গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার জন্য প্রথম কিলার হিসেবে ভাড়া করা হয়েছিল পেশায় কসাই সুবল চন্দ্র সরকারকে (৫৮)। সেই ছিল এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সমন্বয়কারী। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের কাছে সুবল জানিয়েছে, সে পারিবারিক সম্পর্কে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের দফতর সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত চন্দন কুমারের ভগ্নিপতি। চন্দনের মাধ্যমেই লিটন হত্যার পরিকল্পনাকারী সাবেক এমপি (অব.) ডা. কর্নেল আবদুল কাদের খাঁনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার।
এর আগে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সুবল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন লিটন হত্যায় গ্রেফতার কাদের খাঁন ও চার কিলার। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সুবলকে এক সপ্তাহ ধরে রংপুরের সেবা হাসপাতাল নামের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নজরদারিতে রাখে পুলিশ। গত ১ মার্চ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দেওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পিত্তথলীতে অস্ত্রোপচারের জন্য ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিল সে।
পুলিশ জানায়, ক্ষমতা নিয়ে এমপি লিটনের সঙ্গে কাদের খাঁনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এক বছর আগে লিটনকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা শুরু করেন কাদের খাঁন। হত্যাকাণ্ড সফল করতে পেশাদার একজন কিলার খুঁজতে থাকেন তিনি।
২০ বছর আগে ডাকাতি ও একটি হত্যা মামলার আসামি ছিল সুবল। তখন তার বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়। এসব ভেবে ভগ্নিপতির কথা কাদের খাঁনকে জানান চন্দন। পরে সুবলকে নিয়ে এমপি লিটনকে হত্যার ছক সাজান কাদের খাঁন। পরিকল্পনা হিসেবে সুবল নিজেই লিটনকে গুলি করতে রাজি হয়।
জানা গেছে, এমপি লিটন বামনডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে সন্ধ্যার পর থেকে নিয়মিত বসতেন। রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে অফিস থেকে একটু দূরে হেঁটে গিয়ে টিনের টয়লেটে ঢুকলেই তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়বে সুবল। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতের আঁধারে অবস্থান নেয় সে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পিত্তথলী রোগে ভুগতে থাকা সুবল হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে ওই যাত্রায় সফল হতে পারেনি।
সুবল সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ গ্রামের গৃধর চন্দ্রের ছেলে। তাকে দিয়ে কাজ না হওয়ায় এমপি লিটন হত্যার জন্য দ্বিতীয় পরিকল্পনায় মেহেদী, হান্নান, রানা ও শামীমকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে কিলার হিসেবে গড়ে তোলেন কাদের খাঁন। তখন থেকে এমপি লিটনের অবস্থান সম্পর্কে চন্দন কুমার ও কাদের খাঁনকে নিয়মিত খোঁজখবর দিতো সুবল। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটনকে গুলির করার আগে তার অবস্থান ও বাড়ির লোকজনের গতিবিধি সম্পর্কে কিলারদের জানিয়েছে সে। কারণ লিটনের বাড়িতে নিয়মিত খাসির মাংস সরবরাহ করতো সুবল।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান জানান, সুবলকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে লিটন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সুবল চন্দ্রের জড়িত থাকার অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে কাদের খাঁনের সঙ্গে আরও সহযোগিতাকারী হিসেকে কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারাও পুলিশের নজরদারিতে আছে। তবে ঘটনার পর কলকাতায় পালিয়েছেন চন্দন।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) রবিউল ইসলাম লিটন জানান, হত্যাকাণ্ডে সুবল চন্দ্র পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে সে-ই প্রথম এমপি লিটনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে গ্রেফতার হওয়া কিলিং মিশনের চার কিলার। সুবল শারীরিকভাবে অসুস্থ্ হওয়ায় তাকে রিমান্ড ও জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়নি। সে এক দুর্ধর্ষ অপরাধী। সুস্থ হলে তাকে অবশ্যই রিমান্ডে নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।