সকল মেনু

ভয়াল ১২ নভেম্বর আজ

আজ বৃহস্পতিবার ভয়াল ১২ নভেম্বর
আজ বৃহস্পতিবার ভয়াল ১২ নভেম্বর

১২ নভেম্বর ২০১৫, নিরাপদ নিউজ : আজ বৃহস্পতিবার ভয়াল ১২ নভেম্বর। উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলাবাসীর বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্নের দিন। ১৯৭০ এর এই দিনে উপকূলবাসীর জীবনে নেমে আসে এক মহাদুর্যোগ। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় গোর্কী ও জলচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ভোলার জনজীবন। পুরো জেলা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।

১২ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের সামুদ্রিক জলচ্ছ্বাস ও প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ফলে নিমিষেই তলিয়ে যায় উপকূলীয় চরাঞ্চলের বাড়িঘর আর মাঠের সোনালী ফসল। স্রোতের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল কয়েক লাখ মানুষ ও গবাদি পশু। পুরো উপকূল যেন বিরানভূমিতে পরিণত হয়।

জলোচ্ছ্বাসের পর থেকে দেড় মাস পর্যন্ত স্বজন হারানোদের কান্নায় উপকূলের আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। গত ৪৪ বছরে যে কয়টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে তার মধ্যে ৭০ এর ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে ভয়াবহ ও হিংস্র ছিল বলে মনে করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ঘূণিঝড়টি উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট, খুলনাসহ ১৮টি জেলায় আঘাত হানে। উপকুলীয় জেলাগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় দ্বীপ জেলা ভোলায়। ওই সময় তথ্যপ্রযুক্তি দুর্বল থাকায় উপকূলের বহু মানুষ ঝড়ের পূর্বাভাস পাননি।

ওই সময় ১০ থেকে ১৪ ফুট উচ্চতার জলচ্ছ্বাস হয়। গত ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও কান্না থামেনি উপকূলীয় এলাকার স্বজনহারা লাখো মানুষের।

৭০ এর ভয়াল সেই স্মৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং ওই সময়ের দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার ভোলা সংবাদদাতা এম হাবিবুর রহমান (৭২) কালের কণ্ঠকে বলেন, “সেদিন ছিল রোজার মাস। সকাল থেকেই মেঘে আচ্ছন্ন ছিল। দুপুরের পর থেকে আস্তে আস্তে বাতাস বইতে শুরু হয়। বিকেলের দিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সন্ধ্যায় বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর বাতাস ও বৃষ্টির প্রচণ্ডতা বেড়ে যায়।

রাত প্রায় আড়াইটার দিকে মেঘনা-তেঁতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগরের পানি ১৪ ফুট উঁচু বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গোটা জেলা তলিয়ে যায়। শহরের সদর রোডে হাঁটুর ওপরে ৩-৪ ফুট পানি ওঠে।

‘পানি আইতাছে’ বলে চিৎকার দিয়ে শহরের আশপাশের এলাকা থেকে বহু নারী-পুরুষ ও শিশু ছুটোছুটি করে ভোলা শহরের দিকে ধাবিত হয়ে কালিনাথ রায় বাজারের তৎকালীন অগ্রণী ব্যাংকের দোতলায়, সদর রোডের বরিশালের দালান, টাউন স্কুল এবং ভোলা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়।”

এম হাবিবুর রহমান আরো বলেন, “পরদিন ১৩ নভেম্বর ভোরে পানি যখন নামতে শুরু করে তখন প্রচণ্ড বেগে জলচ্ছ্বাসের পানির স্রোতে বেশ কয়েকটি মাছ ধরার ট্রলার ও লঞ্চ শহরে ঢুকে পড়ে। পানিতে ভেসে যাচ্ছে অগণিত মানুষের লাশ। বিভিন্ন গাছের মাথায় ঝুলতে দেখা যায় মানুষ ও পশুর মৃতদেহ।

চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ। যেন লাশের মিছিল হয়েছিল ৭০ এর জলচ্ছ্বাসে। গোটা জেলাকে তছতছ করে দিয়েছে। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল ভোলার জনপদ।

শুধু মনপুরা উপজেলায়ই ২২ হাজার মানুষের মধ্যে ১৭ হাজার মানুষ পানিতে ভেসে গেছে। তাদের কাউকেই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।” দিনটিকে স্মরণে রাখতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top