সকল মেনু

শাহজাদপুরে ফের অ্যানথ্র্যাক্স, ২২ রোগী শনাক্ত

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ফের গবাদি পশুর রোগ অ্যানথ্র্যাক্স মানবদেহে ছড়িয়ে পড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা শাহজাদপুর উপজেলার চরকৈজুরী ও গোপালপুর গ্রামের ২২ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে শনাক্ত করেছেন। এদের মধ্যে ছয়জনকে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর বাকিদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, গত ৮ আগস্ট চরকৈজুরি গ্রামের দেলবার প্রামাণিকের একটি গরু অসুস্থ গরু জবাই করে কম দামে চরকৈজুরী ও গোপালপুর গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার ভাগাভাগি করে নেন। এই মাংস কাটাকাটি ও নাড়াচাড়ার সঙ্গে জড়িতদের প্রথমে হাত-পা-চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো ক্ষত ও ঘায়ের মতো দেখা দেয়। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ওষুধ খাবার পর ভালো না হওয়ায় তিনজন সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে যান। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকরা এটিকে অ্যানথ্যাক্স বলে শনাক্ত করেন। শাহজাদপুর উপজেলা কমপেক্সের মেডিকেল টিম ওই গ্রামে ছুটে যান এবং কয়েকদিনে ২২ জন রোগী শনাক্ত করেন।

এ ছাড়া একই গ্রামের আরো একটি ছাগল জবাই করে ১০টি পরিবার ভাগাভাগি করে নেন। এঁদের মধ্যে প্রায় পাঁচজন অ্যানথ্র্যাক্স রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে, একই বছরে তিন দফায় গবাদি পশুর রোগ মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে, প্রাণিসম্পদ বিভাগ সঠিক সময় গবাদি পশুকে ভ্যাকসিনের আওতায় না আনায় বারবার এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে।

অ্যানথ্র্যাক্স আক্রান্ত মায়া খাতুন, ফরিদা খাতুন, ডলি খাতুন, লাল চান ও তাঁত শ্রমিক তারামিয়া জানান, অসুস্থ গরুর মাংস কাটাকাটি করার পর থেকে তাদের হাতে ফোসকার মতো পড়ে। পরে তা ঘায়ে রূপান্তর নেয়। তিনদিন স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধ খেয়ে ভালো হয়নি। তাদের অভিযোগ, গরুর মালিক তাদের ভুল বুঝিয়ে মাংসগুলো বিক্রি করেছেন। তা ছাড়া গরিব মানুষ অল্প দাম পেয়ে মাংস কিনেছিলাম। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে।

গরুর মালিক দেলবার হোসেন জানান, হঠাৎ গরুটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্থানীয়দের পরামর্শে এটি জবাই করা হয়। কিন্তু এ রকম ঘটবে জানলে তিনি গরুটি জবাই করতেন না। তিনি আরো জানান, গরুটিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ জানান, উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ গবাদি পশু রয়েছে। এর বিপরীতে মাত্র দুজন প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে। তিনি বলেন, ‘তার পরও আমরা সব গবাদি পশু ভ্যাকসিনের আওতায় আনার চেষ্টা করেছি। সংবাদ পাওয়ার পর ওই গ্রামে গিয়ে সব গবাদি পশুকেই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।’ যে গরুটির মাংস কাটাকাটির জন্য অ্যানথ্র্যাক্স ছড়িয়ে পড়েছে সেই গরুটি গর্ভবতী হওয়ায় ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেছেন। অ্যানথ্র্যাক্স সম্পর্কে মানুষের জনসচেতনতার অভাবকে দায়ী করে তিনি আরো জানান, ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকায় জনসচেতনতার জন্য মাইকিংয়ের পাশাপাশি ও পোস্টার বিলি করা হচ্ছে।

শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাফরুল হোসেন জানান, অ্যানথ্র্যাক্স নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। ওষুধ খেলেই ভালো হয়। এ পর্যন্ত ২২ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনের অবস্থা একটু খারাপ। সে জন্য তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অ্যানথ্র্যাক্স সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো না হলে এবং সঠিক সময়ে গবাদি পশুকে ভ্যাকসিন করা হলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, যেহেতু অনেকেই গরুটির মাংস কাটাকাটির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাই এ রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। সে জন্য ওই এলাকায় মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top