অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয়ের ওপর কর নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এত দিন ওই খাতগুলো করমুক্ত সুবিধা ভোগ করে আসছিল।
আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৪৪ এর উপধারায় (৪) প্রদত্ত ক্ষমতায় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান সাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপন ইস্যু করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে পোল্ট্রি, গবাদি পশু ও মৎস্য জাতীয় প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয়ের ওপর তিন স্তরে ৩ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর নির্ধারণ করা হয়েছে। এনবিআর সূত্র বিষয়টি রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছে।
অথচ প্রজ্ঞাপনে কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মানা হয়নি। জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনীতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রস্তাব উপেক্ষা করে বাজেট প্রস্তাবনায় ঘোষিত হারে ওই শিল্পগুলোর ওপর করারোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, যা চলতি মাসের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
চলতি বছরের ২৯ জুন বাজেট সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
সংসদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী এই শিল্পগুলোর আয় থেকে কর কাটার প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু এই শিল্পগুলো দেশে আমিষের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাই আমি অনুরোধ করব, এ শিল্পগুলোর সঙ্গে জড়িতের ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত রাখা হয়।’ এরপর ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে তিন স্তরে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে সবগুলো স্তরেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে পোল্ট্রি ফিড উৎপাদন, গবাদি পশু, চিংড়ি ও মাছ, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের খামার, বীজ উপাদন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বীজ বিপণন, ব্যাঙ উৎপাদন খামার, উদ্যান খামার প্রকল্প, মৌমাছির চাষ প্রকল্প, রেশম গুটি পোকা পালনের খামার, ছত্রাক উৎপাদন খামার এবং ফুল ও লতাপাতার চাষ হতে অর্জিত আয়ের ওপর কর নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত শিল্পসমূহে তিন স্তরে কর নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম স্তরে ১০ লাখ টাকার আয়ের ওপর উপর ৩ শতাংশ হারে করারোপ করা হয়েছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ কর মওকুফের সুপারিশ করেছিলেন। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনে দ্বিতীয় স্তরে পরবর্তী ২০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ১০ শতাংশ এবং তৃতীয় স্তরে ২০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো স্তরেই প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনাই মানা হয়নি।
এর আগে ৪ জুলাই প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ সকল শিল্পে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় থেকে ৩ শতাংশ, ১০ থেকে ২০ লাখ টাকায় ১০ শতাংশ এবং ২০ লাখ টাকার ওপরের আয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করার প্রস্তাব করেছিলেন। অবশেষে তাই কার্য্কর হলো।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।