সকল মেনু

পার্বতীপুরে নদী-নালা খাল-বিল জলাশয় থেকে হারিয়ে গেছে দেশী প্রজাতির মাছ

f6838ad0-3491-4bf2-8f07-90cb5ed3c56a রাইসুল ইসলাম, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে নদী নালা, খাল বিল ও জলাশয় থেকে বাঙালির চির পরিচিত দেশীয় প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। আবহাওয়া পরিবর্তন ও জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি পুকুর নালা, খাল-বিল, ডোবা ও বড় বড় পুকুর ভরাট করে বসত বাড়ি নির্মাণ করায় এঅবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলের খাল বিল, নদীসহ মুক্ত জলাশয়গুলো এখন মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, দেশী প্রজাতি মাছের মধ্যে বৌ সুন্দরী, খোশালা, চোপড়া, খৈলসা, পাবদা, সাটি, পুঁটি, তিতপুঁটি, দ্যাড়কা, মলা-ঢেলা, টেংরা, চান্দা, কৈ, শিং, মাগুর, বাইলা, শৈল, গজার, বোয়াল, গচি, বালুচটা, কালবাউশ, বাইম, ফলি, ভ্যাদা (মেনি মাছ), চান্দা, তারাবাইন, তুলাবাইন, আইড়, চেলা, চিতল, চিংড়ি, বাতাসি, কর্তী, পৈরালীসহ অসংখ্য প্রজাতির মাছ গ্রামাঞ্চলের ছোট বড় হাট বাজারগুলোতে এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। দেশী মাছের জায়গায় এখন বিদেশী সিলভারকার্প, মিনারকার্প, গ্রাসকার্প, ককার্প, মনোসেক্স তেলাপিয়া, গিফট তেলাপিয়া, থাই মাগুর, থাই কৈ, বাটা, সরপুটি সর্বত্র কেনা-বেচা হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে রুই, কাতল, মৃগেল, পাংগাস, পাবদা, টেংরা, মলা, কৈ, শিং, মাগুর ও বাইলা এ জাতীয় মাছ পুকুর জলাশয়ে আবাদ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রুই, কাতল, মৃগেল ও পাংগাস মাছের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে।
উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের বড় চন্ডিপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী জানান, ছোটকালে নদী-নালায় মাছ ধরতে ধরতে বড় হয়েছি। আমাবশ্যা-পূর্ণিমার জোস্নায় তিলাই নদীর পানি ঘরের পাশের ক্ষেতে টইটম্বুর করত। তখন আমরা গ্রামের ছেলেরা পলা (পলো) দিয়ে ওই পানিতে বোয়াল, শৈল, মাগুর, শিং, বাইন এধরনের মাছ ধরতাম। তবে এখন ক্ষেতে তিলাই নদীর পানি ওঠে না। মাছও পাওয়া যায়না।
উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিন হরিামপুর মন্ডলপাড়া গ্রামের সোজাআদ আলী ওরফে রাসেল বলেন, অধিক ফলনের আশায় জমিতে নানা ধরনের কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করায় এসব মাছ মরে যাচ্ছে। বংশ বিস্তার হচ্ছে না। নদী-নালা ও খালে-বিলে এক শ্রেণীর জেলে দাড়কি, কারেন্ট জাল, ফাঁসিজাল, ঘেরজালসহ ছোট ফাঁসের বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করে রেণুপোনা নিধন করায় মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এক সময় শহরের নতুন বাজার, আমবাড়ীর হাট, হাবড়া হাট, পুরাতন বাজার বুড়া হাট, ভবানীপুর হাট, খয়েরপুকুর হাট, যশাই হাট, ভবেরবাজার, রামপুর ও বান্নিরঘাট বাজারে দেশীয় সুস্বাদু মাছ বিক্রি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এসব মাছ পাওয়া যায় না। বর্তমানে বিভিন্ন মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায় এর বিপরীত চিত্র। দেশীয় প্রজাতির মাছের সংখ্যা খুবই সীমিত। যা আছে তার তা আবার চড়া দাম হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা কিনতে হিমসিম খাচ্ছে। যদিও কিছু সুস্বাদু মাছ হাটবাজারে ওঠে তাও চলে যায় বিত্তবানদের হাতে। সাধারণ মানুষের কপালে এসব মাছ আর জোটে না।
এব্যাপারে পার্বতীপুর মৎস্য কর্মকর্তা তারাপদ চৌহান বলেন, উপজেলায় ৪হাজার ৭৬১টি পুকুর, ৪টি বিল ও ৪টি নদী রয়েছে। নদীগুলো দেখে মনে হয় ক্যানেল। এখানে সারাবছর পানি থাকেনা। যে বিল রয়েছে সেগুলোতে ঠিকমত মাছ চাষ হয় না। জলাশয় ভরাট, জনসংখ্যা বেড়ে যাওযায় মৎস্য আহরণের চাপ বেড়ে গেছে। অপরদিকে, সেচ দিয়ে মাছ মেরে ফেলা হয়। জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে দেশীয় প্রজাতির মাছ চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আশংকা করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top