ঢাকা, ২২ নভেমস্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রোববার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণ বাঁচাতে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে ক্ষমার আবেদন করেছিলেন। পরিবার বিষয়টি অস্বীকার করলেও ‘কৌশল’ বের করার কম চেষ্টা তারা করেনি।
তিনি বলেন, সাকা চৌধুরীর ছেলে কোনো জায়গায় ছোটোছুটি করতে তো কম যায় নাই। বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছে। তার পার্টি চিফের বাসায় গিয়েছে… সব জায়গায় গিয়েছে।
শাস্তি মওকুফ করার জন্য কিংবা একটা কৌশল বের করার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা তারা করেছে।
আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর সামনে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগই বাকি ছিল।
সেই সুযোগ তারা নিয়েছেন বলে শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে দুই পরিবারই এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলে, বন্দিদের সঙ্গে কথা বলার আগে তারা বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
শনিবার দুপুরেই বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সাকার পরিবার, যাতে এ বিচারকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যায়িত করা হয়।
এর ‘প্রতিবিধান’ চেয়ে সাকা চৌধুরীর ছেলে রাষ্ট্রপতির কাছে একটি আবেদন নিয়ে গেলেও তা গ্রহণ না করে যথাযথ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আসতে বলা হয়।
রাতে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদন নাকচ করেছেন এবং দণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা নেই।
ফাঁসি কার্যকরের আগে রাতে কারাগারে সাকা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসে হুম্মাম সাংবাদিকদের বলেন, বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তুমি কি মার্সি পিটিশন করেছ? তিনি বলেছেন, ‘এরকম বাজে কথা কে বলেছে?’
রোববার সকালে সাকা চৌধুরীকে চট্টগ্রামের রাউজানে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করার পর আবারও এ বিষয়ে কথা বলেন হুম্মাম।
আমাদের বারবার বলা হয়েছে- সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে। যাকে বাংলার মানুষ বাঘ হিসেবে চেনে তিনি মাথা নত করতে পারেন না। কাল যখন বাবার সাথে কথা হয়। তখন তিনি বলেন, ‘তোমার ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা বাবা বাঘ, তিনি মাথা নত করতে পারে না’।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমা না চাইলে আমরা যাব কেন? কয়েক ঘণ্টা ধরে এ মন্ত্রণালয়, সে মন্ত্রণালয় গেলাম, না চাইলে যাব কেন?
তিনি বলেন, আমরা ধরেই নিয়েছিলাম তারা ক্ষমা চাইবেন না। কিন্তু সকালের দিকে মুজাহিদ সাহেব যে আবেদন দিলেন তার শিরোনামেই আর্টিকেল ফর্টিনাইনের কথা ছিল। আর সালাউদ্দিন কাদের আবেদন করেছেন ইংরেজিতে। সেখানেও শেষ দিকে আর্টিকেল ফর্টিনাইনের কথা আছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।
আবেদন দুটি প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হলে রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেন বলে জানান কামাল।
তাহলে সাকার পরিবার কেন সন্দেহ প্রকাশ করছে- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের হয়তো নলেজের অভাব ছিল। আবেদন তো আমাদের কাছে এসেছে। তাদের জানার কথা নয়।
দুই যুদ্ধাপরাধী যে আবেদন করেছেন, তার প্রমাণ সরকারের হাতে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা (পরিবার) বললে তো হবে না। কারণ আমাদের কাছে চিঠিপত্র রয়েছে, প্রমাণ রয়েছে। তাদের লিখিত অ্যাপ্লিকেশন আমাদের হাতে রয়েছে। সেই অ্যাপ্লিকেশনের যৌক্তিকতা আছে কি না এবং অ্যাপ্লিকেশন যথার্থ হয়েছে কি না সে ব্যাপারে আইনমন্ত্রী মহোদয়ের ওপিনিয়ন নিয়েই আমরা বাকি কাজ করেছি। কাজেই এখানে আর কথা বলার অবকাশ নেই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।