গোলাম মোস্তফা রাঙ্গা: বাল্য বিবাহের শিকার গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ পশ্চিম পাড়া গ্রামের ভিডিপি সদস্যা মোছাঃ খোতেজা খাতুন মায়া। সাত ভাই-বোনের মধ্যে মায়া তার বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান। চাপাদহ বিল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীতে অধ্যায়নকালেই তার বিয়ে হয়। বয়স তখন তার ১৩ বছর। ২০০৭ সালে একই গ্রামের রিয়াজুল মিয়ার সাথে বিয়া দেন বাবা খলিলুর রহমান। সে বিয়া তার বেশিদিন টিকেনি। কোলজুড়ে এক পুত্র সন্তান দিয়েই ২ বছরের মাথায় তাকে ফেলে স্বামী রিয়াজুল মিয়া আর একটি বিয়া করেন। স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হাওয়ার কারণে সন্তানকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় বাবার বাড়ীতে ফিরেন মায়া। শুরু হয় নতুন এক জীবন যুদ্ধ। সমাজের চোখে স্বামী পরিত্যক্তদের জীবন যে কত যন্ত্রণার তা হারে হারে টের পান মায়া। এমন সময় তিনি সুযোগ পান আনসার ও ভিডিপি থেকে গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার। স্বপ্ন দেখেন গার্মেন্টে চাকুরী করে জীবিকা নির্বাহ করবেন। সেই লক্ষে আনসার-ভিডিপি একাডেমি, সফিপুর, গাজীপুর হতে গার্মেন্ট প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। কিন্তু তা আর করা হয়নি। কারণ একমাত্র অবলম্বন পুত্র সন্তানকে ছেড়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় আবার ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। এরপর কিছুদিনএলজিইডি’র আরএআরএমপি প্রকল্পে কাজ নিজে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। কিন্তু তাও আবার সময় সময় বন্ধ থাকে। ফলে বেকায়দায় পড়তে হয় তাকে। এমতাবস্থায় তিনি আবার আনসার ও ভিডিপি থেকে সেলাই ও ফ্যাশন ডিজাইনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সুযোগ পান। গাজীপুরস্থ আনসার-ভিডিপি’র ভোকেশনার ট্রেনিং সেন্টার (ভিটিসি) হতে ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর হতে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৫ দিন মেয়াদী সেলাই ও ফ্যাশন ডিজাইন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেই থেকে তার খন্ডকালীন বেকার সময়ে সেলাই কাজের মাধ্যমে আয় করে সংসার চালান। তার ছেলের বয়স এখন ৮ বছর। ভর্তি করিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসায়। সেলাই কাজ থেকে উপার্জিত আয় থেকে তিনি এখন নিজের সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি ছেলের ক্যাডেট মাদ্রাসার মাসিক তিন হাজার টাকাও পরিশোধ করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।