সকল মেনু

ফেরারি আসামি সত্যজিৎ মুখার্জীকে গ্রেপ্তারের দাবি এলাকাবাসীর

satyajitআছাদুজ্জামান, হটনিউজ২৪বিডি.কম, ঢাকা :
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর দাদপুর ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে ২০ফুট টিনের ঘরে বেড়ে উঠে সত্যজিৎ মুখার্জী। মানস কুমার মুখার্জীর মেঝ ছেলে সত্যজিৎ মুখার্জী চাঁদাবাজি, জমি দখল ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটিপতি হয়েছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহুরূপী এই প্রতারক অবৈধ পথে অর্থের পাহাড় গড়েছেন। তাদের আশংকা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে যে কোনো সময় এই প্রতারক দেশত্যাগ করতে পারেন।
কোতয়ালী থানা সূত্রে জানা গেছে, সত্যজিৎ মুখার্জী ১৫টি মামলার আসামি। চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা, শিশু ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোতয়ালী থানা সূত্র জানায় তাকে গ্রেপ্তারে তাদের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধূর্ত প্রকৃতির সত্যজিৎ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত। সে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৫ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের একান্ত সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি উক্ত মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হন। একইসাথে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন প্রতারণামূলক কর্মকা-ে। পরবর্তীতে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন সত্যজিতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। তখনই বেরিয়ে আসতে শুরু করে সত্যজিতের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি। এরপর সত্যজিতের হাতে প্রতারিত ও লাঞ্ছিতরা আইনের আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একে একে তার নামে ফরিদপুরেই ১৫টি মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা জানায়, এমন কোনো অপরাধ নেই যা সত্যজিৎ করেনি। মন্ত্রণালয়ের দাপট দেখিয়ে সে সবকিছুকেই মুঠোবন্দি করতে চেয়েছে। দালালী, তদবির, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণের মতো ঘটনাও তিনি ঘটিয়েছেন। চাকরি দেয়ার নাম করে কয়েকশ যুবকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অবৈধভাবে দখল করেছে অসহায় ও নিরীহ অনেক মানুষের সম্পত্তি।
এছাড়াও তার লোলুপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়নি স্থানীয় অনেক তরুণী। কোতয়ালী থানার কইজুরী ইউনিয়নের মোসা: লতিফা বেগমও রক্ষা পাননি সত্যজিতের ছোবল থেকে। লতিফা বেগম নিরুপায় হয়ে চলতি বছরের ৪ এপ্রিল কোতয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। লতিফা বেগমের মতো অসংখ্য নারী সত্যজিতের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।
লতিফা আরও জানান, পুলিশের ভয়ে সত্যজিৎ এখন এলাকাছাড়া হলেও তার হিংস্র ছায়া রয়ে গেছে এখনও। অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
গত ২৩ এপ্রিল কোতয়ালী থানায় বিশ্বজিৎ গোস্বামী নামে এক ভুক্তভোগী একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৪৮। তিনি বলেন, সত্যজিৎ বিভিন্ন সময়ে আমার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না দিলে আমাকে পেন্ডিং মামলায় জড়িয়ে দিবে বলে হুমকি প্রদান করে।
গত ৬ মে একই থানায় দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলার (১১) বাদি সুমন সাহা বলেন, নির্মানাধীন মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে নগদ তিন লাখ টাকা নেয়। পরবর্তীতে সে আরও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
একই থানায় গত ০৭ মে দায়ের করা মামলার (১৩) বাদি প্রবীর কুমার মজুমদার বলেন, সত্যজিৎ ফরিদপুরের কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের দ্বারা আমার জায়গা দখলের পায়তারা করেন।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, সত্যজিতের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৫টি মামলার মধ্যে ৪টি মামলার চার্জশিট হয়েছে। বাকি ১১টি মামলা তদন্তাধীন।
এদিকে ভোক্তভোগীরা এবং এলাকাবাসী অতিদ্রুত সত্যজিৎকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top