চান মিয়া, ছাতক (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের ছাতকে অবস্থিত বৃহত্তম সিমেন্ট উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে পরিবেশ দুষণের অভিযোগে বুধবার সকাল থেকে এবিষয়ে তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় সহকারি পরিচালক মাহবুব আলম এ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন। জানা যায়, ছাতকের ঠেঙ্গারাঁও গ্রামের নাগরিক পরিবেশও যুব সমাজকল্যাণ সংস্থা (রেজিঃ নং ৯২৩/২০১৬ইং) লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিঃ এর বিরুদ্ধে পরিবেশ দুষনের অভিযোগ এনে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। লাফার্জের মূল প্ল্যান্ট এলাকাসহ কনভেয়ার বেল্টের দু’পার্শ্বের বসত বাড়ি মারাত্মক শব্দ দুষণের কবলে এবং নির্গত ডাষ্টে টিনের চালসহ গাছ-পালার পাতা ধুসর রং ধারণ করেছে। ফলে এসব এলাকার ফলবতী গাছগুলোতে কোন ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছেনা। এভাবে সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ‘মাঠি’ স্থানীয় কৃষি জমি থেকে সংগ্রহ করায় লাফার্জের পশ্চিমের বিস্তীর্ণ কৃষি জমি এখন জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এসব পরিবেশ দুষণের বহুবিধ ঘটনার ক্ষতিকর দিকগুলোর প্রতিকার চেয়ে সংগঠনের একাধিক নেতৃবৃন্দ ২০১৪সালের ২০মে’ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকও পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে লিখিত আবেদন করেন। এতে ২০১৪সালের ১৯জুন ছাতক উপজেলা কৃষি অফিসার সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার সত্যতার ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্মারক নং ৬৪৫/০১, ০৩.০৭.২০১৪ইং মূলে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি প্রতিবেদন প্রেরন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে লাফার্জ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। জানা গেছে, এখানে এলাকার প্রায় শতকরা ৯০ভাগ মানুষ পরিবেশ দুষণ জনিত রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। শ্বাস কষ্ট, এলার্জি ও সাইনোসাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকাবাসী। এছাড়া কৃষি জমি হতে মাঠি সংগ্রহের ফলে ঠেঙ্গারগাঁও, নোয়ারাই, শারফিন নগর ও বাতিরকান্দি মৌজার প্রায় কয়েক শ’একর জমি ৪ফুট থেকে ৮ফুট পর্যন্ত খনন করায় অনাবাদি ও জলা ভূমিতে পরিণত হয়েছে। কনভেয়ার বেল্টের শব্দ দুষণের ফলে অনেক শিশু-কিশোর বধির হওয়ার উপক্রম। এভাবে ঠেঙ্গারগাঁও, নেয়ারাই, শারফিন নগর, জয়নগর, জোড়াপানি, মৌলা, বন্দরগাও, সিঙ্গেরকাছ, আঙ্গারুকা, কালাপসি, সামরগাঁও, বড় ময়দান, পূর্ব ঘিলাতলী, হাতিরভাঙ্গা, তেরাপুরসহ এলাকার লোকজন প্রচন্ড শব্দ দুষণে ভোগছেন। এব্যাপারে নাগরিক পরিবেশও যুব সমাজকল্যাণ সংস্থার সাধারন সম্পাক আইনুল আহমদ বলেন, পরিবেশ দুষনে অভিযোগে লাফার্জের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। এরফলে এলাকার জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির কবলে পড়েছে। ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন, কোনো ভাবেই আর পরিবেশ দুষনের সূযোগ দেয়া হবেনা। এখন থেকে কৃষি জমি থেকে লাফার্জের মাঠি কাটা বন্ধ করা হয়েছে। সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ও তদন্ত অফিসার মাহবুব আলম বলেন, তদন্তে পরিবেশ দুষনের প্রমান পাওয়া গেছে। এব্যাপারে আইনানূগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, একটি সমিতির অভিযোগে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।