সকল মেনু

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন: অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়েছে আ.লীগে

298dea4e4313a4d0ae6aa7b1b115e94d-575cebb21f58eহটনিউজ২৪বিডি.কম : স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব-কোন্দলের মাত্রা বেড়েছে। এর আগে এসব নির্বাচন ছিল নির্দলীয়। ফলে দলীয় কোন্দল থাকলেও তা তেমন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেখা যায়নি। কিন্তু দলীয় প্রতীক ব্যবহার এবং দল কর্তৃক প্রার্থী মনোনয়নের আইন প্রণয়ন হওয়ায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ক্ষেত্রে তা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দলটির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতারা এ কথা স্বীকার করেছেন।

জানা গেছে, তৃণমূলে কোন্দলের পেছনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে দায়ী করে বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবেদনও দিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনা ও গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লীর ঘটনায় দলীয় কোন্দলের তথ্য উঠে এসেছে। নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধাণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের হটনিউজ২৪বিডিকে বলেন, ‘দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব-কোন্দল মূলত নেতৃত্বের প্রতিহিংসায় হয়ে থাকে। থাকে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ায় এ প্রতিহিংসা ও আধিপত্যবাদের রাজনীতি আরও বেড়েছে। বেড়েছে ল্যাং মারামারির ঘটনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশাল একটি সংগঠন। এখানে নির্বাচনকে ঘিরে একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেবে একজনকে। তাই একাধিক প্রার্থী যোগ্য হয়ে উঠুক তা চান না অনেকেই। ফলে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠেন দলের একজন নেতা আরেকজনের উপর।’

তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল অনেক নেতা জানান, স্থানীয় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় তৃণমূলে কোন্দলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলেও তারা এসব নির্বাচন নির্দলীয় রাখার পক্ষে নন। ওই নেতাদের মতে, কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে সর্বস্তরে দলীয় জনপ্রতিনিধি দরকার। নির্বাচনগুলোতে দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে প্রার্থীদের বাছাই করতে হবে বলেও তারা মনে করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ হটনিউজ২৪বিডিকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ায় দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। তবে কোথাও সুস্থ্য আর কোথাও অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা চলছে দলের অভ্যন্তরে।’ তিনি আরও জানান, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে এসব অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা হটনিউজ২৪বিডিকে বলেন, ‘দলের অভ্যন্তরের দ্বন্দ্বের একমাত্র কারণ নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা, ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয়ভাবে হওয়ার ফলে এসব বেশি তৈরি হয়েছে।’ অবশ্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি ‘সিস্টেমের মধ্যে চলে আসলে’, এক সময়ে এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পেছনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কারণ হলেও এ নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ একেবারে তৃণমূলে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে হলে দলীয় ভাবেই এসব নির্বাচন হওয়া জরুরি।’

গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ায় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব রাজনীতিতে ঝেঁকে বসেছে। তার মানে এই নয় যে, স্থানীয় নির্বাচনগুলো নির্দলীয়ভাবে হবে। দলীয়ভাবেই হবে এসব নির্বাচন, কিন্তু আরও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে বন্ধ হয়ে আসবে এগুলো।’

দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা বিশাল সংগঠন। এখানে ঝামেলাগুলোও বড় বড় হয়। তার উপর দল এখন ক্ষমতায়। দলাদলি বেশি হবেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ায় যেমন উপকারিতা আছে, অপকারিতাও রয়েছে। যেমন দলাদলি বেশি হওয়া অপকারিতার মধ্যে পড়ে।’

জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলীও বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলগুলো মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনগুলো হওয়ায়। এর ফলে প্রতিহিংসার রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের রাজনীতি অধিকমাত্রায় বেড়েছে।’

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারক পর্যায় ও তৃণমূলের অনেক নেতার মতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় ছিল বলেই এলাকার জনগণের কাছে এসব নির্বাচনে প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা প্রাধান্য পেত। তাই স্থানীয় জনপ্রতিধিদের কেউ সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তা অর্জনের প্রতি তাদের প্রতিযোগিতা ও প্রচেষ্টা থাকতো বেশি। এ কারণে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক দলের নেতারা একে অপরের সঙ্গে দলাদলির চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতেন কিভাবে স্থানীয় জনগণের আস্থা অর্জন করা যায় সেটা নিয়ে। এখন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার আইন করায় তৃণমূলের নেতারা স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার চেয়ে শীর্ষ নেতাদের আস্থা অর্জনে অধিক ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করছেন ব্যক্তির জনপ্রিয়তার চেয়ে দলীয় প্রতীকই তাদের জয় এনে দেবে। এজন্য জনপ্রিয়তা অর্জনের চেয়ে প্রতীক পাওয়ার লড়াইয়ে বেশি লিপ্ত হচ্ছেন তারা। এর অংশ হিসেবেই, যাতে কেউ দলের ভেতরে সমকক্ষ হতে না পারে, সেজন্য একজন নেতা আরেকজনকে ঘায়েল করার জন্যে হেন কোনও কাজ নেই যা তারা করেন না। এর ফলে একক আধিপত্য নিশ্চিত করতে দলের লোকের সঙ্গে দলের লোকের বাকবিতণ্ডা লেগেই থাকে।

গত বছরের ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই সময় এক যোগে প্রায় আড়াইশ’ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৬ ধাপে দলীয়ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ দুটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে কোন্দলের বিস্তর খবর চোখে পড়েছে। এসব কোন্দল-দলাদলির ঘটনা শেষ পর্যন্ত রূপ নিয়েছে হানাহানি ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। দুটি নির্বাচনে প্রায় দেড় শতাধিক প্রাণহানি ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হন। হতাহতের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটে বলে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। ওই সময় নির্বাচন কমিশনও দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হতাহত বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, ‘তৃণমূলের নেতাদের কাছে এখন সংগঠনের আলোচনার চেয়ে বেশি থাকে একজনের নামে আরেকজনের অভিযোগ। ভাই, অমুক এটা করেছে, তমুক ওটা করেছে, সংগঠন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব অভিযোগই বেশি শুনতে হয়।’

দলের কেন্দ্র ও তৃণমূল সূত্রগুলো বলছে, ‘দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় কিছু উপকার যেমন হয়েছে, তেমনি কিছু বিরূপ প্রভাবও পড়েছে। তবে একটি প্রক্রিয়ায় চলে গেলে আস্তে আস্তে তা কমে যাবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top