সকল মেনু

চিকিৎসা মেলে, বিচার মেলে না!

9008f4cad60aa8ba7f132341383418af-5816ae3f910deহটনিউজ২৪বিডি.কম : ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) বড় ‘ক্রাইসিস’ হিসেবে বাদী-বিবাদীর সমঝোতার মানসিকতাকে চিহ্নিত করছেন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতরা। তবে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও সামাজিক কটূক্তিও সমঝোতায় উৎসাহিত করে বলে মত তাদের। তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে ওসিসি থেকে দ্রুত চিকিৎসা ও আইনি সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইনি সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। আর বাদী-বিবাদীর সামাজিক ‘মুখরক্ষার’ কৌশল  হিসেবে সমঝোতা করে ফেলায় এখানে আসা মামলাগুলোর মাত্র ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশের রায় হয়। আর সাজা পাওয়ার হার দশমিক ৪৫ শতাংশ।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সেবায় ২০১১ সালে সরকার দেশব্যাপী ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল চালু করে। ৪০টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেল আছে। এসব সেল চিকিৎসা, চিকিৎসা-পরবর্তী ব্যবস্থা, যেমন আইনি পরামর্শ, মামলা, কাউন্সিলিং, আশ্রয় সুবিধা, পুনর্বাসন সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে দিক-নির্দেশনা দেওয়ার কথা। তবে কাগজে-কলমে সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও চিকিৎসা নেওয়ার পর মামলা পরিচালনায় আগ্রহ খুব কম থাকে বলে দাবি এখানকার কর্মকর্তাদের।

গত বছরের মে মাসে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাদের  অধীনে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম’এর আওতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল শের-ই-বাংলা, খুলনা, সিলেট এম এ জি ওসমানী, রংপুর ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ বছরে ২২ হাজার ৩৮৬ জন নারী ধর্ষণসহ নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসা নেন। বিচার প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে, এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে পাঁচ হাজার তিনটি। রায় হয়েছে ৮২০টি, শাস্তি হয়েছে ১০১ জনের। অর্থাৎ, রায় ঘোষণার হার ৩ দশমিক ৬৬ এবং সাজা পাওয়ার হার দশমিক ৪৫ শতাংশ।

ওসিসিতে ২০১৩ থেকে ১৬ পর্যন্ত সেবা দেওয়ার তালিকাওসিসিতে ২০১৩ থেকে ১৬ পর্যন্ত সেবা দেওয়ার তালিকাকিন্তু ওসিসিতে রোগীর হার এবং বিভৎসতার মাত্রা, দুইই বেড়েছে বলে জানিয়েছেন এর সমন্বয়ক ড. বিলকিস। রেজিস্ট্রি খাতা অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়ে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৫৩২ জন। কিন্তু মামলা করেছেন ৬৩০ জন। গত বছর ৬১৩ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিলো ৫৫৫। আর এ বছর আগস্ট পযন্তই এ সংখ্যা ৫৭০ ছাড়িয়েছে। নির্যাতনের বীভৎসতার মাত্রাও বেড়েছে। ড. বিলকিস বলছেন, ‘এ বছর ধর্ষণের শিকার মারাত্মক আহত বেশকিছু কেস ক্রাইসিস সেন্টারে এসেছে যা আগে কখনও দেখতে হয়নি। এ বীভৎসতা উদ্বেগের।’

দীর্ঘসূত্রিতার উদাহরণ দিতে গিয়ে ড. বিলকিস বলেন, ২০০৯ সালে গৃহকর্মী নির্যাতনের একটা মামলায় সাক্ষ্য দিতে তাকে চলতি মাসে (সাত বছর পর) আদালত থেকে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের নতুন করে এই বিচারব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। এই এত বছর মামলা নিয়ে বাদী-বিবাদীর আসলেই কোনও আগ্রহ থাকে কিনা, সে প্রশ্ন তোলা জরুরি। পাশাপাশি এ প্রশ্নও তুলতে হবে, সব সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকার পরও কেন বিচারে এত বছর লাগবে?’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওসিসিতে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন, তাদের বড় অংশই দরিদ্র পরিবারের। ধর্ষণের শিকার শিশুর বয়স বছর দশেকের নিচে হলে পরিবারগুলো টাকা দিয়ে মীমাংসা করে ফেলে। দশ বছরের বেশি হলে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। ধর্ষণের শিকার হয়ে ওসিসিতে আসা নারী-শিশুকে আইনগত সহযোগিতা দেয় বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি। তাদের নিয়োগকৃত আইনজীবীরা এসব মামলা পরিচালনা করেন। কিন্তু সমঝোতার ক্ষেত্রে তাদের কিছু করার থাকে না উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী বলেন, ‘আমরা এখন  ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ের ক্ষেত্রে দেনমোহরের অঙ্কটা যেন বড় হয় সেদিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করি। আর এসব ক্ষেত্রে সমঝোতা করে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিয়ে হলেও তা টেকে না। ফলে দেনমোহরের টাকা আদায় করতে পারলে মেয়েটির নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’

বিচার না হওয়া এবং সমঝোতা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনওভাবে অপরাধীদের মনে এই আস্থা এসে গেছে যে, যাই হোক তারা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসতে পারবে। ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সে এই ভরসা পায় যে, মামলা হলেও সে রক্ষা পেতে পারে। ফলে, রাকীব কিংবা রাজন হত্যার বিচার দ্রুত হলেও এধরনের অপরাধ ঘটতেই থাকে। আমাদের সার্বিক রাজনীতিতে বদল আসতে হবে, নইলে এই অপরাধ থামানো যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমঝোতা করতে আইনি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কোনও চাপ দেয় কিনা, তাও মনিটরিং করা দরকার।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top