সকল মেনু

বেনাপোলে ভয়াবহ যানজট: পাসপোর্ট যাত্রীদের মারাত্মক দুর্ভোগ

 unnamedআব্দুল ওয়াহাব মুকুল, যশোর প্রতিনিধি : সরকার পরোক্ষ ও প্রত্যাক্ষ ভাবে বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করলেও বন্দরের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নের দিকে তেমন কোন খেয়াল নাই। ফলে একদিকে যেমন যানজট ও পন্য খালাশ ব্যবস্তা বিলম্বিত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশী-বিদেশী পাসপোর্ট যাত্রীরা পড়ছে মারাত্মক দুর্ভোগে। বাড়ছে দুঘর্টনা, মরছে মানুষ।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে দেখা ও জানা গেছে, বেনাপোল বন্দরের জায়গা সংকট থাকায় আমদানি-রফতানি পন্যবাহী ট্রাক লোর্ড-আনলোর্ডের জন্য বন্দরের মূল ও প্রধান মহাসড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। আমদানি পন্য নিয়ে ভারত থেকে আসা ট্রাক এবং রফতানি পন্য নিয়ে ভারতগামী ট্রাকসমুহ বিশেষকরে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার বেনাপোল চেকপোষ্ট থেকে বাজার পর্যান্ত যানজটে পরিপুর্ন আকার ধারন করে।
এতে করে আন্তর্জাতি এ চেকপোষ্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ আসা যাওয়াকারী দেশী-বিদেশী পাসপোর্ট যাত্রী এবং সীমান্ত দেখতে আসা পর্যটকরা পড়ে বিপাকে। বেনাপোল বাজার থেকে চেকপোষ্ট এর দুরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার। কিন্তু যানজটের কারনে স্থানীয় অটো ভ্যান রিক্সা যাত্রীদের উঠিয়ে সময় মত পৌছে দিতে পারে না। কোন কোন সময় ২ /৩ ঘন্টা যাত্রীদের এ সমস্থ পরিবহনে বসে থাকতে হয়। তারা ল্যাগেজ এর কারনে হেটেও যাওয়া-আস করতে পারে না।
অপরদিকে বন্দর এলাকায় যানজট থাকায় সিমান্ত এলাকার অসংখ্য গ্রামের সাধারন মানুষসহ গ্রামের কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে মোকামে পৌঁছাতে ও উৎপান কাজে ব্যবহৃত পন্য সামগ্রী নিয়ে বাড়ী ফিরতে চরম দুর্ভগের শিকার হয়। বিশেষ করে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা চরম ঝুকি নিয়ে এ পথ পাড়ি দিচ্ছে। ছোট খাট দুর্ঘটনা অহরহ লেগেই থাকে। মারাত্মক আহতসহ মৃত্যু পর্যান্ত হয়ে থাকে এ যানজটের কারনে। ভারত এবং বাংলাদেশের ট্রাক মিলে এ পর্যান্ত প্রায় অর্ধশতাধিক ছোট খাট দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং ৩ জন মারা গেছে। সম্প্রতি একটি শিশু ও মারা গেছে ভারতীয় ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে। অনেক সময় মুমুর্ষ রোগিকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে পড়তে হয় বড় সমস্যায়। কারন এম্বুলেন্সসহ ছোট খাট কোন পরিবহন এই ভয়াবহ যানজট পেরিয়ে প্রবেশ করতে পারে না। তেমনি ভারতে চিকিৎসা করতে যাওয়া রোগিরা পড়ে সব থেকে বেশী অসুবিধায়।
সম্প্রতি যানজট মুক্ত করার জন্য বিকল্প সড়ক উদ্বোধন করেছে ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মিলে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। বন্দরে জায়গা সংকটের কারনে আমাদনি পন্য নিয়ে বন্দর অভ্যান্তরে ট্রাকের জায়গা না হওয়ায় এবং ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় এ যান জটের সৃষ্টি হয়। তবে ঐ পথ ব্যবহারকারী, সি এন্ড এফ এজেন্ট মালিক-কর্মচারী ও সচেতন পরিবহন বাস-ট্রাক চালকরা বলছে, সুষ্ঠ ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় এই যানজট প্রকট আকার ধারন করেছে।
বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর পরোক্ষ ও প্রত্যাক্ষভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করলেও বন্দর উন্নয়ন টার্মিনাল সহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে নজর না থাকায় নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে দেশের এ সর্ব বৃহৎ স্থল বন্দর।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টের সভাপতি আলহাজ্ব মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, বেনাপোল দিয়ে ভারতের সাথে যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভাল থাকায় ব্যাবসায়িরা এ পথ দিয়ে আমদানি রফতানি করে থাকে সিংহ ভাগ। বিভিন্ন সময় সংশি¬ষ্ঠ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, আমলা ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নেয়া কর্মকর্তারা এখানে আসেন, এই সমস্যার কথা শোনেন, আশ্বাশ দেন সমাধানের। কিন্তু সরকারের উদাসিনতার কারনে মারাত্মক এ সমস্যাটি সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।
প্রতিদিন এ পথে ভারত থেকে ৩৫০-৪০০ ছোট-বড় ট্রাক আমাদনি পন্য নিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করে আর বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ১৫০-২০০ রফতানি বাহি পরিবহন পন্য নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে।
বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারি ব্যাবসায়িরা জানান, যে পরিমান বেনাপোল বন্দর দিয়ে রাজস্ব আয় হয় সেই রাজস্ব আয় থেকে ৩০% বন্দর উন্নয়নের জন্য খরচ করার বরাদ্দ থাকলেও তা খরছ হয় না। বেনাপোল বন্দর পরিচালক নিতাই রায় সেন জানান, আমারা বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো এবং যানজট নিরসনের জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। আশারাখি এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যদিও এই একই রকম আশ্বাস গত এক যুগ ধরে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা শুনে আসছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top