সকল মেনু

সূর্য-তারার যুদ্ধে হারে কি সূর্য?

Bangladesh1457255742অাছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম : ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজের ছেলেরা শান্তিনিকেতনের ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে এসেছে। আশ্রমের ভেতরেই খেলার মাঠ। উত্তরায়ণে বসেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাঠে ছেলেদের হল্লা শুনতে পাচ্ছিলেন। বলা বাহুল্য, আশ্রমের ছেলেরা গোল দিলে হল্লাটা একটু বেশিই হতো এবং তাতেই বোঝা যেত কোন পক্ষ জিতল।

খেলা শুরু হলো। হঠাৎ জোরে হৈ-চৈ শোনা গেল। অর্থাৎ এক গোল হলো। কবি বেশ খুশি। খানিক বাদে আবার হল্লা শোনা গেল। অর্থাৎ দুগোল হলো। একটু পর আবার গোল। এবার কবি একটু উসখুস করে উঠলেন।

খানিক বাদে আবার হৈ-চৈ। আবার গোল। এভাবে আট গোল হলো। এবার কবি রেগে গিয়ে বললেন, এ হচ্ছে বাড়াবাড়ি। বাইরের ছেলেরা খেলতে এসেছে, হারাতে হয় এক গোল কি দুই গোলে হারাও। তা নয়, পরপর আট গোল। এ দস্তুরমতো অসভ্যতা!

লিখতে বসে শান্তিনিকেতনের এই ঘটনা মনে পড়ে গেল এ কারণে যে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন প্রায়ই প্রতিপক্ষের সঙ্গে এমন দস্তুরমতো অসভ্যতা করছে। তারা শুধু প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দিচ্ছে, এমন নয়, ধবলধোলাই করে হারাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১১ বার প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করেছে। মনে রাখতে হবে, এটি এই দলটির সাম্প্রতিক অতীতের সাফল্যের ধারাবাহিকতা। সুতরাং আজকের ম্যাচ নিয়ে স্বপ্নের জাল আমরা বুনতেই পারি। যে জালে জয় ছাড়া অন্যকিছু ধরা দেবে না।

হ্যাঁ, জয় জয় এবং জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না আজ এই ভূখণ্ডের কেউ। এ দেশের কুমড়ো ফুলে ফুলে যে লতাটা নুয়ে পড়েছে, এ আঙিনার সজনে ডাঁটায় যে গাছটা ভরে গেছে, এ মাঠের যে ফসল বসন্ত বাতাসে দোল খাচ্ছে, এ নদীর যে ঢেউগুলো মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো পাড়ে এসে আছড়ে পড়ছে, সেই পাড় ধরে গুন টানছে যে মাঝি, হাঁপর চালাচ্ছে যে কামার, লাঙলের ফলা দিয়ে মাটির বুক চিরে দিচ্ছে যে কৃষক, তার বুকেও আজ জয়ের স্বপ্ন। ফেইসবুকের ‘হোয়াটস অন ইওর মাইন্ড’-এ আজ জয় ছাড়া সত্যিই কিছু নেই।

এই এশিয়া কাপের ফাইনালেই আমরা হেরেছিলাম চার বছর আগে মাত্র ২ রানে। সেদিন রাতে শিশিরে মিশেছিল কান্না। এত দিন ধরে বুকের ভেতর চেপে বসা জগদ্দল পাথরটা নামিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসেছে আজ। মাশরাফিরা এই সুযোগ ছাড়বেন কেন? অনেকেই বলবেন প্রতিপক্ষ র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল। আমরা আছি দশে। পার্থক্য বিশাল! তাদের হালে পানি আনতেই বলছি, এই দশটাই কিন্তু শক্তি। কথায় বলে, দশে মিলে করি কাজ, হারি-জিতি নাহি লাজ। এই দশের শক্তি যে এক সুতোয় গাঁথতে পারেন, তিনি নায়ক। মহা সমস্যায় যিনি নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তিনি মহানায়ক। আমাদের মহানায়ক আছেন। তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজা। সুতরাং ভয় কি ২২ গজে!

আমাদের সাকিব বিশ্বসেরা। তাসকিন, আল-আমিন বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে জানেন, সৌম্য-সাব্বির প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপুনি ধরানোর জন্য যথেষ্ট; মনে পড়ছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে স্টিভ ওয়াহর সময় মাইকেল বেভানকে ফিনিশার  বলা হতো। আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম, আর ভাবতাম, নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? হ্যাঁ, আমরা পেরেছি, আমাদেরও এখন ফিনিশার আছে। তিনি মাহমুদউল্লাহ। এই সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কী দুর্দান্তই না খেলছেন তিনি। যখন যেটুকু দরকার তিনি দায়িত্ব নিয়ে সেটুকু করে তবেই মাঠ ছাড়ছেন। আজ ভারতকে তাকে নিয়েও ভাবতে হবে। বুঝতে হবে তামিমকেও। গ্রামগঞ্জে একটি কথা আছে, আগা নাও যেদিকে যায় পাছা নাও সেদিকেই ধায়। সুতরাং ভালো একটা শুরু ওপেনারদেরই এনে দিতে হবে। বোলাররা এই সিরিজে ধারাবাহিকভাবে ভালো করেছে। আজ তাদের একটু নির্ভার রাখতে লড়াই করার পুঁজি ব্যাটসম্যানদেরই এনে দিতে হবে। কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় বলি :

ব্যাটিং বোলিং ভুম-,

ইলিক্কি ঝুউউউম।

রানিং ফিল্ডিং ক্যাচিং,

কট বিহাউন্ড ঘেচিং।

চাইর ছক্কা দ্রুম,

ইলিক্কি ঝুউউউম!

অর্থাৎ ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- তিন সেক্টরে জ্বলে উঠতে পারলেই আজ রাত আমাদের। অর্পিত দায়িত্ব পালনে সফল হলেই আজ স্বপ্নপূরণ। শ্রীলঙ্কা এখনো এশিয়া ও টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন; এই তো সেদিন তাদের হারালাম, আমাদের হারানোর কিছু নেই- এটুকু বুঝে খেলতে পারলেই এবার হাসবে বাংলাদেশ। মোদ্দাকথা, বাঘ যেমন শিকার নিয়ে খেলে তেমন খেলতে পারলেই ইলিক্কি ঝুউউউম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top