ডিজার হোসেন বাদশা, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির ভর্তি হতেই শিশু শিক্ষার্থীদের গুণতে হয় ২ হাজার ৭০০ টাকা। সরকারি হওয়ার পরও নিয়ম বহির্ভূতভাবেই কিন্ডারগার্টেন আদলে চলছে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন করতোয়া (কালেক্টরেট) আদর্শ শিক্ষা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
চলতি বছরের শুরুতেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে গুণতে হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি। ফলে নি¤œ আয়ের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারছেন না। জেলা প্রশাসকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্কুলটি সম্পর্কে কোন অভিভাবক সরাসরি অভিযোগ করতে নারাজ। অধিকাংশ অভিভাবকই জানেন না বিদ্যালয়টি সরকারি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের সন্তানদের উচ্চ ভর্তি ফি ও বেতন দিয়ে করতোয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। শুধু ভর্তি ফি নয় মাসিক পরীক্ষা নামে প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১’শ থেকে ১৫০ টাকা আদায় করা হয়। এছাড়া প্রতি মাসে বেতন বাবদ প্রথম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীকেই দিতে হয় ৪৫০ টাকা। বেতনের এই হার অন্যান্য শ্রেণিতে আরও বেশি। যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নজিরবিহীন। অন্যান্য কিন্ডারগার্টেনগুলোতেও মাসিক বেতন এই বিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক কম নেওয়া হয়। পাশর্^বর্তী কোন বিদ্যালয় না থাকায় ওই বিদ্যালয়ের নিকটের দরিদ্র অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাধ্য হয়েই ভর্তি করাচ্ছেন বিদ্যালয়টিতে। ভর্তি ফি আর মাসিক বেতনের ফি জোগার করতে অনেক নি¤œ আয়ের অভিভাবকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
১৯৮৪ সালে পঞ্চগড় জেলা শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে স্থাপিত হয় করতোয়া আদর্র্শ শিক্ষা নিকেতন বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। শুরু থেকেই জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রথমে বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হলেও ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত ৫ জন শিক্ষক শিক্ষাদান করছেন। সকল সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলেও ২০১৩ সালের পর থেকেই কিন্ডার গার্টেন আদলে চলছে বিদ্যালয়টি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে উচ্চ মাত্রায় ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন নেওয়ায় সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। একই সাথে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি ও বেতনের টাকা নেওয়ায় বিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাও কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননা বলে জানা যায়। জেলা প্রশাসনের বিদ্যালয় বলে অনেকেই এই অনিয়ম সম্পর্কে তেমন কোন মন্তব্য করতে চায়না।
পঞ্চগড় করতোয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহকারি কমিশনার শাহীন রেজা জানান, অন্যান্য বিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান অত্যন্ত ভাল। বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণী থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ৬’শ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। প্রাথমিক শাখা নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ আমাদের মোট শিক্ষক আছে ২০ জনেরও বেশি। এর মধ্যে মাত্র ৫ জন শিক্ষক সরকারি বেতনভূক্ত। তাই প্রাথমিকসহ সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের বেতন দেয়া হয়।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদ হাসান জানান, কোন বিদ্যালয় ভর্তি ফি ও বেতন বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা নিতে পারবেনা মর্মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি আমরা প্রত্যেক বিদ্যালয়ে প্রেরণ করেছি। তারপরও যদি ওই বিদ্যালয় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এ দায় দায়িত্ব তাদের।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা এ বিষয়ে অবগত নন জানিয়ে বলেন, ওই বিদ্যালয় সম্পর্কে কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ নাজমুল হক প্রধান বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ও মাসিক বেতন নেওয়া অযৌক্তিক।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।