সকল মেনু

বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি অফিস

index এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: এ বছর ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় আলুর ফলন ভালো হলেও কপালে চিন্তর ভাজ পড়েছে চাষিদের। আলুর খেতে রোগ ও পোকার আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। বেশিরভাগ খেতে এখন ছেনি ও গুনগুন পোকার আক্রমন। সাথে সাথে পাতা মোড়ানো রোগে আক্রান্ত। এতে করে আলু চাষিরা উৎসাহের চেয়ে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছেন বেশি। একাধিক চাষিরা জানান, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সার, ঔষধ ও কিটনাশক প্রয়োগ করে এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা। তাদের এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কৃষি অফিস থেকে কোন কর্মকর্তা পরিদর্শনে আসেনি। এমনকি কোন প্রকার পরামর্শ দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতাও করছেন না তারা। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, গত বছর ভোলায় ৫ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিলো। আর এ বছর ভোলায় ৮ হাজার ৬শ’ ৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবার ৩ হাজার ২শ’ ৫৫ হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়েছে। চাষিরা জানান, আবাদের শুরুতে মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও এখন রোগ ও পোকার আক্রমন দেখা দেয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন। এমনকি সার, ঔষধ ও কিটনাশক প্রয়োগ করেও আশানুরুপ ফলন না পাওয়ারও অভিযোগ করছেন তারা।  ভোলার সদর উপজেলার ইলিশা এলাকার আলু চাষি মিজান বলেন, গত বছর কিছুটা লাভ হয়েছে। এ বছর ১০ গন্ডা জমিতি ৮০ হাজার টাকা খরচ করার পরও চিন্তিত তিনি। কারণ খেতে পাতা মোড়ানো রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অপর চাষি সামছুদ্দিন জানান, গেল বছর আলু চাষ করে ২৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এ বছর নিজের পুঁজি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সাড়ে ৯ গন্ডা জমিতে আলু চাষ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে খেতের অবস্থা ভালো না। খেতে পোকায় আক্রমন করেছে, তাই ফলন ভালো না হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। চাষি মিরাজ হোসেন বলেন, ২৫ গন্ডা জমিতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে আলু চাষ করে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। খেতের এক তৃতিয়াংশে পোকা ও রোগের আক্রমনে নষ্ট হয়ে গেছে। ইলিশা ইউনিয়নের চর আনন্দ্র গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, আলু খেতের পরিচর্যা, আগাছা দমনের কাজে ব্যস্ত চাষিরা। কেউ কেউ আবার ঔষধ প্রয়োগ করছেন। এসময় কথা হয় স্থানীয় চাষি সিরাজ মিস্ত্রি, জাহরে, জাকির, ফারুক, মোজাম্মেলের সাথে। তারা জানান, কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা খেত পরিদর্শনে না আসার কারণে সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে এলেও তাদেরকে চাষিরা পাচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে পোকা ও রোগ দমনে নিজেরাই ঔষধ ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। তারা আরো জানান, গত বছর আলু চাষে লাভবান হয়েই এ বছর ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আলুর আবাদ করেছেন। কিন্তু এ মৌসূমের শুরুতেই খেতের এমন অবস্থায় উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত তারা। দৌলতখানের চরখলিফা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি আলু খেতে গিয়ে দেখা যায় চাষিরা খেতের পোকা দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এসময় কথা হয় মালেক, সহিদ, হানিফ ও কালুর সাথে। তারাও বলছেন খেতে পোকার আক্রমনে দিশেরাহা। কৃষি অফিস তাদেরকেও কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করছেনা পরামর্শ দিয়ে। নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই রোগ ও পোকা দমনে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা তারা এ বছর ফলন নিয়ে বেশ শঙ্কায় রয়েছেন। এ ব্যাপারে ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, গত বছরের তুলনায় জেলায় এ বছর প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ বেশি হয়েছে। তবে রোগ ও পোকার আক্রমনের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিক খেত পরিদর্শনের দায়িত্বে রয়েছেন। খেতে রোগ ও পোকার আক্রমন থাকা সত্ত্বেও বাম্পার ফলনের সাথে সাথে এ মৌসূমে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের আশা করছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top