সকল মেনু

চাঁদপুরে কবিরাজ সেজে খোদ বাবা-মা হত্যা করলো এক শিশুকে

mail.google.comশাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর : এনজিও’র ঋণ পরিশোধের জন্য কবিরাজ সেজে ভন্ডামি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা আদায়ের উদ্দেশ্যে চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলায় খোদ জন্মদাতা বাবা ও জন্মগায়িনী মা’ নিজেদের তিন বছর বয়সী এক শিশু কণ্যাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। নিহত ওই শিশুর নাম সুমাইয়া আক্তার। মঙ্গলবার ভোর রাতে উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের সিরাজ মেম্বর বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘাতক বাবা-মাকে আটক করেছে। জানা যায়, ওই বাড়ির কাঠমিস্ত্রি এমরান হোসেনের স্ত্রী আমেনা বেগম (৩৫) সপ্তাহ খানেক আগে নিজেকে জ্বীনে ধরেছে বলে বাড়ি ও আশপাশের লোকদের অবহিত করছে। বিষয়টি অল্প সময়ের মধ্যে  পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের গ্রাাম থেকে বহু নারী-পুরুষ ওই বাড়িতে এসে ভিড় জমায়।

এলাকার মানুষের বিশ্বাস আদায়ের জন্য সে তার বাড়ি ও আশপাশের বাড়ির ৪টি শিশু বাচ্চাকে ধরে এনে বেদম মারধর করে। গত শনিবার রাতে একই বাড়ির মৃত শামছুল হকের ছেলে টাইলস শ্রমিক ইসমাইলকে ঘর থেকে ডেকে এনে মারধর করলে বিষয়টি সারা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার লোকজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে কবিরাজ নামধারী আমেনা বেগম লাঠি নিয়ে মারতে উদ্যত হয়। গত ৩ আগস্ট সকালে নিজের শিশু মেয়ে সুমাইয়াকে জ্বীনে ধরেছে মর্মে মাটির উপরে চেপে ধরে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে। বাড়ির লোকজন বাচ্চাটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সে তাদের ধাওয়া করে। স্থানীয়রা সংবাদকর্মীদের বিষয়টি মুঠোফোনে অবহিত করলে ওই বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিতের জন্য সংবাদকর্মীরা হাজির হলে কবিরাজ নামধারী আমেনা বেগম তাদের সাথেও অশালীন আচরণ করে এবং তাদেরকেও মারতে উদ্যত হয়।

সংবাদকর্মীরা বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করে স্থানীয় কয়েকজন লোক নিয়ে শিশু সুমাইয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। পরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে ভন্ড কবিরাজ আমেনা ও তার স্বামী এমরান হোসেন উপস্থিত লোকজন, পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের সামনে নিশ্চিত করে তারা ইচ্ছে করেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। ওই সময় এমরান হোসেন জানান, তারা গরিব ও বিভিন্ন এনজিও থেকে বিশাল অংকের টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে। ওই ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে তার স্ত্রী আমেনা বেগমের পরামর্শে এ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। যেহেতু তাদের প্রতারণা সবার সামনে প্রকাশ হয়ে গেছে সেহেতু তারা আর এ রকম প্রতারণা করবে না মর্মে ক্ষমা প্রার্থনা করলে থানা পুলিশ স্থানীয়দের বুঝিয়ে তাদের ক্ষমা করে দেন।
পুলিশ চলে যাবার পর ওই দিন দিবাগত রাত ৩টায় আবারো  প্রতারক ও ভন্ড কবিরাজ একইভাবে তাদের মেয়ে সুমাইয়াকে জ্বীন তাড়ানোর নামে নির্মম নির্যাতন করায় ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। ভোর বেলায় পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও বাড়ির লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে থানা পুলিশকে অবহিত করে এবং প্রতারক দম্পতিকে আটক করে রাখে। খবর পেয়ে শাহরাস্তি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) নিজাম উদ্দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত শিশু সুমাইয়ার লাশ উদ্ধার, জনতা কর্তৃক আটককৃত দম্পতিকে থানায় নিয়ে আসে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top