সকল মেনু

‘এখন জসিমের আত্মা শান্তি পাবে’

হাসিনা খাতুন
সন্দ্বীপের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন হত্যাসহ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জসিমের ফুফাতো বোন হাসিনা খাতুন।

তার বাসা থেকেই মুক্তিযুদ্ধে বের হয়ে ফিরে আসেননি জসিম। মীর কাসেম আলীর টর্চার সেল ডালিম হোটেলে নিয়ে তাকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ ফেলে দেয়া হয় কর্ণফুলী নদীতে।

সেই থেকে ভাইকে খুঁজে ফিরছেন হাসিনা খাতুন। বুকের ওপর যেন জগদ্দল পাথর চেপে বসেছিল তার। এখন তার বয়স ৭২ বছর।

রায় কার্যকর হওয়ার পর হাসিনা খাতুন বলেন, মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় পর ভাই হত্যার বিচার পেলাম। এ রায় পেয়ে আমি খুশি। এখন জসিমের আত্মা শান্তি পাবে।

হাসিনা খাতুন আরও বলেন, আমিও জীবন সায়াহ্নে। একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভাই হারানোর পর থেকে যে যন্ত্রণা বয়ে বেড়িয়েছি, মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে সেই যন্ত্রণার অবসান ঘটেছে। এখন মরেও শান্তি পাব। মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জাতিও কলংকমুক্ত হল।

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মাইটভাঙা ইউনিয়নে ছিল জসিমদের বাড়ি। তার বাবার নাম মৌলভী মোহাম্মদ সৈয়দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুনের ছোট ভাই জসিম উদ্দিন।

ড. রাজীব হুমায়ুন অসুস্থ, কথা বলতে পারেন না। চার ভাইয়ের মধ্যে জসিম ছিলেন সবার ছোট। তার আরেক ভাই ডা. কামরুল ইসলাম পনির। এক ভাই মারা গেছেন। জসিম উদ্দিনের ভাইবোনেরা সবাই চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।

জসিম উদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া এবং ডালিম হোটেলে নির্যাতনে তার মৃত্যুর ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষী তার ফুফাতো বোন হাসিনা খাতুন। তিনি মীর কাসেমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।

জসিম উদ্দিন কীভাবে তার বাসা থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বের হন, বদর বাহিনীর হাতে আটক হয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতনে কীভাবে তার মৃত্যু হয় ট্রাইব্যুনালে সেই সাক্ষ্য দেন হাসিনা খাতুন।

একাধিক অভিযোগ থাকলেও জসিম হত্যার অভিযোগটি ট্রাইব্যুনালে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ আদালত মীর কাসেমের ফাঁসির রায় বহাল রাখেন।

হাসিনা খাতুন জানান, ১৯৭১ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে ঈদের কয়েক দিন পরে তার নগরীর বাসা থেকে কোরমা-পোলাও খেয়ে দেশ স্বাধীন করার প্রত্যয় নিয়ে বের হয়ে পড়েন জসিম উদ্দিন। বদর বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর ডালিম হোটেলে মীর কাসেম আলী ও বদর বাহিনীর নির্যাতনে জসিমের মৃত্যু হয় এমনটি জানতে পারেন প্রত্যক্ষদর্শী ও ডালিম হোটেলে নির্যাতিত একাধিক মুক্তিযোদ্ধার কাছে।

৭২ বছর বয়সী হাসিনা খাতুন তখন করতেন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি। বর্তমানে বসবাস করেন নগরীর ডবলুমরিং থানার পাঠানটুলির রহমান মঞ্জিলে। জসিমের মায়ের দুধ পান করেছিলেন বলে হাসিনা খাতুন জসিমকে দুধভাই হিসেবেও জানতেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top