সকল মেনু

আজ ঐতিহাসিক ২৩ জুন পলাশী দিবস

1496_polasiনিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম: গ্রামটিতে ছিলো অনেক পলাশ গাছ। সে কারনে গায়েঁর নাম দেয়া হয়েছিলো পলাশী। মুর্শিদাবাদ থেকে পনের মাইল দূরে এই গ্রামটিতে যুদ্ধ হয়েছিলো নবাব সিরাজউদদ্দৌলার সঙ্গে ইংরেজদের। পরাজিত হয়েছিলো নবাব সিরাজ । ভাগীরথি নদীতে ডুবেছিলো বাংলার স্বাধীনতা। ইতিহাসবিদরা বলছেন এটা কোন যুদ্ধ ছিলো না, এটা ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতার মহড়া। নবাব সিরাজ ইংরেজদের কাছে যুদ্ধ হারেননি,তিনি পরাজিত হয়েছিলেন বিশ্বাস ঘাতকদের কাছে। ১৭৫৭ সালের এই দিনের পর থেকে বাংলার ঘরে ঘরে মীর জাফর,ঘসেটি বেগম,ইয়ার লতিফ ,রায় দুর্লভ,জগৎ শেঠ,মীর মিরন,মোহাম্মাদী বেগ সহ ষড়যন্ত্রকারী নাম গুলো উচ্চারিত হয় ঘেন্না ভরে। অন্যদিকে নবাব সিরাজ আছেন মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে।

যুদ্ধ সম্পর্কে মৃণাল চক্রবর্তী তাঁর সিরাজউদ্দৌলা গ্রন্থে লিখেছেন, “২৩ শে জুন বৃহস্পতিবার, নবাবের বিশাল বাহিনী ইংরেজদের আক্রমণের জন্যে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে শুরু করে। সকাল আটটার সময় উভয় পক্ষই যুদ্ধের জন্য সর্বতোভাবে প্রস্তুত হয়। শ্বেতকায় সৈন্যই এই যুদ্ধ প্রথম আরম্ভ করে এবং শ্বেতকায় সৈন্যের দেহ থেকেই এই যুদ্ধে প্রথম রক্তপাত হয়। ফরাসী সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক মঁশিয়ে দ্য সিঁফ্রে ইংরেজ সৈন্যবাহিনী লক্ষ্য করে মাত্র দুশ গজ দূর থেকে কামান দাগাতে আরম্ভ করে এবং ফরাসীদের প্রথম আক্রমণেই একজন ইংরেজ গোলন্দাজ সৈন্য নিহত হয় এবং বেঙ্গল ইউরোপীয়ান রেজিমেন্টের একজন সৈন্যও আহত হয়। যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার এই সংকেত পেয়েই যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত সমস্ত সৈন্যবাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং নবাব পক্ষের কামানগুলোও অনবরত গোলা বর্ষণ করতে শুরু করে। কিন্তু বেশি সংখ্যক গোলাগুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় ইংরেজ পক্ষের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ছিল অতিনগণ্য। নবাব পক্ষের আক্রমণের প্রত্যুত্তর দিতে ইংরেজ পক্ষ মুহূর্ত মাত্র অপেক্ষা করতে প্রস্তুত ছিল না, বিশেষত তাদের সুদক্ষ গোলন্দাজ বাহিনী লক্ষ্য স্থির রেখে কামান দাগাতে শুরু করলে নবাবের পক্ষের সৈন্যদের প্রচুর ক্ষতি হতে আরম্ভ করে। কিন্তু ইংরেজদের কামানের গোলাগুলির পাল্লা খুব কম থাকার ফলে নবাব পক্ষের কামানগুলোর অগ্নিবর্ষণ স্তব্ধ করে দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। আধঘণ্টার মধ্যেইংরেজদের ত্রিশজন সৈন্য আহত ও নিহত হয়। ক্লাইভ তখন বাধ্য হয়ে ইংরেজ সৈন্যদের আম্রকুঞ্জের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে ঘন সারিবদ্ধ ও নিবিড় আম্রবৃক্ষের অন্তরালে ও প্রাচীরের সাহায্যে আত্মরক্ষার নির্দেশ দেন এবং রাত্রিবেলা আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।”
রবার্ট ক্লাইভ (ঈষরাবং ষবঃঃবৎ ঃড় ংবষবপঃ ঈড়সসরঃঃব, ংঃ এবড়ৎমব ঋড়ংঃ, উধঃবফ ২হফ ঔঁষু, ১৭৫৭) এ যুদ্ধ সম্পর্কে লিখেছেন, “দ্রুতবেগে অগ্রসর হয়ে ছটার সময় তার সমগ্র সৈন্যবাহিনীর সহযোগিতায় কয়েকটি শক্তিশালী কামানের সাহায্যে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে এবং কয়েকঘণ্টা ধরে তারা ভীষণভাবে আমাদের উপর অবিরাম গোলাবর্ষণ করে, কিন্তু মাটির প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত এবং নিবিড় আম্রকুঞ্জের অন্তরালে আশ্রয় গ্রহণ করার ফলে আমরা সবাই আত্মরক্ষার প্রচুর সুযোগ পেতে সমর্থ হই। আমাদের চারিদিকে এবং একটু দূরে দুরে এরূপভাবে কামানগুলো স্থাপিত ছিল যে তাদের কামানের বিরুদ্ধে কৃতকার্যতা লাভ করা আমাদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ছিল। সুতরাং রাত্রিবেলা তাদের বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে আক্রমণ পরিচালনা করার সম্ভাবনায় আমরা যে যার জায়গায় স্থিরভাবে চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগলাম।” এদিকে ইংরেজরা পিছু হঠছে দেখে নবাবী সেনাদের মহা উল্লাস, তারা এগিয়ে এলো পায়ে পায়ে। নবাবের তোপমঞ্চ ছিল ৪ হাত উঁচু। মীরমদন সেখান থেকে কামান দাগাতে লাগলেন। কিন্তু তাতে কাজের কাজ হল না কিছুই কারণ ক্লাইভের সৈন্যরা তখন গাছের ডালে, লক্ষবাগের আম গাছগুলোই ভেঙ্গে তছনছ হতে লাগল কেবল।
ইতিমধ্যে ক্লাইভ তলব করেছেন উমর বেগকে। কোন কোন ইতিহাসে উমর বেগের জায়গায় রয়েছে আমীন চাঁদ। ক্লাইভের মন জ্বলছে রাগে। জিজ্ঞেস করলেন ব্যাপারটা কি? তোমাদের বিশ্বাস করে তো বড় বাজে কাজ করে ফেলেছি দেখছি, কথা ছিল সামান্য যুদ্ধের অভিনয় করলেই কাজ হাসিল হবে। সিরাজের সৈন্যরা নিস্কর্মা হয়ে থাকবে। এখন তো দেকছি সবই বিপরীত। তার উত্তর এল, যারা যুদ্ধ করছে তারা মীরমদন আর মোহনলালের সৈন্য। সৈন্যদের মধ্যে তারাই শুধু প্রভুভক্ত। তাদের কোনমতে হারাতে পারলেই বাকী সেনানায়করা কেউ হাতে অস্ত্র নেবেন না। যুদ্ধ করে চলেছেন মীরমদন। মীরজাফর, ইয়ারলতিফ, রায় দুর্লভ যেন ছবির মত দাঁড়িয়ে আছেন। কি করছেন তারা। মুতাখখেরীনের ভাষায়, “ওহা খড়ে তামাসা দেখ রহে থে।” তারা “বৃক্ষ হবো স্তব্ধ” দাঁড়িয়ে আছেন দেখেও ভয় ঘোচেনি ক্লাইভের মনের। কি জানি কোন মুহূর্তে এগিয়ে এসে সাঁড়াশির মতো চেপে ধরবেন তাদের। তাই মাঝে মাঝে সেদিক পানেও চুটে চলল গোলাগুলি। যাতে এগুতে সাহস না পায়।
১১টার সময় ক্লাইভ বসলেন পরামর্শে। ঠিক হলো দিনের বেলাটা এভাবে গোলা চালিয়ে আত্মরক্ষা করা যাক। রাতে তারা আক্রমণ করবে নবাবকে। ১১ টার পর হঠাৎ নামল বৃষ্টি, মুষলধারে। আধঘণ্টা পরে বৃষ্টি যখন থামল, তখন দেখা গেল মীরমদনের অনেকখানি বারুদ ভিজে গেছে, ঠিকমত আচ্ছাদন বা যতেœর অভাবে। বৃষ্টি থামবার পর মীরমদন ভাবলেন, তাহলে নিশ্চয়ই ইংরেজদেরও এই একই অবস্থা। তিনি হাজার খানেক সৈন্য নিয়ে তেড়ে গেলেন ইংরেজদের দিকে। তার ভুল হয়েছিল হিসাবে। ইংরেজদের বারুদের গাড়িটা ছিল ঢাকা দেওয়া। ফলে কামান দাগতে তাদের ভয় নেই। তারা কামান দাগতে লাগল আড়াল থেকে। আর ঠিক সেই সময়ই একটা গোলা এসে লাগল মীরমদনের উরুতে। এতে কয়েকজন যোদ্ধাসহ মীরমদন নিহত হলেন। মীরমদনকে সকলে ধরাধরি করে নিয়ে এলো নবাব সিরাজের সামনে। মোহনলাল নিলেন যুদ্ধের নেতৃত্ব। মীরমদন মৃত্যুর মুহূর্তে নবাবকে জানিয়ে গেলেন অল্প কয়েকটা কথা। শত্রুসৈন্যরা আমবাগানে লূকিয়ে। তবুও নবাবের প্রধান সেনাপতিরা কেউ যুদ্ধ করছেন না। ছবির মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেবল। মৃণাল চক্রবর্তী লিখেছেন, “বেলা দুটো পর্যন্ত সমানভাবে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচ- গোলাগুলি বর্ষণ চলতে তাকে এবং তারপর নাবাবের সৈন্যবাহিনী পশ্চাদপসারণ করতে আরম্ভ করে, এই সময় নবাবের সৈন্যবাহিনী সুবিধাজনক অবস্থা থাকা সত্ত্বেও সম্ভবত বিশ্বাসঘাতকতার জন্য পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। ষড়যন্ত্রের গোপনয়িতা বিনষ্ট হওয়ার আশংকায় মীরজাফর এবং অন্যান্য বিশ্বাসঘাতকগণ যুদ্ধক্ষেত্রে কিরুপ আচরণ করবেন পত্রের মাধ্যমে রবাট ক্লাইভকে সেই সম্পর্কে কোন কিছু জানিয়ে দেয়া তখন তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। অপরদিকে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসনের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তাঁর সবচাইতে হিংস্রতম শত্রু মীরজাফর সম্পর্কে ক্লাইভের দুশ্চিন্তা তখনও সম্পূর্ণভাবে দুর হয় নি। বিশেষত মীরজাফরের কাছ থেকে জুন মাসের ২২ তারিখের চিঠির উত্তর না পাওয়ায় তার সংশয় দুশ্চিন্তা আরও বৃদ্ধি পায়। ইষ্ট ই-িয়া কোম্পানী এবং ইংরেজদের ভবিষ্যত সম্পর্কে তিনি তখন কত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন ঐ চিঠিতেই তার সুষ্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। মীরজাফর শেষ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন, তাঁর মনে এরুপ আশংকার সৃষ্টি হওয়ার ফলেই তিনি নবাবের সঙ্গে সমস্ত বিবাদ-বিসংবাদ শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করার কথা চিন্তা করতে শুরু করেন। সম্ভবত এরূপ অনিশ্চিত মানসিক অবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের ঘোরতর যুদ্ধের সময় তিনি পলাশী হাউজে বিশ্রামের জন্য আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে ক্লাইভের এরূপ দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের জন্য তাঁকে যথেষ্ট সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। ইংরেজ সৈন্যবাহিনী যখন জীবনমরণ সংগ্রামে লিপ্ত এবং ইস্ট ই-িয়া কোম্পানীর ভাগ্য যখন সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত তখন ক্লাইভ নিশ্চিত মনে পলাশী হাউজে গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচকদের এই ছিল প্রধান অভিযোগ। এই সমালোচনার উত্তরে রবার্ট ক্লাইভ বলেন যে, অকস্মাৎ এক পশলা বৃষ্টি হওয়াতে তার পোশাক ভিজে যায় এবং তিনি পোশাক পরিবর্তনের জন্য পলাশী হাউজের বাগান বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের জন্য তিনি নিদ্রাভিভূত হয়ে পড়েন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পশ্চাদপসরণ করতে আরম্ভ করলে সেনাপতি জেমস কিলপ্যাট্রিক তাঁর অধীনস্থ সৈন্যসহ বেশ কিছু দূর অগ্রসর হয়ে নবাবের সৈন্যবাহিনী কর্তৃক পরিত্যক্ত জলাশয়ের নিকটবর্তী স্থান অধিকার করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে যখন এই সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যায় তখন ও মানসিক দুশ্চিন্তায় জর্জরিত রবার্ট ক্লাইভ বাগান বাড়িতে বিশ্রাম গ্রহণে ব্যস্ত।”
এদিকে মীর মদন মারা যাওয়ায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা মহাচিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি ভাবলেন- এখন ভরসা করা যায় কার উপর? মীরজাফরের সাহায্য ছাড়া জিতবো কি করে? এসব ভেবে তিনি ডেকে পাঠালেন মীরজাফরকে। মীরজাফর অনেক ইতস্ততঃ করে অনেক কালহরণ করে অবশেষে মীরণ এবং পাত্রমিত্রদিগের সাথে দলবদ্ধ হয়ে সতর্ক পদ বিক্ষেপে সিরাজে পটম-পে প্রবেশ করলেন। মীরজাফর ভাবছিলেন, সিরাজউদ্দৌলা তাকে বন্দী করে ফেলবেন। কিন্তু পটম-পে প্রবেশ করামাত্র সিরাজউদ্দৌলা তাঁর সামনে রাজমুকুট রেখে দিয়ে ব্যাকুল হৃদয়ে বলে উঠলেন, যা হবার তাই হয়েছে। মাতামহ জীবিত নেই। তুমি এখন তাঁর স্থান পূর্ণ কর। মীরজাফর! আলীবর্দীর পূণ্য নাম স্মরণ করে আমার মানসম্ভ্রম এবং জীবন রক্ষায় সহায়তা কর।” মীরজাফর সম্ভমে যথারীতি রাজ মুকুটকে কুর্নিশ করে বুকের উপর হাত রেখে বিশ্বস্তভাবে বলতে লাগলেন, অবশ্যই শত্রু জয় করবো। কিন্তু আজ দিবা অবসান প্রায় হয়েছে, সিপাহীরা প্রভাত হতে রণশ্রমে অবসন্ন হয়ে পড়েছে; আজ সেনাদল শিবিরে প্রত্যাগমন করুক। প্রভাতে আবার যুদ্ধ করলেই হবে। সিরাজউদ্দৌলা বললেন, “নিশারণে ইংরেজ সেনাশিবির আক্রমণ করলেই যে সর্বনাশ হবে। মীরজাফর সগর্বে বলে উঠলেন- “আমরা রয়েছি কেন?”
নবাব সিরাজউদ্দৌলার মতিভ্রম হলো, মরিজাফরের শেষ কথাটা কানে যেতেই চমকে উঠলেন মোহনলাল, মোহনলাল বলেন, আর খানিকটা সময় লড়াই চালালে ইংরেজরা কুপোকাৎ হবে, এমন সময় কিনা শিবিরেফিরে যেতে বলা হচ্ছে সৈন্যদের? না ফিরব না। মোহনলালের তেজস্বীতাই সবচেয়ে ভয় মীরজাফরের। মোহনলাল বেঁচে গেলেই মীরজাফরের সব ছলাকলা শেষ। কিন্তু মোহনলালের বীরত্বের চেয়ে মীর জাফরের ছলনাকী সেই মুহূর্তে বেশি মূল্য দিলেন নবাব সিরাজ। মোহনলালের ভিতরটা জ্বলতে লাগল ক্রোধে। তবু নবাবের আদেশ শিরোধার্য করে তাঁরা ধীরে দীরে ফিরে চললেন শিবিরের দিকে। মীরজাফর খুঁজে পেলেন তাকিয়ে থাকা চরম মুহূর্তটির। তখনি লিখে পাঠালেন ক্লাইভকে মীরমদন মারা গেছেন্ আর লুকিয়ে থাকার দরকার নেই। ইচ্ছা থাকলে এখুনি না হলে রাত ৩ টায় শিবির আক্রমণ করুণ্ কার্যসিদ্ধি ঘটবে। মোহনলাল তার দলবল নিয়ে শিবিরে ফিরছে দেখতে পেয়ে ইংরেজ সৈন্যরা বেরিয়ে এল আমবাগান থেকে। মৃণাল চক্রবর্তী লিখেছেন, “যদিও রবার্ট ক্লাইভ রাত্রিবেলা নবাবের সৈন্যদের আক্রমণের পক্ষপাতী ছিলেন, মীরজাফরও চিঠিতে তাঁকে রাত্রি তিনটিার সময় আক্রমণ পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু সমগ্র পরিস্থিতি ইংরেজদের অনুকুলে। এই কথা উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েই সেনাপতি কিলপ্যাট্রিক ইতিপূর্বেই যে বিপদসঙ্কুল কাজে লিপ্ত হন রবার্ট ক্লাইভও তা সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেন। প্রকৃতপক্ষে মীরমদনের মৃত্যুর পরই নবাবের সৈন্যবাহিনীর মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং যুদ্ধের ভবিষ্যত সম্পর্কে এই সময় সিরাজউদ্দৌলা প্রচ-ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মীরমদনের অকস্মাৎ মৃত্যুই যে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের সাফল্যের অন্যতম কারণ লিউক স্ক্রাফটনও তা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন, যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নবাবের অন্যতম প্রধান এবং সর্বাপেক্ষা বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরমদনকে হত্যা করার সুযোগই আমাদের পক্ষে সাফল্য লাভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। বিশেষত মীর মদনের মৃত্যুর ফলে নবাবের মনে এমন ভীতির সঞ্চার হয় যে তিনি মীরজাফরকে ডেকে পাঠান এবং তার পায়ের উপর মাথার মুকুট নিক্ষেপ করেন এবং মুখম-লের ভাব অত্যন্ত বিষণœ করে দৃঢ়তার সঙ্গে রাজমুকুটের সম্মান রক্ষার জন্য তাকে অনুরোধ জানান।”
নবাব সিরাজউদ্দৌলার এরূপ করুণ আবেদনের পরে মীরজাফরের মতো উচ্চাকাক্সক্ষী ও স্বার্থন্বেষী ব্যক্তির অন্তরের সহানুভূতির উদ্রেক হয় এবং তিনি পবিত্র কোরআন স্পর্শ করে নবাবের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে শপথ গ্রহণ করেন। কিন্তু মীরজাফরের মনে এই ভাবাবেগ অত্যন্ত অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয় এবং পবিত্র কোরআন স্পর্শ করে শপথ গ্রহণের জন্য তিনি বারবার বিবেকের দংশন সহ্য করতে শুরু করেন। অপরদিকে ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর ষড়যন্ত্র তখন প্রায় সাফল্যম-িত হওয়ার পথে, সুতরাং কিছুক্ষণ পরেই পরিবত্র কোরআন স্পর্শ করে শপথের কথা অথবা বিবেকেরদংশনের কথা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে বিকেল তিনটার সময় তিনি বরার্ট ক্লাইভের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে চিঠি লেখেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top