সকল মেনু

টানা বর্ষণে ভাঙনের কবলে লাখ লাখ মানুষ

1438543556

ডেস্ক নিউজ, হটনিউজ২৪বিডি.কম ০৩ আগস্ট : ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে সারাদেশে ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানির তোড়ে অনেক স্থানে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। এতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের বাড়িঘর, ফসলের ক্ষেত, মাছের খামার ইত্যাদির ক্ষতিসাধন হয়েছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর: নোয়াখালী: টানা বর্ষণ ও কোমেনের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে জেলার ৯টি উপজেলার ৭৯টি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে আছে আমন ফসলের বীজতলা, শাক সবজি ও ফসলি মাঠ এবং রাস্তাঘাট। পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। বৃষ্টির পানিতে সদর, কবিরহাট, সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বন্যায় রূপ নিয়েছে। হাতিয়া (নোয়াখালী): হাতিয়ায় পূর্ণিমার প্রভাবে গত রোববার দুপুরে প্রবল জোয়ারে নলচিরা, সুখচর, চরকিং, চরঈশ্বর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে  লক্ষাধিক লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার সুখচর বাজার, রামচরণ বাজার, আফাজিয়া বাজার, বাংলা বাজার  কোমর পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ক্ষতিগস্তদের মাঝে কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। মনপুরা(ভোলা):   জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় মনপুরার হাজির হাট ইউনিয়নের চরজ্ঞান, চরযতিন, দাসের হাট, চর মরিয়ম এবং রামনেওয়াজের আন্দির পাড়, মাছুয়াখালী গ্রামগুলো জোয়ারের পানিতে থৈথৈ করছে। এসব এলাকাসহ বিচ্ছিন্ন কলাতলীর চর এবং চরনিজামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দীর শিকার হয়েছে। সাতক্ষীরা: আশাশুনি উপজেলার চাকলায় কপোতাক্ষ নদের প্রায় ২শ ফুট বেড়িবাঁধ প্রবল জোয়ারে ভেঙে একটি গ্রাম ও দুশ বিঘা মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। শনিবার রাতে উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে এ বাঁধ ভেঙে যায়। আশাশুনি উপজেলার জেলেখালী দয়ারঘাট ও মনিপুর এলাকার বেড়িবাঁধেও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ডুমুরিয়া (খুলনা): উপজেলার চাঁদগড় নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার চাঁদগড়, আঁকড়া, বাহির আঁকড়া ও সুন্দরমহল আগেই প্লাবিত হয়েছিল। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। গত রোববার দুপুরে মেরামত করা বাঁধসহ প্রায় ৪টি স্থান ভাঙনের কবলে পড়ে। ফলে নতুন করে বৃত্তিবিরালাসহ ৫টি গ্রাম পানিতে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে দ্রুত ভাঙন মেরামতের আশ্বাস দেন। ফেনী: জেলার দাগনভূঞা উপজেলার প্রায় সব কটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। একইভাবে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ছোট ধলিয়া, ডমুরুয়া, এলাহিগঞ্জ, বিরলী, রতনপুর, উজালিয়া, ভগবানপুর এবং শর্শদী ইউনিয়নের আবুপুর গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বাগেরহাট: জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে ও ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নদী তীরবর্তী হাট-বাজার, পৌরসভা, মাছের ঘের, পুকুর, ফসলি জমিসহ কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়া পরিবারগুলো চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। গাংনী (মেহেরপুর): ভারতের ভিতর থেকে আসা পানিতে গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী কাজীপুর, সহড়াতলা, রংমহল, খাসমহল, কাথুলিসহ বিভিন্ন এলাকা পানিবন্দী হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের জীবনযাত্রা। নেকজান ধলা গ্রামের নেকজানপাড়া, মোল্লাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মধ্যপাড়া ও পশ্চিমপাড়ার সব বাড়িঘর এখন পানির মধ্যে। তালা (সাতক্ষীরা):  অবিরাম বর্ষণ ও কপোতাক্ষ নদের উপচে পড়া পানিতে তালা উপজেলার ৭০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধেও ধস দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার ঘোষনগর, গঙ্গারামপুর, খলিলনগর, নলতাসহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের লোকজন পানির মধ্যে বসবাস করছেন। কারো ঘরের ভেতরে পানি, কারো ঘরের সামনে পানি উঠেছে। খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলু জানান, তার ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘোষনগর বালিকা বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
পাইকগাছা (খুলনা): পাইকগাছায় টানা ভারী বর্ষণে বিপাকে পড়েছেন পোল্ট্রি খামারিরা। গত ১৯ জুন থেকে গত দেড় মাসের ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রতিদিনের বৃষ্টি ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়ছে খামারের হাজার হাজার মুরগি। লোকসান থেকে বাঁচার জন্য অনেক খামারি পানির দরে মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছে। মংলা (বাগেরহাট): ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে মংলাসহ আশপাশ এলাকার সহস্রাধিক মত্স্য খামার তলিয়ে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে স্থানীয় মৎস্যচাষিদের। অন্যদিকে বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে মংলা পৌর এলাকার অধিকাংশ আবাসিক এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে থাকায় ঘের ও পুকুর থেকে সব মাছ ভেসে গেছে। শহরতলির শেলাবুনিয়া, কুমারখালী, মিয়াপাড়া, জয় বাংলা, চরকানা, সিগন্যাল টাওয়ার, কবরস্থানসহ অধিকাংশ আবাসিক এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি): কাঁঠালিয়ায় বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫/৬ ফুট বৃদ্ধিতে আমুয়া বন্দরসহ আশপাশ এলাকা তলিয়ে গেছে। গত ৩ দিন ধরে ঐসব পরিবার শুকনো খাবার-চিড়া-মুড়ি খেয়ে জীবন যাপন করছেন। পানিতে মাঠ ও চলাচলের রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় আমুয়া শহীদ রাজা ডিগ্রি কলেজ, আমুয়া বন্দর আমীর মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আমুয়া এসি বালিকা বিদ্যালয়, আমুয়া বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আমুয়া কিন্ডারগার্টেনের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস করায় বিঘ্ন ঘটছে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top