ঢাকা, ০৩ নভেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : আগারগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। যেখানে পাসপোর্ট করার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত- প্রতিটি বিভাগেই সাধারণ নাগরিকদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অফিসের বাইরে থেকে দালালদের দৌরাত্ম্যে শুরু হওয়া ভোগান্তি চলে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত। অফিসের সামনে সারাক্ষণই ১৫-২০ জন দালাল সক্রিয় থাকে। নতুন কেউ আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা দু’একজন গিয়ে কথাবার্তা বলে। তাদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করার জন্য প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। সাধারণ একটি পাসপোর্ট করতে দালালরা স্বাভাবিক খরচের চেয়ে ২-৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত নেয়, আর বিশেষ পাসপোর্টের জন্য নেয় ৩-৪ হাজার টাকা বেশি।
সম্প্রতি আগারগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সরেজমিনে ঘুরে ভোগান্তির এমন চিত্রই দেখা যায়।
বিভিন্ন ভবনের দোতলা-পাঁচতলা-সাততলা কক্ষে ছোটাছুটি করে প্রক্রিয়া শেষ করার পর নির্ধারিত সময়ের অনেক দিন কাটলেও পাসপোর্ট না মেলার গল্পও আছে ভুরি ভুরি। এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মরিয়ম আখতারকে। গত সেপ্টেম্বর মাসে পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিয়েছিলেন তিনি। অক্টোবরের ৮ তারিখে পাসপোর্টটি পাওয়ার কথা থাকলেও ২৬ তারিখেও কোনো সুখবর নেই তার জন্য।
দালালদের খপ্পর এড়িয়ে কেউ নিজে প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে গেলে যেন ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। ফরম পূরণ, ছবির সত্যায়ন, প্রত্যয়নপত্র জমাদানসহ নানা কাজে জটিলতায় পড়তে হয় পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ নাগরিকদের। ভুগতে হয় ব্যাংকে টাকা জমাদান, প্রাথমিক নাম এন্ট্রি, ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ দেওয়া, পাসপোর্ট গ্রহণসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই, বিভিন্ন ভবনের বিভিন্ন তলায় দৌঁড়াদৌঁড়ি করে, দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে।
এসব ভোগান্তিই দালাল চক্র গড়ে ওঠার পেছনে উল্লেখযোগ্যভাবে দায়ী। পাশাপাশি দায়ী পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফেলতি ও উদাসীনতাও। নানামুখী এসব ভোগান্তির শিকার হন বেশিরভাগক্ষেত্রে অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত লোকজনই।
পাসপোর্ট নবায়ন করতে আসা মরিয়ম আখতার বলেন, ‘ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে আর মাত্র দু’দিন বাকি, কিন্তু তারা (পাসপোর্ট অফিস) দু’মাসেও পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেনি। এই রুম ওই রুম ঘুরতে ঘুরতে জীবন শেষ। আজও দেওয়ার কথা ছিল, পাবো কিনা জানি না।’
তিনি তার পাসপোর্টের ডেলিভারি ফরম দেখালে সেখানে ৬০৪, ৭০১, ৮০৪ ও ৯০৩ নম্বর কক্ষে যাওয়ার নির্দেশনা লক্ষ্য করা যায়।
মরিয়মের মতো সাধারণ নাগরিকরা অভিযোগ করেন, ভোগান্তির অপর নাম পাসপোর্ট অফিস। পদে পদে ভোগান্তি। তবে তারা এ কাজটি আরও সহজ করার দাবিও করেন।
সাধারণ মানুষের বক্তব্য, প্রতি জেলায় জেলায় পাসপোর্ট অফিস দিয়ে এ প্রক্রিয়া সহজ হলে একদিকে যেমন অর্থ ও সময় বাঁচবে, অন্যদিকে ভোগান্তি থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণেশ গোপাল বিশ্বাস বলেন, দালালদের আটক করতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হলেও তারা আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে যায়। পরে আবারও এ কাজ শুরু করে। মাঝেমধ্যে পুলিশ অভিযানে গেলেও তারা খবর পেয়ে আগেই পালিয়ে যায়।
গ্রাহকদের নানামুখী ভোগান্তির বিষয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক এটিএম আবু আসাদ বলেন, জনবল সংকট, পদ্ধতিগত ত্রুটিসহ নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ভালো সেবা দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
দালালদের বিরুদ্ধে তিনি নিজেই বিভিন্ন সময়ে অভিযানে নামেন দাবি করে এটিএম আবু আসাদ বলেন, আজও (২৬ অক্টোবর) বিভিন্ন অভিযোগে চার জন আনসার সদস্যকে অপসারণ করেছি। তবে সবার আগে আবেদনকারীকে সচেতন হতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।