ডেস্ক রিপোর্ট,হটনিউজ২৪বিডি.কম : নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে হ্যাকাররা ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিল শ্রীলংকার বেসরকারি সংস্থা শালিকা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক অ্যকাউন্টে।
তবে বানান ভুলের কারণে সেই অর্থ আটকে দিয়েছিল ব্যাংক। শালিকা ফাউন্ডেশনের প্রধান হাগোডা গোমেজ শালিকা পেরেরা জানিয়েছেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা হয়েছিল। তবে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হ্যাক করার বিষয়ে কোনো কিছুই জানতেন না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার শালিকা পেরেরার সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স।
শালিকা পেরেরা জানান, শ্রীলঙ্কায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার কাছ থেকে ওই অর্থ তাকে এনে দেওয়ার কথা বলেছিলেন এক বন্ধু। জাইকার সঙ্গে তার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই । তবে এই তথাকথিত প্রকল্পটি জোগাড় করেছিল তার ওই বন্ধু, যার সঙ্গে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
গত ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশে ব্যাংকের ১০০ কোটি ডলার চুরির চেষ্টায় ৩৫টি ভুয়া অনুরোধ পাঠায় হ্যাকাররা। এর মধ্যে ৩০টি আটকে গেলেও একটিতে ওই দুই কোটি ডলার ডয়চে ব্যাংকের হাত ঘুরে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছায় । এই অর্থ শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকে, পেরেরার শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছিল।
তবে অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধে প্রাপকের জায়গায় ‘ফাউন্ডেশন’ বানান ভুল থাকায় ডয়চে ব্যাংক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। এর মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে, অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধটি ছিল ভুয়া। এ ঘটনার পরপর শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে পাঠানো ওই অর্থ আটকে দেওয়া হয় ।
কিন্তু অপর চারটি অনুরোধে ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের চারটি অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়। পরে সেই অর্থের সিংহভাগ স্থানীয় মুদ্রা পেসোয় রূপান্তরিত হয়ে ক্যাসিনোর মধ্যে পাচার হয়ে যায় । ফিলিপাইনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় ইতিমধ্যে দেশটির সিনেটের ব্লু রিবন কমিটিতে শুনানি হচ্ছে।
২০১৪ সালের অক্টোবরে শালিকা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে জানান পেরেরা। এর নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা স্বল্প খরচে বাড়ি নির্মান ও অন্যান্য সামাজিক সেবা দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে কলম্বোর যে বাড়ির ঠিকানা সেখানে দেওয়া হয়েছে, তা বন্ধ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। রয়টার্সের কাছে পেরেরা যে বন্ধুর কথা বলেছেন ও তার ফোন ও ইমেইল নাম্বার দিয়েছেন, তাতে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
এমনকি জাপান সরকারের উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকা জানিয়েছে, শালিকা ফাউন্ডেশন নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ বা কোনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমেও সম্পর্ক নেই।
জাইকার মুখপাত্র নাওইয়োকি নেমোতো বলেছেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো লেনদেন নেই, ঋণ বা সহায়তার কোনো বিষয়ও নেই।’
পেরেরা সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের একটি নোট রয়টার্সকে দেখিয়েছেন। এতে লেখা রয়েছে, বাংলাদেশের পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড জাইকার কাছ থেকে ২০১০ সালে একটি বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে ঋণ হিসেবে নেওয়া ওই ২ কোটি ডলার পরিশোধ করার পর তা শ্রীলঙ্কায় শালিকার অ্যাকাউন্টে জমা করতে পাঠানো হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন রয়টার্সকে বলেছেন, তাদের কাছ থেকে ওই অর্থ গেছে, এমন চিন্তাই ‘হাস্যকর।’
তিনি বলেন, তারা হয়তো বিষয়টা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য সরকারি নাম ব্যবহার করেছে।’
কলম্বো পুলিশ বৃহস্পতিবার মেজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া একটি প্রতিবেদনে বলেছে, তারা পেরেরার সেই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সেই ব্যক্তি জানিয়েছেন, এক জাপানি মধ্যস্থতাকারীর এই তহবিলের যোগাড়ে সহযোগিতা করেছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, সেই জাপানি মধ্যস্থতাকারীকে ফোন করা হলে তিনি বলেছেন, তিনি সফরে আছেন এবং এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।