ঢাকা, ০৫ নভেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : রাজধানীর গাবতলী ও আশুলিয়ায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে দুই পুলিশ সদস্য হত্যা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গাড়ি লক্ষ্য করে গুলির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে পড়েছে পুলিশে। দুই সদস্য হত্যার পর উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাকে উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনে সতর্কাবস্থান নিশ্চিত ও প্রয়োজনে গুলির নির্দেশ দিয়েছে ডিএমপি ও পুলিশ সদর দফতর।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ডিএমপি’র কমিশনার বিভিন্ন বিভাগের উপ-কমিশনার ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনারদের নিয়ে এক বৈঠকে পুলিশ সদস্যদের ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন ও সতর্কাবস্থান নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যেন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে মনোবল ভেঙে না পড়ে সেজন্য প্রয়োজনে হামলাকারী ও দুর্বৃত্তদের ওপর গুলি চালানোরও নির্দেশ দেন তিনি। প্রত্যেকটি তল্লাশি চৌকিতে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের হামলায় আক্রান্ত হলে পূর্বানুমতি ছাড়াই গুলি চালাতে পারবেন পুলিশ সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, খোদ পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা, খুন, দায়ীদের শনাক্তকরণে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা ভীতির সঞ্চার করেছে সাধারণ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে। দায়িত্ব পালনে বিশৃঙ্খলা, মহাখালীতে ছিনতাইকারীদের হামলায় এক পুলিশ সদস্য আহত, গাবতলীতে দুর্বৃত্তের হামলায় এএসআই নিহত এবং পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে পড়ার বিষয়টি আচ করতে পেরে দায়িত্বপালনে কঠোর হতে ডিএমপিসহ সব মহানগর পুলিশ কর্তাদের নির্দেশ দেয় সদর দফতর।
এরপরেই নড়েচড়ে বসে ডিএমপি। ডিএমপি’র একাধিক সূত্র জানায়, নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, পর্যাপ্ত লোকবল বা পুলিশ সদস্য না থাকলে তল্লাশি চৌকি না বসানো, তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিধান, তল্লাশি চৌকিতে কমপক্ষে একজনের কাছে গুলিভর্তি অস্ত্র রাখা, পরিস্থিতি বুঝে আক্রান্ত হওয়া মাত্রই গুলি চালানো। তবে এবার নির্দেশনার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে ডিএমপি। দায়িত্ব পালনে কোনো পুলিশ সদস্যকে অসতর্কতা কিংবা গাফিলতির প্রমাণ মিললে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর অধিকাংশ পুলিশ বক্স, চেকপোস্ট ও ট্রাফিকে দায়িত্বপালনকারী সদস্যদের সতর্কাবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। সকাল থেকেই রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামলী, শিশু মেলা, কলেজগেট, আসাদগেট, মানিক মিয়া এভিনিউ, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, মগবাজার, মিন্টোরোড সংলগ্ন গলিপথ গুলোতে দেখা যায় পুলিশ সতর্কাবস্থান। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডি.আই.জি) এস.এম.মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, আক্রান্ত হলেই পুলিশ সদস্যরা পাল্টা গুলি চালাবেন। আর কোনো ছাড় নয়।
ডিএমপি’র গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, গুলশান এলাকায় নিরাপত্তা চৌকি ও চেকপোস্টে তল্লাশি চলছে। অলিগলিসহ প্রধান সড়কে দায়িত্বপালনকারী পুলিশ সদস্যদের সতর্কাবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) কাইয়ুমউজ্জামান বলেন, কোনো ধরণের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে না গিয়ে, ঐক্যবদ্ধ থেকে দায়িত্ব পালনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল আহছান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দায়িত্ব পালনে কঠোর ও সতর্ক থাকার জন্য সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে অস্ত্রের ব্যবহার করবেন পুলিশ সদস্যরা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।