, বিদ্যুতের জন্যে বছরের পর বছর অপেক্ষা করে শুধু টাকার জন্যে ঘরে বিদ্যুৎ আসবে না- এটা কোনো ভাবেই মানতে পারবো না। তাই অতিরিক্ত টাকা দিয়েই বিদ্যুৎ নিতে বাধ্য হই।
আর যারা টাকা নেয় তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো কথাই বলা যায় না। কারণ তাদেরকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা আশ্রয় পশ্রয় দেয়। তাছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও লাভ হবে না। অভিযোগ দিয়ে ঝামেলা আরো বাড়ানোর চেয়ে চুপ থাকি এটাই ভালো।স্থানীয় দালাল চক্রের সদস্য খলিলুর রহমানের সাথে কথা বললে সে জানায়, আমরা শুধু মিটারের টাকা নিয়েছে। আপনারা যত টাকার কথা শুনেছেন এ তথ্য সঠিক নয় বলে দ্রুই সটকে পড়েন। পরে তার কাছে আরো কিছু বিষয় জানতে চাইলে তিনি আরো কোনো কথা জবাব দেননি। এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান সফিকুর রহমানও কোনো প্রকার সদোত্তর দিতে পারেনি।যদিও চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -২ কামতা সাব জোনাল অফিস এর সহকারি জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, এমনটি হওয়ার কথা নয়। সরকারি খরচে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। যে ক্ষেত্রে গ্রাহককে শুধুমাত্র নামমাত্র সরকারি খরচ বহন করতে হয়। তারপরেও আমারা যদি এব্যাপারে কোনো লিখিত অভিযোগ পাই। অবশ্যই সম্পৃক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।চাঁদপুর (৪) ফরিদগঞ্জ আসনের সাংসদ ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া বলেন, সব নতুন সংযোগের জন্যে সরকারি বরাদ্দ হয়। এক্ষেত্রে গ্রহকরা সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা দিতে যাবে কেন? তারপরেও যদি এমন হয়ে থাকে তবে অভিযোগ পেলে পুলিশের কাছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমার নির্দেশ দেয়া আছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।