সকল মেনু

প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের নিয়োগের আগেই অসন্তোষ

হটনিউজ ডেস্ক: দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষক সংকট দূর করতে ৩৪তম বিসিএস থেকে ৮৯৮ জন নন-ক্যাডারকে নিয়োগ করছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। তবে নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার আগেই তাদের পদায়ন ও বেতন নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

প্রধান শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন ও সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন (ফাইল ছবি)অন্যদিকে, বর্তমানে যারা এ পদে নিয়োজিত রয়েছেন তারা দ্বিতীয় শ্রেণির বেতন ও মর্যাদা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা ও সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে বেতন বৈষম্য দূর করতে একটি কমিটি গঠন করা হলেও তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না নতুন বা পুরাতন কেউই। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, ‘শিক্ষকদের জন্য ভালো কিছু অবশ্যই করবো। কারণ প্রাথমিক শিক্ষাকে উন্নত করতে চাই। সে কারণে তাদের দাবি-দাওয়া শুনেছি। আর যারা ৩৪তম বিসিএস থেকে আসছেন তাদের বিষয়টি নিয়েও কাজ চলছে, নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে।’

প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৩৪তম বিসিএসের একাধিক প্রার্থী জানান, প্রাথমিকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি করা হলেও এখনও বেতন বা মর্যাদা কোনটিই দেওয়া হয়নি। নিয়োগের আগেই যদি তা ঠিক করা না হয়, ক্ষোভ মনে রেখেই চাকরিতে যোগ দেবেন সবাই।

এছাড়া, আগের প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়ম মেনে ৩৪তম বিসিএস থেকে আসা ৮৯৮ জন নিয়োগ পাবেন গ্রামের বাড়ির কোনও স্কুলে। যারা এখন স্বামী অথবা স্ত্রীর সঙ্গে ঘর সংসার পেতেছেন অন্যখানে। এ কারণে অনেকেই চাকরি পরে ছেড়ে দিতে পারেন অথবা মনে চরম ক্ষোভ নিয়েই চাকরিতে যোগ দেবেন। এতে শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের লক্ষ্য অর্জন খানিকটা হলেও ব্যহত হবে।

এদিকে, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সাধারণ সম্পাদক এসএম ছায়িদ উল্লা বলেন, ‘২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির ঘোষণা করলেও পদমর্যাদা ও বেতন কোনটিই পাওয়া যায়নি। হাইস্কুলের শিক্ষকসহ দ্বিতীয় শ্রেণির অন্য সরকারি কর্মকর্তারা যে সুবিধা পান, আমাদের তা দেওয়া হয়নি। আজ অবধি গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে প্রধান শিক্ষকদের নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। যে কারণে আমাদের বেতনের জন্য থানা শিক্ষা অফিসারের জন্য বসে থাকতে হয়।’

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে বেতন পাচ্ছেন ১১ গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রধান শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ১২ গ্রেডে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১২ হাজার ৫০০ টাকা। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ১৪ গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ১৫ গ্রেডে। সেই হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ১০ হাজার ২০০ টাকা স্কেলে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চেয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন কম পাচ্ছেন মাত্র দুই হাজার ৩০০ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে মর্যাদা ও বেতন কোনটিই পাচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ থাক বা না থাক গ্রেড একটি। অথচ প্রাথমিকে দ্বিতীয় শ্রেণি করা হলেও গ্রেড দু’টি। ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়া প্রায় ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪ থেকে ১৫ হাজার বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ সহকারী শিক্ষকের মধ্য থেকে পদোন্নতি এবং ৩৫ শতাংশ নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে পূরণ করা হয়। এ অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করতে এবং উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করতে গত মার্চ মাসে পাঁচ হাজার ৭৯৭ জন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের চাহিদাপত্র পিএসসিকে দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নিয়োগের আগেই বর্তমানে কর্মরত প্রধান শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন নামেন। তাদের আন্দোলনের ফলে গত ১০ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top