সকল মেনু

বিশ্বখ্যত মোহাম্মদ আলী আর নেই

downloadআন্তর্জাতিক ডেস্ক : বক্সিংয়ের কিংবদন্তি বিশ্বখ্যত মোহাম্মদ আলী (৭৪) আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মোহাম্মদ আলী পরিবারের মূখপাত্র বব গানেল জানান, শুক্রবার অ্যারিজোনার ফিনিক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়েছে। কেন্টাকিতে মোহাম্মদ আলীর নিজ শহর লুইজভিলেতে তার দাফন সম্পন্ন হবে।

এর আগে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার কারণে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মোহাম্মদ আলীকে। শুক্রবার বিকেলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে শুরু করে।

বক্সিং ছেড়ে দেওয়ার পর ১৯৮৪ সাল থেকে পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন মোহাম্মদ আলী। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি । ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মূত্রাশয়ের জটিলতায় চিকিৎসা করাতে হয় তাকে।

‘দ্য গ্রেটেস্ট’ হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আলী ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েটে স্বর্ণপদক জিতে সবার নজরে আসেন। ১৯৬৪ সালে সনি লিস্টনকে হারিয়ে তিনি প্রথম বিশ্ব খেতাব জেতেন। পরবর্তীতে ইতিহাসে প্রথম মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপা জেতেন তিনি।

১৯৭১ সালের মার্চে জো ফ্রেজিয়ারের মুখোমুখি হন মোহাম্মদ আলী, যা `শতাব্দীর সেরা লড়াই` হিসাবে পরিচিত। বহুল আলোচিত এ লড়াইটি ছিলো দুই মহাবীরের লড়াই । জো ফ্রেজিয়ার এতে জয়লাভ করেন এবং প্রথমবারের মত পরাজিত হন আলী।

১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর জায়ারের (বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কংগো) কিনশাসায় জর্জ ফোরম্যানকে হারিয়ে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নের খেতাব পুনরুদ্ধার করেন আলী। এরপর ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর ফিলিপাইনের ম্যানিলায় ফ্রেজিয়ারকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেন তিনি।

১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিয়ন স্পিংক্সের কাছে পয়েন্টে হেরে গিয়ে খেতাব হারান আলী। তবে ওই বছরের শেষ দিকে স্পিংক্সকে হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করেন তিনি।

৮০’র দশকের শুরুতেই আলীর পারফরম্যান্সে ভাটা পড়ে। ১৯৮০ সালে ল্যারি হোমস এবং তার পরের বছর ট্রেভর বেরবিকের কাছে পরাজিত হন তিনি। এরপরই ১৯৮১ সালে পেশাদার বক্সিং থেকে অবসর নেন মোহাম্মদ আলী। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৬১টি লড়াইয়ের মধ্যে ৫৬টিতে জয়লাভ করেন তিনি।

অবসর গ্রহণের পর ১৯৮৪ সালে আলীর প্রথম পারকিনসন্স রোগ ধরা পড়ে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পার্কিনসন্স রোগের সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনি। শেষ দিকে শারীরিক অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানেই সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন অনন্য মোহাম্মদ আলী।

ক্লে সিনিয়র ও ওডিসা গ্র্যাডি ক্লে দম্পতির সন্তান ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে জুনিয়রের জন্ম কেন্টাকির লুইজভিলে ১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি। প্রথম বিশ্ব শিরোপা জেতার পর ক্যাসিয়াস ক্লে নামে পরিচিত আলী নেশন অব ইসলাম নামে একটি সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন যাদের উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান-আমেরিকানদের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন করা। পরে ১৯৭৫ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নাম পাল্টে রাখেন মোহাম্মাদ আলী।

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ঢাকায় এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী। তাঁকে সে সময় বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল।

সর্বকালের সেরা এই খেলোয়াড় আলী শুধু বক্সিংয়ের রিংয়েই দুর্দান্ত ছিলেন না, তার সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্যও ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। অনেক নাম-খ্যাতি সত্ত্বেও সব সময়ই প্রচার বিমুখ ছিলেন মোহাম্মদ আলী। তিনি হয়ে উঠেছিলেন রাষ্ট্রীয় সীমানা ছাড়িয়ে, জাতি এবং ধর্মকে ছাপিয়ে সার্বজনীনতার প্রতীক।

১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে মোহাম্মদ আলি যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে এক শক্তি, বাগ্মিতা, বিবেক ও সাহসের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

সম্প্রতি তিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিরোধী অবস্থানের তীব্র নমালোচনা করেন। ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি তুললে আলি তার প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আমরা মুসলিম হিসেবে তাদের বিপক্ষে দাঁড়াতে চাই যারা ইসলামের বিরোধিতাকেই নিজেদের এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করতে চায়।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top