সকল মেনু

নাচে-গানে ভরপুর যাত্রাপালা

 

যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’র প্রথম দৃশ্য। ছবি: সাজিদ হোসেনচারপাশে দর্শক। মাঝে মঞ্চ। মঞ্চের দুই পাশে বসেছে যন্ত্রশিল্পীরা। একসময় শোনা গেল নানা বাদ্যযন্ত্রের সুর। বাঁশি, ঢোল, করতালের আওয়াজের সঙ্গে শিল্পীর উচ্চকণ্ঠের মিলনায়তন কাঁপানো সংলাপে যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ খেলে যায় দর্শক-শ্রোতাদের মনে। মুহুর্মুহু করতালির মিলনায়তনের প্রতিটি কোনায় প্রতিধ্বনিত হয় যাত্রার প্রতি দর্শকদের ভালো লাগা ও ভালোবাসার কথা। দর্শকের উল্লাসে কুশীলবেরাও যেন নতুন করে প্রাণ পায় এবং অনুপ্রাণিত হয় অভিনয়ে।
বাংলার হাজার বছরের লোকসংস্কৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য যাত্রাকে এখনো হৃদয়ে লালন করছেন এ দেশের যাত্রাপ্রিয় বাঙালিরা। শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটারে মিলনায়তনে দেশ অপেরার ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’ উদ্বোধনী প্রদর্শনী প্রমাণ করে দেয় যাত্রার প্রতি এ দেশের মানুষের আবেদন, আকর্ষণ ও আগ্রহ এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে এই যাত্রাপালাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়। গবেষক ও লেখক আমিনুর রহমান সুলতান রচিত এ যাত্রাপালাটির নির্দেশনায় ছিলেন মিলন কান্তি দে।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী। রাজনীতিক ও সাহিত্যিক হায়দার আকবর খান রনোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আক্তারুজ্জামান।‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’ যাত্রাপালায় ছিল নাচ-গানের পরিবেশনাও।পুরোদস্তুর যাত্রার স্বাদ পরিবেশনায়। নাচে, গানে ভরপুর ছিল যাত্রাপালাটি। শুরুতে গানের সুরে সুরে মঞ্চে আসে পালার সব শিল্পী। তারপর শুরু হয় মূলপালা।
পালাটির নির্দেশক মিলন কান্তি জানান, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক বহু ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে আছে বাংলাদেশের এক নদী বুড়িগঙ্গা। নদীর বাঁকে বাঁকে রাজধানী ঢাকার বেড়ে ওঠা এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমলে নদীপথে যাতায়াতে অনেক বেদনাদায়ক ঘটনাও ঘটেছে-এসব নিয়ে তৈরি হয়েছে যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’। বিশেষ করে পলাশীর বিয়োগান্ত পরিণতির পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী, ফকির ও মসলিন-তাঁত সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ একাধিক চরিত্রাঙ্কনে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় এ পালায় তুলে ধরা হয়েছে।
‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’র বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এম আলীম, মো. রফিক, মঞ্জুরুল আলম, এম সিরাজ, শাহ্ মোহাম্মদ আলী, অলিউল্লাহ অলি, সুদর্শন চক্রবর্তী, রফিকুল ইসলাম, আবুল হাসেম, এম হাসেম, এম আলম, সংকর সরকার, রহিম, মোজাম্মেল হক, ইদ্রিস, আলমার্স, লুত্ফুন নাহার, রিক্তা সুলতানা, মনিমালা, আরিশা জামান, আলতাফ হোসেন, মিলন কান্তি দে প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে দেশ অপেরা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে নিবন্ধিত হয়। ‘গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা’, ‘সতী করুণাময়ী’, ‘দাতা হাতেম তা’য়ী’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘বর্গি এল দেশে’, ‘বাংলার মহানায়ক’ প্রভৃতি যাত্রাপালার সফল মঞ্চায়নের পর এবার ‘মাস্টারদা সূর্যসেন’ ও ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’ নামে নতুন দুটি পালা নিয়ে কাজ করেছে দেশ অপেরা। ‘মাস্টারদা সূর্যসেন’ পালাটি লিখেছেন ব্রজেন্দ্র কুমার দে এবং পুনর্বিন্যাস করেছেন মিলন কান্তি দে।‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’ যাত্রাপালাটি মূলত ইতিহাস নির্ভর। ছবি: সাজিদ হোসেন

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top