শাহাদাত হোসেন তিতু,ফরিদপুর প্রতিনিধি: নাটোর থেকে ফরিদপুরে বোনের বাড়ি বেড়াতে এসেছিল ভরত জমাদ্দার। শুক্রবার ভোর রাতে বোন জামাই মানিক জমাদ্দার এর সাথে রাস্তা পরিচ্ছন্নতার কাজে বের হয় সে। আর ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের মিয়াপাড়া সড়কের পাশে তাদের দু’জনের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায় খুব ভোরে।
কি কারণে বা কারা এই দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে খুন করলো তা পরিস্কার বলতে পারছে না কেউই। শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লীদের একজন মাথা ও মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাতপ্রাপ্ত দু’টি মরদেহ দেখতে পায়। স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর মাধ্যমে খবর পায় পরিবারের সদস্যরাও। লাশ উদ্ধার করে পুলিশ মর্গে পাঠায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় মানিকের মরদেহ স্থানীয় অম্বিকাপুর শ্মশানে দাহ করা হয়। তার শ্যালক ভরত জমাদ্দার এর মরদেহ পরিবারের সদস্যরা নাটোরের চৌকিপাড়ায় নিয়ে যায় রাতেই। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় নিহত মানিকের বাবা কিশোর জমাদ্দার বাদী হয়ে এজাহার দায়েরের প্রক্রিয়া চলছিল।
পরিবারের সদস্যরা ও হরিজন সম্প্রদায়ের (পরিচ্ছন্নাকর্মী) নেতা রিপন জমাদ্দার জানান, খুব ভোরে ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকার দূস্কৃতিকারীদের কোনো অপরাধ কর্মকান্ড দেখে ফেলায় খুন হতে হয়েছে ফরিদপুর পৌরসভার এই পরিচ্ছন্নতা কর্মী মানিক ও তার শ্যালক ভরতকে। মানিকের স্ত্রী টুম্পা স্বামীর সাথে প্রতিদিন রাস্তা ঝাড়– দেওয়ার কাজে বের হতো। তার ৪ বছরের শিশু সন্তান শ্রীকান্ত অসুস্থ্য থাকায় নাটোর থেকে বেড়াতে আসা ভাই ভরতকে তার বদলী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিল গত ৩ দিন।
নিহত মানিকের বোন রত্না জানায়, সপ্তাহখানেক আগে পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার কয়েকজন সন্ত্রাসী তার ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। আমার ভাইয়ের দোষ ভোরের আগে রাস্তার পাশে এক ভ্যান ভর্তি
রামদা পড়ে থাকতে দেখে মানিক এগিয়ে গিয়েছিল। মানিক তার বোনকে বলেছিল ওই এলাকায় প্রায়ই ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের মালামাল লুটে নিত। এসব দেখে ফেলায় মানিককে তারা মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল।
নৃশংস এ হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারছে না মানিক ও ভরত এর স্বজনরা। শোকের মাতম চলছে ফরিদপুরের বান্ধব পল্লীতে। বার বার মুর্ছা যাচ্ছে মানিকের মা রীনা জমাদ্দার। স্বামী ও ভাইকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে গেছে মানিকের স্ত্রী টুম্পা। একমাত্র শিশু পুত্র শ্রীকান্তকে জাড়িয়ে কাঁদছেন অঝোরে। এদিকে নাটোরের চৌকিপাড়া গ্রামে ভরত এর বাড়িতেও চলছে কান্নার রোল।
এদিকে পৌরসভার দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মী খুন হওয়ার খবর শহরের আলীপুরে বান্ধব পল্লীতে (হরিজন সম্প্রদায়ের বাসস্থান) পৌছামাত্র পল্লীর নারী-পুরুষ-শিশু সবাই রাস্তায় বের হয়ে আসে। তারা সকালে টায়ায় জ্বালিয়ে শহরের প্রধান সড়ক মুজিব সড়ক অবরোধ করে। এ সময় তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথুসহ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবরোধ তুলে নেয় তারা। দুপুরে হরিজন সম্প্রদায় তাদের দুই স্বজনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য শহরের পরিচ্ছন্নতার কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ফরিদপুরের হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা। পৌর মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু তার দুই কর্মীর খুনিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনতে প্রশাসনকে ৪৮ ঘন্টার সময় বেধে দিয়েছেন।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) নাজিমউদ্দিন জানান, মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের মোটিভ ও এর সঙ্গে কারা জড়িত তা উদঘাটন করতে পুলিশের দুটি শক্তিশালী দল কাজ করছে। আশা করছি শীঘ্রই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা যাবে। পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।