সকল মেনু

সিআইএ’র সঙ্গে ট্রাম্প-এফবিআই বিরোধে শঙ্কায় মার্কিন নিরাপত্তা?

fdc00efff2744d115d2a1f3a4abd9fc5-584d6ab759a8bহটনিউজ২৪বিডি.কম : মার্কিন নির্বাচনে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে সাইবার হামলা চালিয়ে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ বিষয়ে দেশটির প্রভাবশালী দুটি গোয়েন্দা সংস্থা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা সিআইএ তাদের গোপন প্রতিবেদনে নির্বাচনে ট্রাম্পকে জেতাতে রাশিয়ার ভূমিকা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে অপর প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এ দাবির বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। আর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিআইএ-র এ দাবিকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি ট্রাম্প শিবির থেকে সিআইএর তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দুই শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার এমন বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে ওবামা প্রশাসন নির্বাচনে রুশ প্রভাব নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তেও আসতে পারছে না। এদিকে, দায়িত্ব গ্রহণের আগেই সবচেয়ে প্রভাবাশালী গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ট্রাম্পের এ বিরোধ দেশটির প্রশাসন ও জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

নির্বাচনি প্রচারণার সময় ওঠা সাইবার হামলার অভিযোগ আবারও মার্কিন রাজনীতিতে আলোড়ন তোলে শুক্রবার। ওই দিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে জেতানোর জন্য রাশিয়া সাইবার হামলা চালিয়েছিল বলে দাবি করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।

মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জড়িত যেসব ব্যক্তি উইকিলিকসের হাতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্যদের হাজার হাজার নথি তুলে দিয়েছিলেন, তাদেরও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা শনাক্ত করতে পেরেছে। ওই কর্মকর্তাদের দাবি, যেসব ব্যক্তি ওই কথিত হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত, তারা নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারির সমালোচনা সামনে এনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের জয়ের পথ সুগম করার কাজ করছিলেন।

পত্রিকাটি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে এ সম্পর্কিত সিআইএ-র একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিশিষ্ট সিনেটরদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তখন সিআইএ’র ওই কর্মকর্তা সিনেটরদের এ সম্পর্কে অবহিত করেন।

শনিবার ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, সিআইএ-র প্রতিবেদনের সঙ্গে এফবিআই কর্মকর্তারা একমত নন। পত্রিকাটির খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে ক্যাপিটলে এক গোপন বৈঠকে মার্কিন আইনপ্রণেতারা সিআইএ-র প্রতিবেদন সম্পর্কে এফবিআই-র মত জানতে চান।

হাউস ইন্টেলেজিন্স কমিটিতে ছিলেন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের প্রতিনধিরা। তারা এফবিআই-এর স্পষ্ট জবাব চেয়েছিলেন। এফবিআই কর্মকর্তা সিআইএ-র প্রতিবেদনকে অস্পষ্ট ও অনিশ্চিত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যার মধ্য দিয়ে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার অবস্থানগত পার্থক্য প্রকাশ হয়।

বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র পত্রিকাটিকে জানিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে এফবিআই ও সিআইএ-র চরিত্রগত পার্থক্যও স্পষ্ট হয়েছে। এফবিআই চায়, একেবারে স্পষ্ট প্রমাণ যাতে অভিযোগ প্রমাণে কোনও সন্দেহের অবকাশ না থাকে। আর সিআইএ আচরণ থেকেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চায়।

ওই কর্মকর্তার মতে, এফবিআই অপরাধ হিসেবে বিষয়টিকে চিহ্নিত করতে চায়। কিন্তু বিষয়টি আদালতে প্রমাণযোগ্য কিনা সে বিষয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সংশয় রয়ে গেছে। অন্যদিকে, সিআইএ কর্মকর্তারা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখায় তাদের কাছে আদালতে প্রমাণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়।

এদিকে, শনিবারই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে এফবিআই-র বিরুদ্ধে এ সম্পর্কিত আরেকটি বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাবের কথা জেনেও তা গোপন করেছিল এফবিআই। এ দাবি করেছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর হ্যারি রেইড। এক সাক্ষাৎকারে রেইড বলেন, ‘এফবিআই-র কাছে ওই তথ্য আগে থেকেই ছিল। কিন্তু রিপাবলিকানদের সহযোগী এফবিআই প্রধান জেমস কোমি নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের তথ্য প্রকাশ করেনি।’

নির্বাচনের কিছুদিন আগে হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল কেলেঙ্কারির বিষয়ে তদন্তের কথা বলে ডেমোক্র্যাটদের তোপের মুখে এমনিতেই আছে এফবিআই। আর এবার সিআইএ-র প্রতিবেদন মেনে নিতে অস্বীকৃতি ও রুশ প্রভাবের বিষয় জেনেও তা গোপন রাখার অভিযোগ ওঠার পর আরও ক্ষোভের মুখে পড়েছে সংস্থাটি।

এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে সিনেটর রেইড বলেছেন, ‘কোমির বিষয়ে আমি খুবই হতাশ। দলবাজির মাধ্যমে তিনি দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। আমি মনে করি তার বিষয়ে সিনেটের তদন্ত করা উচিত। গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা দরকার। কারণ এর সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। কোমি কতোটা দলবাজ, তা কেউ বুঝতে পেরেছিলেন, বলেও আমি মনে করি না।’

উল্লেখ্য, নির্বাচনের মাত্র ১১ দিন আগে হিলারির ইমেইল পুনঃতদন্তে এফবিআই-এর নেওয়া সিদ্ধান্তের পর থেকেই নির্বাচনি জরিপগুলোতে এগিয়ে থাকা হিলারির সঙ্গে কমতে থাকে ট্রাম্পের ব্যবধান।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, সিআইএ ও এফবিআই-র মতপার্থক্যের কারণে আইনপ্রণেতারা মার্কিন নির্বাচনের রাশিয়ার প্রভাবের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছেন না। এতে করে বিভক্ত হয়ে পড়ছে গোটা মার্কিন প্রশাসন ও দেশটির জনগণ। এর মধ্যে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পুরো তদন্তটি পুনরায় পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ক্ষমতা ছাড়ার আগেই তিনি যতটা সম্ভব এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। যদিও আইনপ্রণেতারা পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদনটি নিয়ে কংগ্রেসে শুনানির পক্ষে।

এদিকে, শুক্রবার সিআইএ-র গোপন প্রতিবেদনের বিষয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ট্রাম্প শিবির গোয়েন্দা সংস্থাটিকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেছে। ট্রাম্প শিবিরের দাবি, এই সিআইএ-ই দাবি করেছিল ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে মানববিধ্বংসী মরণাস্ত্র রয়েছে। যা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ফলে ট্রাম্পকে জেতাতে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাবের বিষয়েও সিআইএ ভুল করছে। সিআইএ-র এ অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ফলে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ট্রাম্পের সঙ্গে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থাটির বিরোধ প্রকাশ্যে আসলো। এতে করে ট্রাম্প প্রশাসন ও তার অধীনে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশেষ করে সিআইএ যখন হোয়াইট হাউসে বিশেষ উপদেষ্টার ভূমিকায় তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে সংস্থাটির এমন অভিযোগ ও ট্রাম্পের তা প্রত্যাখ্যান যুক্তরাষ্ট্রের রুশনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প শিবিরের দুই কর্মকর্তা।

২০০৭ সালে অবসর নেওয়ার আগে দুই দশক গোয়েন্দা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সিআইএ-র সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গ্লেন কার্লে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নির্বাহী সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হতে যাচ্ছে এর মধ্য দিয়ে।

কেউ কেউ এ ঘটনাকে ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের ইরাক অভিযানের সময় ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির সঙ্গে সিআইএর মতবিরোধের সঙ্গে তুলনা করছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে সিআইএ-র বিরোধের ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত নিক্সনের সঙ্গেও সিআইএ-র সম্পর্ক জটিল ছিলো। নিক্সন মনে করতেন, সিআইএ অনেক বেশি ক্ষমতাশালী ও স্বাধীন। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের প্রথম মেয়াদের সিআইএ পরিচালক আর. জেমস উলসেই হোয়াইট হাউসকে অপছন্দ করতেন বলে খুব কমই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসতেন।

লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প সংস্থাটির অভিযোগ বারবার প্রত্যাখ্যান করায় সিআইএ-র কর্মকর্তারাও ট্রাম্পের ওপর বেশ নাখোশ।

এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফ্লিনকে নির্বাচিত করাতেও সিআইএ-র কর্মকর্তাদের একাংশের মনে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ ওবামা প্রশাসন ফ্লিনকে ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি থেকে বরখাস্ত করেছিল।

সিআইএ-র কয়েকজন কর্মকর্তা মনে করেন, ফ্লিনের কাজের ধরন ও চরিত্রের কারণে ট্রাম্পের নির্বাচিত সিআইএ পরিচালক মাইক পম্পিও টানাপড়েনে পড়তে পারেন। হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির সদস্য হিসেবে সব সময় সিআইএ-র সমালোচনা করেছেন তিনি। ফলে তিনি এমন একটি সংস্থার দায়িত্ব নিচ্ছেন যার সমালোচনা তিনি করেছেন প্রকাশ্যে। এমনটা মনে ট্রাম্পের অন্তবর্তী টিমের একজন উপদেষ্টা, যিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মতে, পম্পিওকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে রাশিয়া ও অপর কিছু ইস্যুতে। সিআইএ কর্মকর্তারা হয়ত চাইবেন তাদের নীতিতে চলুন পম্পিও কিন্তু ট্রাম্প হয়ত সেসব শুনতে চাইবেন না। সূত্র: গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট, লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top