সকল মেনু

চাঁদপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে রূপালী ইলিশ

mail.google.comশাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর থেকে ইলিশ হারিয়ে যাচ্ছে। এই ভর মৌসুমেও দেখা মিলছে না ইলিশের। ফলে এর সাথে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। যে শহরে একসময় ইলিশ হালি দামে বিক্রি হতো এবং দিনের কাজ শেসে মানুষ হাতে ইলিশ ঝুলিয়ে বাড়ি ফেরতো সেখানে এখন ইলিশের কেজি (এক কেজি ওজনের) ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা। দুই কেজি ওজনের একটি ইলিশের দাম চাওয়া হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। ইলিশ মাছ নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা বলছেন বৃষ্টিপাত হলে নাকি মাছ মিলবে। কিন্তু এবার গত ৪০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চাঁদপুরে। তারপরও ইলিশের দেখা নেই নদীতে। সাধারণ মানুষ এবং মধ্যবিত্তের জন্য এখন ইলিশ শুধুই দেখে দেখে চাওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। তারা ইলিশের স্বাদ মিটাচ্ছে ফরমালিন মিশ্রিত চাপিলা আকৃতির আমাদানিকৃত এক ধরনের সমুদ্রিক মাছ দিয়ে। বাংলাদেশের মানচিত্রে চাঁদপুর জেলা ইলিশের রাজধানী বলেই পরিচিত। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় বছরের এ সময়গুলোতে পদ্মা-মেঘনা-মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ ধরা পরলেও, গত কয়েক বছর ধরেই ভর মৌসুমেও জেলেরা দেখা পাচ্ছে না ইলিশ। ইলিশ সম্পদ হুমকির মুখে ভেবে রপ্তানিকারক ও জেলেরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। চাঁদপুর শহরের ডাকাতিয়ার তীর বড় স্টেশন মাছঘাট দেশের অন্যতম ইলিশ বাণিজ্য কেন্দ্র। প্রতিদিন পদ্মা-মেঘনা-মোহনা থেকে জেলেদের আহরন করা রূপালী ইলিশ নিয়ে এখানে দস্তুরমত হাঁট বসতো একসময়। আর সেখানে এখন নিঃসিম শূন্যতা। পুকুর বা বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা কিছু মাছ আসে। সেই মাছ নিয়ে হাঁক-ডাকে মেতে উঠেন কিছু ব্যবসায়ী।
চাঁদপুর মাছ ঘাট থেকে রংপুর, বগুড়া, পাবনা, দিনাজপুর, ঈশ্বরদী, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ পৌঁছানো হয়। ওই এলাকায় অর্ধশত আড়ৎ ঘর রয়েছে। আড়ৎগুলোতে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করে। ৫/৬ বছর আগেও এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইলিশ বোঝাই শত শত ট্রলার ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা আসতো এই সময়টাতে।  আর এখন ট্রলার তো দূরের কথা নৌকাও আসছে না মাছ নিয়ে। ভোলার লালমোহন, চর ফ্যাশন, শরীয়তপুর, হাতিয়া-সন্দীপ ছাড়াও  চাঁদপুর সদর উপজেলার হাইমচর, নীলকমল, ঈশানবালা, আলুর বাজার, চেয়ারম্যান বাজার, রাজরাজেশ্বর, জালালপুর, কোদালপুর, মাওয়াঘাটসহ প্রায় ৩০টি স্থানের জেলেরা এখানে মাছ বিক্রি করে আসতো। রপ্তানিকারকদের সাথে জেলেদের সারা বছরই মাছ সংক্রান্ত কার্যক্রম লেগেই থাকতো। বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। এখন শ্রাবন মাস চলছে। এ সময় নদী থেকে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও জেলেরা শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছে। জেলেদের অনেকের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, নদীতে অনেক স্থানে চর পড়ে গেছে। ফলে মা ইলিশ ডিম পাড়ার জন্য এ নদীগুলোতে কম আসে। এছাড়া কারেন্ট জালের ব্যবহার কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। জাটকা মৌসুমে নির্বিচারে জাটকা শিকার করা হচ্ছে কারেন্ট জালের মাধ্যমে। কোন আইন, নিয়স-নীতি এবং তৎপরতা দিয়ে থামানো যাচ্ছে না জাটকা শিকার। অভয়াশ্রমের সময় যে পরিমাণ সাহায্য বরাদ্দ থাকে অধিকাংশ জেলেরা তা ঠিকমতো পায় না। ফলে আইন অমান্য করে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ জাটকা ইলিশ ধরে ফেলাতে নদীতে ইলিশের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকার কর্তৃক মৎস্য সম্পদ রক্ষার জন্য মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এ দু’ মাস চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা একশ’ কিঃ মিঃ  পর্যন্ত অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। এ সময় জেলেদের জন্য নদীতে জাল ফেলা নিষিদ্ধ থাকে। কিন্তু কোস্টগার্ড, নৌ-ফাঁড়ি অভিযান পরিচালনা সত্ত্বেও সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে জাটকা নিধনের মহা উৎসব চলতে থাকে। আর এর সাথে সম্পৃক্ত থাকে প্রভাবশালী মহল, সরকারি কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপদগ্রস্থ কিছু লোক।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়ার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আষাঢ়ের শুরু থেকেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ইলিশের দেখা নেই।  চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছের আড়ৎগুলো রয়েছে ইলিশ শূন্য। সরকার জাটকা নিধন বন্ধের চেষ্টা করছে। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে সরকারের সেই কার্যক্রম ভেস্তে যাচ্ছে। জাটকা নিধন কার্যক্রম সফল হলে নদীতে প্রচুর পরিমান ইলিশ পাওয়া যেতো। অনেক অসাধু জেলে কার্ড পেয়েও নদীতে অবাধে জাটকা নিধন করে। নদীতে বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে ইলিশসহ দেশীয় প্রজাতীর মাছ ধংস হয়ে যাচ্ছে। নদী খনন, ডুবো চরগুলো কেটে দেয়া, নদীর পানি দূষণমুক্ত করে কঠোরভাবে জাটকা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো ইলিশ আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতো।
ভরপুর এই মৌসুমে চাঁদপুরের প্রধান বিক্রয় কেন্দ্রে ৮০০/৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ইলিশের মণ ৩৫-৩৬ হাজার টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top