২৮ অক্টোবর ২০১৫, নিরাপদ নিউজ: সম্প্রতি দুই বিদেশি নাগরিক ও পুলিশ সদস্য হত্যা এবং শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে বোমাহামলাসহ নানান কারণে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এসব ঘটনার মূল অপরাধীরা পর্দার আড়ালে থাকলেও সু-নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়াই পরস্পর কাঁদা ছোড়াছুড়ি করছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি।
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এসব ঘটনার দায় স্বীকার করলেও সরকার ও তার দল এটা অস্বীকার করে বিএনপি-জামায়াতের উপর দোষারোপ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরাও একই সুরে কথা বলছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিদেশী হত্যা করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। দেশের মানুষ হত্যা করে সরকারের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে, বিদেশীদের হত্যা করছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আগে এক দুইটা বোমা মেরে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। এখন তারা বিদেশি হত্যা শুরু করেছে।
একই দিন সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ২০১৪ সালে নির্বাচন ঘিরে যেভাবে বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল, সেটা আবার সংগঠিত হচ্ছে। ২০১৪ সালের মতো এসব দমনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক অনুষ্ঠান শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, দুই বিদেশিকে হত্যার নির্দেশ লন্ডন থেকে এসেছে। খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার সময় সচেতন মানুষের মধ্যে সন্দেহ হয়েছিল তিনি কোনো ষড়যন্ত্র করতে যাচ্ছেন। এখন সেই ষড়যন্ত্র সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট দেশকে অস্থিতিশীল করে ক্ষমতায় যেতে এসব করছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো আইএস ও জঙ্গি নেই। এখানে আছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যা।
এদিকে বিএনপি নেতারাও দাবি করছেন প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার লক্ষ্যেই সরকার বিএনপির উপর মিথ্যা দোষরোপ করছেন। এটি সরকারের রাজনৈতি প্রতিহিংসা ছাড়া কিছুই না বলেও দাবি বিএনপির।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেছেন, সরকারের নির্দেশনা ছাড়া দেশের কোন কিছু ঘটা সম্ভব নয়। তাই সরকারের নির্দেশায় বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার বিরোধী দলকে নির্মূল করতে এবং আসল খুনিদের আড়াল করতেই বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির বর্তমান মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘যখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে তখন সেই দাবিকে পাশ কাটানোর লক্ষ্যে বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং দলের নেতাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার একটি অপচেষ্টা শাসকদলের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’
বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘প্রোপাগান্ডা’ করা হচ্ছে, জানিয়ে দলটি আশঙ্কা করছে, এতে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে এবং হত্যাকান্ডের মোটিভ ও খুনিদের বিচার করাও সম্ভব হবে না।
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতেই ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজারকে হত্যা করা হয়েছে। সরকারকে চাপে ফেলাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। তাভেল্লা হত্যায় জড়িত তিনজনসহ আটককৃত চারজন এ কথা স্বীকার করেছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার মধ্য রাতে হোসনি দালানের সামনে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহতসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) রাত পৌনে নয়টার দিকে রাজধানীর দারুস সালাম থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ইব্রাহিম মিয়াকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইতালির নাগরিক তাভেল্লা সিজারকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর ঠিক ৪দিন পরেই একই কায়দায় ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন করা হয় জাপানের নাগরিক কুনিও হোশিকে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।